পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বই এ নগ্ন ছবি, মূর্তিসহ ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও হিন্দুত্ববাদ সংযোজন করে মুসলিম সন্তানদেরকে নাস্তিক বানানোর চক্রান্ত চলছে । এর দ্বারা প্রমাণ হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে নাস্তিক্যবাদী একটি মহল ঘাপটি মেরে বসে আছে। ৯২ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তকে মন্দিরের ছবি থাকতে পারেনা। বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় তাওহিদী জনতা ইসলামবিরোধী এই সিলেবাস কিছুতেই মেনে নিবে না। অবিলম্বে ঈমান বিধ্বংসী সিলেবাস বাতিল করতে হবে। অন্যথায় গণআন্দোলন সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে গতকাল বাদ জুমা কামরাঙ্গীরচর নূরিয়া মাদরাসা ময়দানে বিক্ষোভ-পূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ কোরআন-হাদীস বিরোধী বিতর্কিত সিলেবাস বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি। মিছিল শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি বলেন, বিতর্কিত সিলেবাসের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে নাস্তিক ও পৌত্তলিক বানানোর ষড়যন্ত্র এদেশের তাওহীদি জনতা মেনে নিবে না। সরকার যদি দাবি মানতে ব্যর্থ হয় তাহলে আন্দোলন থামবে না এবং জনগন সঠিক সময়ে সঠিক জবাব দিবে। মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ৯২ ভাগ মুসলমান এ দেশের পাঠ্য পুস্তকে ডারউইনের মতবাদ দেখতে চায়না। কতিপয় নাস্তিক ব্যতীত সমগ্র সাচ্চা মুসলমান ও গোটা জাতি বিশ্বাস করে আমরা আদম সন্তান, বানরের প্রজাতি নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণনা করেছেন । আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) থেকে মানুষের সূচনা । এ বিশ্বাস না থাকলে ঈমানহারা হয়ে যাবে। পাঠ্যপুস্তক থেকে ডারউইনের বানর থিওরি নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদী পাঠসমূহ বাদ দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের আক্বীদা-বিশ্বাস ও ধর্মীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠ্য বই প্রণয়নের জোর দাবি জানান তিনি
মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বই এ নগ্ন ছবি, মুর্তিসহ ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও হিন্দুত্ববাদ সংযোজন করে মুসলিম সন্তানদেরকে নাস্তিক বানানোর চক্রান্ত চলছে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে নাস্তিক্যবাদী একটি মহল ঘাপটি মেরে বসে আছে। অবিলম্বে ঈমান বিধ্বংসী সিলেবাস বাতিল করতে হবে। অন্যথায় গণআন্দোলন সৃষ্টি হবে।
আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী :
চট্টগ্রামের জামিয়া মাদানিয়া শুলকবহর মাদরাসার মাহফিলে আলেম-উলামাদের গ্রেফতার এবং পাঠ্যপুস্তকে অনৈসলামিক বিষয় প্রবেশ ইসলামের বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
কিছু নামধারী মুসলিম আছে যারা ইসলামকে কীভাবে দুনিয়া বিতাড়িত করা যায় সেই ষড়যন্ত্রে সর্বদা লিপ্ত। তাদের দ্বারা ইসলাম চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। বর্তমান সময়ে এই সমস্ত নামধারী মুসলিমদেরকে চিহ্নিত করতে, তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হতে এবং তাদের ষড়যন্ত্রগুলো বুঝে সেগুলো কীভাবে প্রতিহত করতে হবে তার পদ্ধতি জানতে দ্বীনি মাহফিলগুলো অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে। আল্লামা বাবুনগরী বলেন, বর্তমানে নতুন আরেক ষড়যন্ত্র প্রকাশ পেয়েছে। “আমরা নাকি একসময় বানর ছিলাম সেখান থেকে মানুষ হয়েছি ( ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিউরি)” এমন অযৌক্তিক মিথ্যা কথাবার্তা সরকারি বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে এমনকি সরকারি আলিয়া মাদরাসা পাঠ্যপুস্তকেও ঢুকিয়ে আমাদের মুসলিম বাচ্চাদের শিখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঈমান বিধ্বংসী কথাগুলো।
পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন করে, আলেম-উলামা গ্রেফতার করে এবং এসব অনৈতিক কর্মকা-ের জন্য মুসলমানদের মাঝে সৃষ্ট ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশকে পুঁজি করে সরকার পশ্চিমাদের একথা বুঝাতে চায় যে, এদের দমানো সম্ভব নয়। এদেরকে দমাতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। সুতরাং এসব ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
জাতীয় লেখক পরিষদ : ‘জাতীয় লেখক পরিষদের উদ্যোগের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত লেখক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ শিক্ষা সিলেবাসে ইসলামবিরোধী শিক্ষা সংযুক্ত এবং নাস্তিক্যবাদী বিষয় চালু করায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলনে আলেম মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী ধর্মীয় মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার চেতনার আলোকে সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ণের আহ্বান জানিয়েছেন। সম্মেলনে ৩ জন গুণী লেখককে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তারা হলেন প্রবীণ আলেমে দীন মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদি, শিক্ষাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ সালমান ও লেখক ও সাংবাদিক মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদি। পরিষদের সভাপতি ড. মাওলানা শহিদুল ইসলাম ফারুকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, দৈনিক নয়া দিগন্তের সহ-সম্পাদক মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা যুলফিকার আলী নদভী, মাসিক মদীনা সম্পাদক ড. আহমদ বদরুদ্দীন খান, মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী, জাতীয় ইমাম পরিষদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, ড. ইসমাইল হোসাইন, মাসিক রহমত সম্পাদক মাওলানা মনযুর আহমদ, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মাওলানা শরাফত হোসাইন নদভী, দৈনিক যুগান্তরের সহ-সম্পাদক তোফায়েল গাজালী, মাওলানা কামরুল হাসান রাহমানী, জাতীয় লেখক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ শামছুল হুদা, মুফতি শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, ড. মুফতি আল আমীন, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল গাফফার। উপস্থাপনায় ছিলেন মাইনুদ্দীন ওয়াদুদ ও মাহমুদ হাসান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেছেন, ইসলামবিরোধী সিলেবাসে আমাদের প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানো সকলের ঈমানী দায়িত্ব। তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাস অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ৯২ ভাগ মুসলমানের চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার কুমিল্লা উত্তর জেলার মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি ইউনিয়ন শাখা আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন সাকী। বক্তব্য রাখেন মাস্টার মফিজুল ইসলাম, যুবনেতা মাওলানা শুআইব হুসাইন, হাজী আবুন হানিফ মেম্বার। সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন সভাপতি মুফতী আব্দুল ওয়াদুদ নাজিমী।
শ্রীনগর ইসলাহুল উম্মাহ পরিষদ : মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের ইসলাহুল উম্মাহ পরিষদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাতে আলমপুর হোসেন আলী ময়দানে তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে মধুপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ ইসলামবিরোধী নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাস অবিলম্বে বাতিল করে সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জোর দাবি জানান। মাওলানা ইউনুস কাসেমীর সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন, ভারতের দিল্লীর কুবা মসজিদের খতিব মুফতি দেলোওয়ার হুসাইন, আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, মাওলানা মেরাজুল হক মাহজারী।
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি : বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মডেল মসজিদ উদ্বোধনের সময় বলেছেন আওয়ামী লীগ ইসলামের সেবক। এটাতো খুবই খুশির কথা। তাহলে শিক্ষা কারিকুলামে ইসলামবিরোধী সিলেবাস করলো কারা? ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা ইসলামী শিক্ষার সিলেবাস করা কি ইসলামের সেবকের কাজ হতে পারে? সুতরাং নাস্তিক্যবাদী সিলেবাস রহিত করে ইসলামের সেবক বলে প্রমাণ করুন। তা না করলে ঐ দাবি মিথ্যা বলে গণ্য হবে। আমাদের প্রশ্ন দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের সর্বস্তরের আলেমগণ দাবি জানিয়ে আসছেন ইসলামবিরোধী কারিকুলাম ও পুস্তক বাতিল করে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা কারিকুলাম ও পুস্তক প্রণয়নের। কিন্তু ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকার মনে হচ্ছে তা শুনতে পাচ্ছেন না। তাতে মনে হয় সরকারের ইচ্ছা বা সম্মতিতে এসব নাস্তিক ও রাম বাবুরা এসব করেছে।
সিলেবাসে নাস্তিক্যবাদ শিক্ষা দিয়ে আর মডেল মসজিদের সংখ্যাবৃদ্ধি হলেও প্রকৃত মুসলমান ও মুসল্লি তৈরি হবে না। আমাদের বক্তব্য হলো সরকার যদি এটা না করেন তাহলে এটা তাদের জন্য আগামী দিনগুলোতে বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। কারণ দেশের পাঁচ লক্ষাধিক মসজিদে আলেমরা ঈমানী দায়িত্ব পালনের তাগিদে এ ব্যাপারে মুসলমানদের তা জানাতে থাকবে ও প্রতিবাদ করতে থাকবে।
ইসলামী ঐক্য জোট : ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব এক বিবৃতিতে বলেন, মানুষ হযরত আদম (আ.) এর সন্তান। এখন যারা শিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে মানুষকে বানরের সন্তান বানাতে চায় তাদেরকে তাদের রুখে দিতে হবে। মুসলমানের সন্তানদের ঈমান-আক্বিদা ও দেশপ্রেম ধ্বংসের জন্য শিক্ষানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব ইসলামবিরোধী শক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মুসলমানের সন্তানদের নাস্তিক ও হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা তৈরি করার জন্য শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। শিক্ষা সিলেবাসের পড়তে পড়তে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে পৃথক সিলেবাসে মাদরাসার বই ছাপাতে হবে।
কর্মসূচি :
ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) : ইসলামবিরোধী শিক্ষা সিলেবাস বাতিল, দুর্নীতির মূলোৎপাটন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েমের দাবিতে আজ শনিবার বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল বের করা হবে। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।