Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এতিমখানা করার নামে প্রতারণা

মেসেঞ্জারে পরিচয়

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সিনথীয়া ফিলিপস নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখে শিক্ষক মতিলাল মিস্ত্রি তা একসেপ্ট করেন। গত ২০২১ সালের মার্চে ওই আইডির মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মতিলালের সঙ্গে কথাবার্তা হতো। সিনথীয়া ফিলিপস মতিলালকে জানায়, তিনি একজন মার্কিন নাগরিক এবং কাজ করেন আফগানিস্তানের কাবুলে। পরিবারে আপনজন না থাকায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নিজের জমানো টাকা রাখার নিরাপদ কোনো জায়গাও নেই তার। মতিলালকে তিনি বিশ্বাস করেন। নিজের জমানো টাকা দিয়ে বাংলাদেশে এতিমদের জন্য কিছু করতে চান। একটি এতিমখানা নির্মাণের জন্য মতিলালের কাছে ২.৬ মিলিয়ন ডলার প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা পাঠানোর কথা বলেন সিনথীয়া ফিলিপস। পিরোজপুরের নেসারাবাদের বাসিন্দা মতিলাল শিক্ষাকতা করেন ঝালকাঠি সদরে।
কয়েকদিন পর সিনথীয়া মতিলালকে জানান, তার ঠিকানায় ২.৬ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে। এর কয়েকদিন পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এম কে আজাদ পরিচয়ে একজন মতিলালকে ফোন দেন। বিমানবন্দরে তার নামে একটি পার্সেল রয়েছে বলে জানান। তবে ৬৫ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। মতিলাল ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে টাকা পাঠান। এরপর কাস্টমসে আটকে যাওয়ায় এটি ছাড়াতে টাকা লাগবে জানালে আরও ৫০ হাজার টাকা দেন তিনি। এরপরও পার্সেল কাস্টমসে আটকে থাকার কথা বলে এবং মানি লন্ডারিং মামলার ভয় দেখিয়ে এবার নেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মূলত সিনথীয়াই মতিলালকে ধাপে ধাপে টাকা পাঠানোর কথা বলেন। তিন ধাপে মোট ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর পার্সেল পাঠানোর কথা বললে সেটি না পাঠিয়ে আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে বলেন সিনথীয়া। তবে এবার মালামাল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আর কোনো টাকা দেবেন না বলে জানান মতিলাল। এ অবস্থায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য মতিলালকে মালামালের রশিদের কপি মেসেঞ্জারে পাঠানো হয়। তারপরও মালামাল না আসায় যোগাযোগ করলে সিনথীয়া তখন একটি ঠিকানা পাঠিয়ে ঢাকার রামপুরায় আজাদের কাছে আসতে বলেন। সেই ঠিকানায় এসে আজাদকে খুঁজে না পেয়ে মতিলাল বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।
এ ঘটনায় ২০২১ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রামপুরা থানায় মামলা করেন মতিলাল। পুলিশ ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একই থানার এসআই নুরুজ্জামান বলেন, সিনথীয়া, আজাদ, ইউসুফ- এরা আসলে একটি চক্র। এভাবে প্রতারণা করেই অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা। ঢাকায় বাড়িও আছে তাদের। এই চক্রের সদস্য চারজন। এর মধ্যে প্রথম তিনজন গ্রেফতারও হয়েছেন। আর এমদাদুল্লাহকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ইউসুফ সরকারের কাছ থেকে ১২টি ব্যাংকের তিন শতাধিক চেক উদ্ধার করা হয়েছে। মো. আলাল হোসেনের কাছ থেকে তিনটি ব্যাংকের ৩০টি এটিএম কার্ড ও ৫টি ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।
মিঠু এই কাজের জন্য দরিদ্র লোকদের টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে এটিএম কার্ড ও চেকবই স্বাক্ষর করে নিতেন। এসব অ্যাকাউন্টে প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন করা টাকা তুলে নিতেন। এসব অ্যাকাউন্টে অধিকাংশই ভুল ঠিকানা দেওয়া হতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ