Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আছে এমন আমলাদের তালিকা প্রকাশের দাবি

সরকারি কর্মকমিশন বিল পাস প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাজা ১০ বছরের কারাদÐ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আছে এমন আমলাদের তালিকা সংসদে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি। তিনি বলেছেন, গণমাধ্যমে এসেছে, আমলাদের বিদেশে প্রচুর সম্পদ আছে। আমলাদের মধ্যে কাদের বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আছে তাদের তালিকা সংসদে প্রকাশ করা উচিত। তাদের বরখাস্ত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। এমনকি তাদের ফাঁসি দেওয়ারও তিনি দাবি জানান। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গতকাল সরকারী কর্ম কমিশন বিল পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, একটি লোক মার্ডার করলে একজন খুন হয়। কিন্তু হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করলে দেশে দুর্ভীক্ষের আশংকা দেখা দেয়। এতে লক্ষ লোকের জীবনহানির আশংকা থাকে। তাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমলাদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের মনস্তাত্তি¡ক দ্ব›দ্ব ও দুরত্ব। আমলাদের উচিত মন থেকে রাজনীতিবিদদের শ্রদ্ধা করা। প্রতিমন্ত্রীর মতো আমলারাও সজ্জন হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সরকারি কর্ম কমিশন গঠনের ক্ষেত্রেই অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ করেন সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, কমিশনন চেয়ারম্যন ও সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার। সেখান থেকে জটিলতা শুরু হয়। নিয়োগে অনিয়ম হয়। নিয়োগকৃতরা সঠিক প্রশিক্ষণ পান না। তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে সংকট তৈরি হয়। তাই সংবিধান অনুযায়ী কমিশন গঠনের বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার।
সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সংবিধানে কর্ম কমিশন আইন সম্পর্কে সম্পষ্ট বলা হয়েছে। অথচ বিলে ধরেই নেওয়া হয়েছে সরকারি নিয়োগে অনিয়ম-দুনীতি হবে। যে কারণে বারবার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অনিয়ম করবেন, এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

চল্লিশতম বিসিএস’র নন ক্যাডারদের দ্রæত নিয়োগের দাবি জানান সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, কোন সুনির্দ্দিষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদের নিয়োগ আটকে রাখা হয়েছে। যে কারণে প্রায় আট হাজার প্রার্থী আন্দোলন করছে। এটা বিবেচনায় নিতে হবে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য পৃথক বডি করার প্রস্তাব করেন তিনি।
সরকারি কর্ম কমিশন বিল পাস

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে দুই বছরের কারাদন্ড এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিল’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কষ্ঠভোটে পাস হয়। এরআগে স্পিকার বিলে উপর বিরোধী দলের আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন।

বিদ্যমান আইনে ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়ে কোন সাজার বিধান ছিলো না। নতুন আইনে সেটি যুক্ত করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হয়েও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করলে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ দন্ডণীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ বিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি এ ধরনের উত্তর সম্বলিত অতিরিক্ত পৃষ্টা কোনো উত্তর পত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে তাকে দুই বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া যাবে। আর কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা এখান থেকে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সহায়তা করলে তার দন্ড হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
বিলের বিধান অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ছাড়া অন্যান্য অপরাধের সাজা মোবাইল কোর্টের আওতাভুক্ত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্সের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সরকারি কর্ম কমিশন এমনভাবে বহাল থাকবে যেন এটি এই আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন সভাপতি, অন্তত ৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও শর্তাবলী নির্ধারণ করতে পারবে এই কমিশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ