পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্কুল ও মাদরাসার নতুন পাঠ্য বই নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে নিম্ন মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বই নিয়ে বিতর্ক বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে মাদরাসার বইয়ে নাস্তিকতা ও পৌত্তলিকতা, বিবর্তনবাদ পর্দাবিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেওয়া এবং ইসলামের ইতিহাস বিকৃতি করে হিন্দুত্ববাদি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে দেশপ্রেমী জনতা।
এছাড়া স্বনামধন্য একজন লেখকের লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে হুবহু চুরি আর গুগলের অনুবাদ নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ভুল, বিকৃত ইতিহাস, যৌনতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আর কল্পকাহিনি দিয়ে ভরা এবারের নতুন বই দ্রুত সংশোধনের জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্কুলের নতুন পাঠ্য বইয়ের সমালোচনা করে মারুফ মল্লিক লিখেছেন, আমার কাছে মনে হয়েছে একদল অজ্ঞ লোক দিয়ে পাঠ্য পুস্তক রচনা করা হয়েছে। তথ্যের সত্যতা ও সোর্স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ইতিহাস পাঠ ও রচনার গুরুত্বপূর্ন অনুষঙ্গ। গবেষনায় মূলত এসবই শিখানো হয়। বড় বড় ডিগ্রি থাকলেই বিজ্ঞ হওয়া যায় না। বিজেপির দাবী করা ইতিহাস আর পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য থাকে। পাঠ্যপুস্তকের লেখকরা মনে হয় এই পার্থক্যটা ভুলে গেছিলেন। তাই ভারতের বিজেপিপন্থী লেখকদের দাবী করা তথ্য পাঠ্য বইয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য চিপাচাপা থেকে তথাকথিত ডিগ্রি প্রাপ্তরা এই পার্থক্য বুঝবেন না সেটাই স্বাভাবিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল লিখেছেন, ৭ম শ্রেণী'র ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ের রচয়িতাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভুল তথ্য দিয়ে হলেও ব্রিটিশ শাসনপূর্ব মুসলিম শাসকদের হেয় করা, অন্য ধর্মের শাসকদের তুলনায় তাদের নীচু করা। এটি সুস্পষ্ট সাম্প্রদায়িকতা। এই বইয়ের কন্টেন্ট সংশোধনের দাবী জানাচ্ছি এবং যে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিরা এটি রচনা করেছে তাদের তীব্র নিন্দা করছি।
মুফতি নাজমুল হক সাকিব লিখেছেন, পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তনবাদের কুফুরি আকিদাহ
মানুষ কোত্থেকে এলো? এই প্রশ্নটি খুবই পরিচিত একটি প্রশ্ন। কুরআন আমাদেরকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান আকৃতিতে আসে নি। বরং সৃষ্টিই হয়েছে এভাবে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার জীববিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বইতে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। থিউরি অব এভুলেশন তথা বিবর্তনবাদের ভিত্তিতে। এজন্য উপস্থাপন করা হয়েছে নানা রকম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর। যার সবটুকুই অনুমান ও কল্পনা। সত্যের সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই। আর ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বিশ্বাস পোষণ করা সুস্পষ্ট কুফুরি।
ষষ্ঠশ্রেণীর সমাজবিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ২৪ পৃষ্টায় বলা হচ্ছে ; ‘আমাদের প্রথমে মনে রাখতে হবে যে আধুনিক মানুষ ও বানর-গোত্রের নানা প্রাণী (যেমন : শিম্পাঞ্জী, গরিলা) একটি সাধারণ প্রাইমেট জাতীয় প্রজাতি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছে।’...
এসব পড়ানো হবে তখন যখন আপনার শিশুটি ষষ্ঠশ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার বয়স ১১ থেকে ১৪ এর ভেতরে। যখন সে ভালো ও মন্দ, সঠিক ও ভুলের সুস্পষ্ট তফাত করতে শিখেনি। এখনও তার মাঝে সঠিক মানদণ্ড ও মূল্যবোধ তৈরী হয়নি। এখনও ছোট আছে ভেবে আপনি তাকে ইসলামি আকিদাহ ও বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচিত করেন। কিন্তু সুযোগ পেয়ে তথাকথিত সেক্যুলার গোষ্ঠি তার মস্তিষ্কে কুফুরি আকিদাহ পুশ করে দিচ্ছে। মুসলিম পরিবারের শিশুদের যেন ছিনতাই করে নিয়ে নাস্তিক ও সেক্যুলার বানানোর পাঁয়তারা করছে।
মোঃ আলী আহসান চৌধুরী লিখেছেন, আমাদের মুসলিম সমাজকে এসবের বিরোদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু এই একটি বিষয় না। বিবর্তনবাদ, মুক্তচিন্তা, ধর্মীয় পরিচয়কে হেয় করা এবং সম্পূর্ণ ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনকে ন্যাক্কারজনকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি আবারও বলছি এভাবে বসে থাকলে হবে না। চারদিক থেকে আওয়াজ তুলুন নাস্তিকদের হাত থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে নতুবা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে৷
এইচএম হৃদয় লিখেছেন, মাদ্রাসার পাঠ্য বইয়ে হিন্দুদের মূর্তি!এইসব কি দেখার কেউ নেই?তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, অতিদ্রুত পরিবর্তন করা হোক, মাদ্রাসায় এবতেদায়ী ও দাখিলের পাঠ্য পুস্তকে ভিন্ন ধর্মের প্রতিমার ছবি, ও লেখকের প্রবন্ধ দিয়ে ইসলামের সাথে তামাশা বন্ধ করুন। সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতেছি,
নিঃসন্দেহে আলিয়া মাদ্রাসা শুধুমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।এখানে তো আর হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানদের বাচ্চারা পড়ে না।তাহলে কোন যুক্তিতে মাদ্রাসার সিলেবাসে এসব ঢুকানো হলো...? তাও আবার ইসলামের বিভিন্ন বিষয় বাদ দিয়ে....!হে আল্লাহ তুমি আমাদের কে হেফাজত করো।
মোঃ সালাউদ্দিন আইয়ুবী লিখেছেন, রাসূল (সাঃ) ধরার মাঝে এসে যেই জাহেলি যুগের দেব দেবি মূর্তিপূজা সরিয়ে কালিমার পতাকা উড্ডীন করে অন্ধকার সমাজকে আলোকিত করলেন। সেই রাসূলের ঘর মাদ্রাসার বইয়ে আজ মুসলিম নামের কিছু মুনাফিক নগ্ন অর্ধনগ্ন মূর্তি ভাস্কর্য সহ মূর্তিপূজা ও ডারউইনের মতবাদ ঢুকিয়ে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ্।এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, কঠিন প্রতিবাদ প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ৯৫% মুসলমানের দেশে এটা মেনে নেয়া যায়না। মুসলমানদের সন্তানকে বেদ্বীন বানানোর কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে। #বয়কট_সিলেবাস।
আরেক জন পাঠক লিখেছেন, পরিকল্পিত ভাবে পাঠ্যবইতে এভাবে ইসলামের সৌর্ন্দযকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে।বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অব্যবস্থাপনাও চরম ভাবে দায়ী।নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা নীতি রুখে দেওয়ার সময় এখনই ।সর্বস্তরের জনমত নির্বিশেষে বাংলার জমিন থেকে নাস্তিক্যতাবাদী শিক্ষা নীতি বাতিলের জোর দাবী তুলতে হবে।
কবির লিখেছেন, নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা মন্ত্রীর বিচার একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ! বোরকার পড়লে বিপদ বেশি না শাড়ি পড়লে বিপদ বেশি?! শাড়িতে বিপদ বেশি উদাহরণ শাড়ির একটা পার্ট বাহিরে থাকে যেটা পেঁচিয়ে যে কোন সময় বিপদে পড়তে পারে! ভারতের পাঁচটা গোলাম নাস্তিক্যবাদী ভোট চোর অবৈধ সরকারকে বিদায় না করিত পারিলে ভবিষ্যতে ইসলাম মুসলিম দের ভয়াবহ পরিনতি ভোগ করিতে হবে! জাতি আর ঘুমিয়ে ওনা এবার জাগো! দীর্ঘ পনেরো বছর ঘুমিয়েছো আর কতো!
এদিকে, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে হুবহু চুরি আর গুগলের অনুবাদ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বইটির সমালোচনা করে একজন লেখক লিখেছেন, অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে পাঠ্যপুস্তকটি পড়া শুরু করেছিলাম। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, লেখকদের সম্পাদনায় প্রকাশিত বইটি হাতে পাওয়ার পর সত্যি একধরনের অস্বস্তিবোধ কাজ করছে। শুরুতে যেভাবে লাইন টু লাইন অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে কপি করে বাংলা অনুবাদ করেছে, সেটি দেখার পর মনে হয়েছে, আমরা ঠিক কোন শিক্ষাব্যবস্থা কোমলমতি শিশুদের সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছি? আমার চোখ যতটি পৃষ্ঠা নজর দিয়েছে, তার অংশ এইভাবে গুগল ট্রান্সলেটরে ভাষান্তর করা হয়েছে। আমরা হয়তো ভুলে গেছি, গুগল আমাদের বাংলা ভাষার ভাষান্তর এখনো সঠিকভাবে দিতে পারে না। ভুলভাল ইংরেজিতে বাংলার ভাষান্তর হয়, সেটি সম্ভবত লেখকেরা ভুলে গেছেন।
বইটির সমালোচনা করে আরেকজন লিখেছেন, তোমরা জেনে আশ্চর্য হবে যে, এই বইয়ের একজন লেখক হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। তোমরা আরো আশ্চর্য হবে যে, এই বইয়ের সম্পাদকও তিনি। লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই বই পড়বে এই বছর। চুরি করা লেখা পড়ে বড় হবে একটি প্রজন্ম।
বিজ্ঞান বইয়ে সমালোচনা করে মনির হোসেন লিখেছেন, যাদের নিজস্ব বই লিখার প্রতিভা নাই বরং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে চুরি করে বই লিখতে হয় তারা নাকি এদেশের বুদ্ধিজীবী। অন্যান্য দেশের বুদ্ধিজীবীরা যেখানে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক জিনিস তৈরি করে বিশ্বের কাছে নিজের দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে সেখানে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের সামান্য একটা বই লিখতে ও চুরি করতে হয়। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ অতল গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।