Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনে ভস্মীূভূত ৫০০ ঘর তমব্রু সীমান্তের ফের গোলাগুলি

কক্সবাজার ব্যুরো ও বান্দরবান স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আগুনে ওই সীমান্তে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরে ভস্মীভ‚ত হয়েছে আনুমানিক ৫০০ ঘরবাড়ি। এতে শিবির ছাড়ছে রোহিঙ্গারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তুমব্রæ সীমান্তে শূন্যরেখা এলাকায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর আগে গত বুধবার এই শূন্যরেখার মিয়ানমার অংশে দিনভর গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত এবং আরও দুজন বিদ্ধ হয়েছে।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তুমব্রæ সীমান্তে কোনারপাড়া শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গতকাল সকালেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে শিবিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে বেশকিছু রোহিঙ্গা তুমব্রæ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশে আশ্রয় নিয়েছে। শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের কিশোরী রহিমা জানায়, থাকতে না পেরে জিরো লাইনে থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছি। আমাদের সবার ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে, যে যেভাবে পারে সবাই এদিক-ওদিক চলে গেছে।

শূন্যরেখা রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, গতকাল সকালেও এখানে গোলাগুলি হয়েছে। আগুনে আমাদের শিবিরের ৬২১টি পরিবারের মধ্যে আনুমানিক ৫০০ বসতঘর পুড়ে গেছে। এসব লোকজন অধিকাংশ মিয়ানমার সীমানার ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু মানুষ বাংলাদেশেও আশ্রয় নেয়। শূন্যরেখা থেকে শিবিরটি উচ্ছেদ করতে একটি সশস্ত্র গ্রæপ আগুন ধরিয়ে দেয়।’ ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগুন লাগায় নারী, শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেয়, তুমব্রæ স্কুল ও আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছে। এসব জায়গায় নিরাপত্তা বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘আজকের গোলাগুলির বিষয়টি আমার জানা নেই। তুমব্রæ সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শূন্যরেখায় হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনে আমাদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তবে শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে অধিকাংশ বসতঘর পুড়ে গেছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি।’

জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রæ-টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিজিপির সাথে বিদ্রোহী আরকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) র মধ্যে প্রচÐ সংঘর্ষ হয়। গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফের সীমান্ত এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর গত বুধবার থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রæপের সংঘাতে ফের সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।

এ ছাড়া গত ১৪ নভেম্বর তুমব্রæর কোনারপাড়া সীমান্তে র‌্যাব এবং ডিজিএফআই এর মাদক বিরোধী যৌথ অভিযানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, এসময় ডিজিএফআই কর্মকর্তা রেজোয়ান রুশদি ও রোহিঙ্গা নারী সাজেদা বেগম নিহত হয় এবং র‌্যাব সদস্যে সোহেল বড়–য়া গুলিবিদ্ধ হয়। এই ঘটনায় গত ২৬ নভেম্বর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ২০ জনের নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ কে আসামি করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা হয়।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের মুখে ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সে সময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঘুমধুমের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় বসতি শুরু করে। এর বাইরে তুমব্রæর কোনারপাড়া শূন্যরেখা আশ্রয় শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২৮০ রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ