Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সউদী গমনেচ্ছু ৪০ হাজার কর্মীর ভিসা আটকা

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


২৫% নারী কর্মী পাঠানোর শর্তারোপ : স্বল্প সময়ের ব্লাক লিস্টের বেড়াজালে এজেন্সিগুলো
শামসুল ইসলাম  : চুক্তিবিহীন ২৫% নারী কর্মী পাঠানোর শর্তারোপের কারণে সউদী গমনেচ্ছু প্রায় ৪০ হাজার কর্মীর ভিসা আটকা পড়েছে। আটকা পড়া এসব কর্মীর অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সউদী গমনেচ্ছু কর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছে। স্বল্প সময়ের ব্লাক লিস্টের বেড়াজালে পড়েছে অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সি। ভ্রাতৃ-প্রতীম সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজকীয় সউদী সরকারের আমন্ত্রণে রিয়াদ সফরকালে সউদী বাদশাহ সালমানের সাথে অনুষ্ঠিত  দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে সফল আলোচনা হয়েছে। এর পর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। সউদী আরবে নারী কর্মীর পাশাপাশি পুরুষ কর্মীর রফতানি পুরোদমে শুরু হয়। এদিকে, চাহিদাপত্র হাতে পাওয়ার দীর্ঘদিন পরেও পুরুষ কর্মীদের ভিসা না পাওয়ায় সউদী আরবে পাঠাতে না পেরে এজেন্সিগুলো বিপাকে পড়েছে। সউদী আরবে কর্মরত শত শত প্রবাসী কর্মীরা আত্মীয়-স্বজনকে সউদীতে নেয়ার  জন্য চড়া দামে চাহিদাপত্র কিনে এখন চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সউদী আরবের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তির নাম বলে বাংলা মটরের দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সিসহ হাতে গোনা কয়েকটি এজেন্সির অনুকূলে প্রতিদিন বড় বড় কোম্পানির ৫/৬ হাজার কর্মীর ভিসা ইস্যু করছে। এ নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাঝে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে জনবলের স্বল্পতার কারণে দূতাবাস থেকে সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের ভিসা ইস্যুতে ধীরগতি। গত দু’মাস ধরে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে ২৫% নারী কর্মীর পাসপোর্ট দেয়ার শর্তারোপ করে পুরুষ কর্মীদের ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা নিচ্ছে না। নানা কারণে স্বল্প সময়ের ব্লাক লিস্টে রাখা হচ্ছে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সিকে। অতিসম্প্রতি ঢাকাস্থ সউদী রাষ্ট্রদূত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সাথে তাপ দপ্তরে এক বৈঠকে সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। গতকাল শনিবার ইস্কাটনস্থ বায়ারা কার্যালয়ে সউদী আরবের ভিসা সংক্রান্ত সংটক নিরসনের লক্ষ্যে ইসি’র জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ ভিসা সংকট নিরসন না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগের উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। বায়ারার সভাপতি ও সাবেক এমপি বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী সোমবার ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বায়রা নেতৃবৃন্দের এক জরুরি বৈঠকে ভিসা সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সভায় সৃষ্ট সংকট নিরসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বায়রার নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বৈঠক করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানানো হয়। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. এম ফারুক, সহ-সভাপতি কাজী মফিজুর রহমান, এফবিসিসিআই-এর পরিচালক ও বায়রার সাবেক মহাসচিব মনসুর আহমেদ কালাম, বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান ও খলিলুর রহমান। এফবিসিসিআই-এর পরিচালক ও বায়রার নেতা মনসুর আহমেদ কালাম সউদী ভিসা সংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে বলেন, সিন্ডিকেট চক্রের কারণে সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হচ্ছে না। বায়রায় কোনো সিন্ডিকেট সদস্যকে রাখা যাবে না। তিনি সিন্ডিকেটবিহীন সকলের জন্য কর্মী প্রেরণের সুযোগ রেখে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর দাবি জানান। সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সউদী দূতাবাস ২৫% নারী কর্মীর পাসপোর্ট দাখিলের শর্ত দিয়ে পুরুষ কর্মীদের পাসপোর্ট জমা না নিয়ে এজেন্সিগুলোকে নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া কর্মীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জমা দেয়ার শর্ত দিচ্ছে। এতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ কর্মীর ভিসা আটকা পড়েছে।  সভায় বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে বাজারের যেসব কথা (সিন্ডিকেট) উঠছে তার কোনো ভিত্তি নেই। দু’দেশের সরকার যেভাবে চায় সেভাবেই কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। বায়রা সভাপতি বলেন, সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকে করে সউদী ভিসা সংক্রান্ত সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া আগামীকাল সোমবার সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকেও সৃষ্ট সংকট নিরসণের আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হবে।  বাংলা মটরস্থ তুর্কি এসোসিয়েট লিঃ (৪২৪) ও ল্যান্ড মার্ক নেটওয়ার্ক (৫৩৯)-এর মাধ্যমে কয়েক হাজার পুরুষ কর্মীর সউদীর ভিসা দ্রুত ইস্যু হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার পুনম ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি এক দিনেই প্রায় সাড়ে ৪শ’ কর্মীর সউদীর ভিসা পেয়েছে। উল্লেখিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কর্মীদের গামকার কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগে না। শুধু কর্মীদের সাধারণ মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে ভিসা দেয়া হচ্ছে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো পুরুষ কর্মীদের ভিসার জন্য প্রতিদিন সউদী দূতাবাসে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে পারছে না।  সউদী গমনেচ্ছু কর্মীরা প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে ধরর্ণা দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে।     



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ