পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ইনকিলাব ডেস্ক : গত তিন মাস ধরে একেবারেই বিজ্ঞ এবং পরিপক্ব আচরণের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সূচক এবং লেনদেন বাড়ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে বাজার অস্থিতিশীল করার মতো কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি এমনটি কেউ বলেওনি। নানাবিধ আইনি সংস্কারে বাজার এভাবে টেকসই হয়ে এগুচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকগণ। তারপরও বিশেষ কয়েকটি কারণে এই গতি কোনোক্রমেই বাংলাদেশর সামষ্টিক অর্থনীতির গতির তুলনায় সামনে এগিয়ে যেতে পারছে না। একেবারেই সোজাসাপটা কথায় আমাদের দেশের গোটা অর্থনীতি যে গতিতে বড় হচ্ছে, সেই গতিতে দেশের পুঁজিবাজারের গতি যেমন বাড়ছে না, তেমনি বছর বছর ১০ থেকে ১২টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করেও বাজারের মুলধন বাড়িয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ কারণেই দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অভিমত বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজার পিছিয়ে, এখনো পেছাচ্ছে।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতির (জিডিপি) মাত্র ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ হলো বাজার মূলধন (মার্কেট ক্যাপ টু জিডিপি রেশিও)। অথচ বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাজার মূলধন দেশগুলোর অর্থনীতির প্রায় ৭১ শতাংশ (গড়ে)।
অর্থনীতির তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজার পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে ওই বিশেষজ্ঞদের অভিমত , পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষের খারাপ ধারণাই এর বড় কারণ। পুঁজিবাজারকে এখনো অনেকেই ফটকা বাজার বা কারসাজির বাজার বলেই মনে করেন। এমনকি দু’একজন মন্ত্রীর মুখ থেকেও এ ধরনের কথা এদেশের মানুষ শুনেছে। ফলে অর্থনীতি বাড়তে থাকলেও সে তুলনায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়েনি। তাছাড়া বাজারে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তীব্র অভাব রয়েছে। যে কোম্পানিগুলো বর্তমানে তালিকাভুক্ত রয়েছে, তার বেশির ভাগই ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে না। অল্প কয়েকটি কোম্পানি ভালো মানের। বাকিদের অধিকাংশই সততার সাথে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণের চেয়ে নিরীহ মানুষগুলোর কাছ থেকে টাকা তুলে আখের গোছানোকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কম। এতে দেশের অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক ভালো হতে থাকলেও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারের দিকে মানুষের আগ্রহ যে বাড়বে, এর বড় উদারহরণ হলো গ্রামীণফোন। ২০০৯ সালে কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সে সময় গ্রামীণফোনের শেয়ার পাওয়ার জন্য অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে অংশগ্রহণ করেন। যার প্রভাব পড়েছিল গোটা পুঁজিবাজারেই। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এই মুহূর্তের জন্য সব চেয়ে জরুরি কাজ। এ বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট একজন অর্থনীতিবিদের অভিমত, আমাদের অর্থনীতি প্রায় সাত শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু সেই হারে পুঁজিবাজার বাড়ছে না। কারণ বাজারে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির অভাব। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে থাকে, তখন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে আসতে থাকবে। ফলে বাজার মূলধন বাড়তে থাকবে। বর্তমানে আমাদের দেশে অল্পকিছু কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির ওপরই মানুষের আস্থা কম। ফলে অনেকেই এখানে বিনিয়োগ করতে চান না। পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে হলে ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন ওই অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ছয় দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছয় দশমিক শূন্য এক শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছয় দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছয় দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকেই দেশের অর্থনীতি বর্ধিত হারে বাড়ছে। অথচ ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সেই হারে বাড়ছে না পুঁজিবাজারের পরিধি। ২০১০ সাল শেষে অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন ছিল ৩৭ শতাংশ। ২০১১ সাল শেষে তা হয় ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এরপর ২০১২ সালে ২৬ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০১৩ সালে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, ২০১৪ সালে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ২০১৫ সাল শেষে তা হয় ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর ২০১৬ সালের গত মাস পর্যন্ত জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশে। টাকার অঙ্কে বাজার মূলধনের পরিমাণ তিন লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত)। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অথচ এ বন্ডগুলো তালিকাভুক্তির পর আর কোনো লেনদেন হয়নি। তাই বন্ডের অংশ বাদ দিলে বাজার মূলধন হবে দুই লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এটি বিবেচনায় নিলে অর্থনীতিতে বাজার মূলধনের অংশ আরো কমে আসবে।
বাংলাদেশে অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজারের অংশ ২০ শতাংশের কম, কিন্তু বিশ্বব্যাপী এ হার অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ভারতের অর্থনীতির তুলনায় দেশটির পুঁজিবাজারের অংশ ৭৩ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় ৪১ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৮২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৬ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে ৮৮ শতাংশ।
অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজার পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের নামকরা একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান বলেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালের দিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি ছিল। তখন বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি ও দাম বাড়ার ফলে বাজার মূলধনও বেড়েছিল। কিন্তু এরপর বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। ফলে পুঁজিবাজারের সূচক কমার সাথে সাথে বাজার মূলধনও কমে গেছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের তুলনায় আমাদের বাজার মূলধন (জিডিপির ভিত্তিতে) অনেক কম। এ অবস্থায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সেজন্য ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। -ওয়েবসাইট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।