Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ভারতীয় গরু

সীমানা পিলার ১২৫৯ এর ওপারে নেই কাঁটাতারের বেড়া বাধা দেয়ায় বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর, ১ মহিলা আহত :: পুলিশ ও বিজিবির হাত কচলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চোরাকারবারিরা

আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) উপজেলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৬ এএম

ভারত-বাংলাদেশ সীমানা পিলার ১২৫৯ এর ওপারে কাটাতারের বেড়া না থাকায় প্রতিদিন ঢুকছে চোরাই মালামাল ও গরু-মহিষ। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামাগ্রাম দিয়ে প্রতিরাতে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে গরু-মহিষ। এসব গরু-মহিষ পাচারে বাঁধা দেয়ায় স্থানীয় নজির উদ্দিন নামে একজনের বাড়িতে ভাঙচুর করেছেন মাসুদ আহমদের নেতৃত্বে গরু-মহিষ চোরাকারবারিরা। গত শুক্রবার রাত ১০টায় লামাগ্রামের নজির উদ্দিনের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পাচারকারিদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হন আলফাতুন বেগম।

বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের সংঘর্ষ। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে সালিশ নিয়ে আসলে তিনি অবৈধ কোন বিষয়ের বিচার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। তবে ওয়ার্ড মেম্বার বলেন, এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা। এখানে গরু নিয়ে কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আর অভিযুক্ত মাসুদ আহমদ জানান, নজির উদ্দিন ভারত থেকে আসা গরু ডাকাতি করতে গিয়েছিল। এ কারণে এলাকার মানুষ তার বাড়িতে হামলা করেছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমানা পিলার ১২৫৯ এর ওপারে কাটাতারের বেড়া না থাকায় প্রতিদিন ওপার থেকে চোরাই মালামাল ও গরু-মহিষ আসে বাংলাদেশে। এগুলো থেকে পুলিশের নামে টাকা তুলেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন। আর বিজিবির নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা উত্তোলন করেন আবু সাইদ। যার কারণে বিজিবির পোস্টের পাশ দিয়ে ভারত থেকে গরু মহিষ আসলেও তারা সেগুলোতে বাধা দেয় না। মাঝেমধ্যে আই ওয়াশ করার জন্য দু-চারটি গরু আটক করা হয়। আর পুলিশতো কখনো অভিযানেই যায় না। তবে চোরাই কারবারের বিপক্ষে কেউ কথা বললে মারধর ও হামলার শিকার হতে হয়। শুক্রবার শতাধিক গরু বাংলাদেশে আসে। সেগুলো থেকে ১০টি গরু রেখে দেয় কামালবস্তির বাসিন্দারা।

স্থানীয় একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে জানান, মেম্বার দেলোয়ার হোসেন পুলিশের নামে ভারতীয় গরুর গাড়ি প্রতি ১০ হাজার টাকা ও আবু সাইদ গরু প্রতি ১ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, এসব গরুর মালিক গোয়াইনঘাটের গোলাম হোসেন (গেলাপ)। তার কাছ থেকেই মুলত টাকা আসে। শনিবার গোলাম হোসেন কোম্পানীগঞ্জের চরার বাজার এসেছিলেন তার আটককৃত গরুগুলো নেয়ার জন্য। সালিশ বিচারের মাধ্যমে রাতে জনতার হাতে আটক তার ১০টি গরু ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

এদিকে চোরাকারবারিদের হাতে হামলার শিকার নজির উদ্দিন জানান, শুক্রবার রাত ১০টায় ভারত থেকে মাসুদ আহমদ ও রুকন মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক গরু আসে বাংলাদেশে। গরুগুলো কামাল বস্তি এলাকায় যেতেই কয়েকটি গরু ছিনিয়ে নেয় সেখানকার বাসিন্দারা। পরে মাসুদ আহমদ ও রুকন মিয়ার নেতৃত্বে আনছার আলী, ইমাম উদ্দিন, ইনজাদ মিয়া, ফজল মিয়া, শামীম, নুর উদ্দিন, মুনসুরসহ বেশ কয়েকজন গরু ও মাদক পাচারকারি আমার বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে ঢুকে রামদা দিয়ে দেয়ালে কুপিয়েছে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তার ফুফু আলফাতুন বেগম আহত হোন। আমার বাড়ি সীমান্ত এলাকায় হওয়াতে গরু পাচারকারিরা আমার বাড়ির উপর দিয়ে গরু ও মহিষ নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। ঘর থেকে বের হলে তারা রামদা দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়।

এদিকে অভিযুক্ত মাসুদ আহমদ জানান, নজির উদ্দিন রাতে ভারত থেকে আসা গরু ডাকাতি করতে গিয়েছিল। যার জন্য এলাকাবাসী তার বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি আরো বলেন, নাজিম ও মাসুক তারা ৫০০ টাকা রোজে গরু ভারত থেকে নামিয়ে দেয়। তাদেরকে নজির উদ্দিন ডাকাতির সময় মারধর করে। এরপর এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করেছিল। তবে সেখানে উপস্থিত ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন তাদেরকে মারামারি করতে দেননি।

গোলাম হোসেন (গোলাপ) বলেন, অনেকেই গরু আনে ভারত থেকে। আমরা গরুর ব্যবসা করছি। আমার গরুর খামারও আছে। সেখানে আমি ভারতীয় গরু রাখি। শনিবারে আমার ও নাসির ভাইয়ের গরু আসছিল লামাগ্রাম দিয়ে। সেখান থেকে আমাদের কয়েকটি গরু নিয়ে গিয়েছিল তারা। পরে সেখানকার মুরব্বিদের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরুগুলো নিয়ে আসি।

ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন জানান, গরু পাচার নিয়ে এলাকায় কোন মারামারি হয়নি। তাদের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে মারামারি হয়েছে। তিনি গরু থেকে পুলিশের নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, এখানে পুলিশের নামে কেউ টাকা তুলে না। গরুগুলো লুকিয়ে তারা ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। উত্তররণিখাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাস্টার ফয়জুর রহমান বলেন, দেলোয়ার মেম্বার পুলিশের টাকা উত্তোলন করে শুনেছি কিন্তু তাকে জিজ্ঞেস করলে সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে। এ বিষয়ে উৎমা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার রফিক বলেন, আমাদের সীমানায় গরু-মহিষ পাচারের কোনো খবর বা এ নিয়ে কোনো মারামারির খবরও পাইনি।

গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রভাস কুমার সিং বলেন, মারামারির বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর পুলিশের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। গরু যে এরিয়া দিয়ে নামে সেখানে যাওয়া অনেক কঠিন। আমাদের পুলিশ যখন সেখানে যায় তখন তারা গরু নামায় না। তিনি আরো বলেন, পুলিশের নামে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে এমন লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ