Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


বিষয় : বাংলা
শামসুল আলম
চেয়ারম্যান
ক্যারিয়ার গাইডলাইন

প্রশ্ন : পুঁথি সাহিত্য কী? এ সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক কে?
উত্তর : অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরবি-ফারসি শব্দমিশ্রিত এক ধরনের বিশেষ ভাষারীতিতে যে সব সাহিত্য কর্ম রচিত হয়েছিল তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘পুঁথি সাহিত্য’ নামে পরিচিত। যেমন- ‘গাজী কালু’, ‘চম্পাবতী’। পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক দৌলত কাজী। তবে অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে ফকির গরীবুলাহ, সৈয়দ হামজা প্রমুখ এ কাব্য রচনা করেন ।
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : প্রাচীন যুগে ব্যক্তিজীবন প্রধান ছিল, ধর্ম নয়। মধ্যযুগে ধর্মটাই মুখ্য হলো, মানুষ হয়ে পড়ল গৌণ। আর আধুনিক যুগে মানুষ মুখ্য হলো এবং মানবতাই হলো একমাত্র কাম্য। সেই সাথে যোগ হলো অন্ধ বিশ্বাসের বদলে যুক্তিনির্ভরতা, স্বজাত্যবোধ, স্বদেশ প্রেম, ব্যক্তি স্বাধীনতা। বিশেষ করে নারী-স্বাধীনতা আধুনিক যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাশ্চাত্যের শিল্পবিপব আধুনিক জীবন চেতনাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে, পাশাপাশি সাহিত্যেও এর প্রভাব পড়ে ব্যাপক।
প্রশ্ন : আধুনিক যুগে ধারাবাহিক চর্চার পূর্বে বাংলা গদ্য কোথায় লেখা হতো?
উত্তর : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে মূলত দলিল, দস্তাবেজ, চিঠিপত্র ও আইনশাস্ত্রে গদ্য সীমাবদ্ধ ছিল। ১৫৫৫ সালে আসামের রাজাকে লেখা কুচবিহারের রাজার একটি পত্রকে বাংলা গদ্যের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তীতে সতেরশ’ সালের শেষভাগে দোম অ্যান্তনিও লিখিত ‘ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক সংবাদ’ এবং ১৭৩৪ সালে মনোএল-দ্য-আস্সুম্পসাও রচিত ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ বাংলা গদ্যের প্রাথমিক প্রচেষ্টার নিদর্শন

বাংলা সাহিত্য : আধুনিক যুগ
বাংলা গদ্যের উন্মেষপর্ব
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে জন টমাসের ভূমিকা লিখুন।
উত্তর : আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের সূচনালগ্নে জন টমাসের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তিনি এই উপমহাদেশে আসেন ১৭৮৩ সালে। তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে ধর্মীয় চিকিৎসাসহ নানামুখী সেবা দিতে চাইলেন। যে কারণে তিনি ইংল্যান্ড হতে উইলিয়াম কোরিকে আনলেন ১৭৯৩ সালে। তিনি তাকে নিয়ে মিশন প্রতিষ্ঠার আগেই ১৮০০ সালের প্রথম দিকে মৃত্যুবরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর উইলিয়াম কেরি জশুয়া মার্শম্যানের সহযোগিতায় শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই মিশন প্রতিষ্ঠার পেছনে পরোক্ষ অবদান জন টমাসের সবচেয়ে বেশি। এই শ্রীরামপুর মিশনই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে।
প্রশ্ন : আধুনিক যুগের স্থিতিকাল নির্ধারুপূর্বক এ যুগের বৈশিষ্ট্যগুলো উপস্থাপন করুন।
উত্তর : ১৮০১ সাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ। আধুনিক যুগের দুটি পর্ব। প্রথম পর্ব ১৮০১-১৮৬০, দ্বিতীয় পর্ব ১৮৬১-বর্তমান। আধুনিক যুগ ১৮০১ সাল হতে নির্ধারু করা হলেও এটির সূচনা হয় আরও ৪০ বছর আগে ভারতচন্দ্রের মৃত্যুর পরের বছর অর্থাৎ ১৭৬১ সাল হতে।
আধুনিক যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-মানবিকতা, ব্যক্তি সচেতনতা, সমাজবোধ, দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধ, আত্মচেতনা আত্মপ্রসার, মৌলিকত্ব, মুক্তবুদ্ধি প্রভৃতি। এর সাথে যোগ হয়েছেÑ রোমান্টিকতা, যান্ত্রিকতা, প্রগতিশীল চিন্তা ও নগরকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থাপনা। ইউরোপের শিল্প বিপবও পরোক্ষভাবে আধুনিক যুগের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে।
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান লিখুন।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে শ্রীরামপুর মিশনের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই মিশনটি নানামুখী ভূমিকা রাখে। এখান হতে সর্বপ্রথম পঞ্চানন কর্মকার বাংলা মুদ্রাক্ষর আবিষ্কার করেন। বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তকের অনুবাদ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা এখান থেকে যাত্রা শুরু করে।
প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশনের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর : উইলিয়াম ওয়ার্ড ও জশুয়া মার্শম্যানের সহায়তা এবং উইলিয়াম কেরির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৮০০ সালে স্থাপিত হয় শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন। প্রতিষ্ঠাকালে এটি ছিল ডেনিসদের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে ১৮০৮ সালে এ মিশনটি যখন ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তখন এর নামকরণ করা হয় শ্রীরামপুর মিশন।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও বাংলা গদ্য
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে উইলিয়াম কেরির অবদান লিখুন।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে উইলিয়াম কেরির অবদান সবচেয়ে বেশি। তার নেতৃত্বেই শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা হয়। এই মিশন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ১৮০৯ সালে এই মিশন হতেই উইলিয়াম কেরি বাইবেলের বাংলা অনুবাদ করে ‘মঙ্গল সমাচার’ নামে প্রকাশ করেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পর্বে উইলিয়াম কেরি ‘কথোপকথন’ (১৮০১) রচনা করেন। এটি কোন বিদেশি কর্তৃক রচিত প্রথম বাংলা গদ্য সাহিত্য। ১৮১২ সালে তিনি রচনা করলেন ‘ইতিহাসমালা’। এটিও বাংলা সাহিত্যে এক নতুন সংযোজন। এটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম ইতিহাসনির্ভর গল্পগ্রন্থ। বিভিন্ন অভিধান রচনার ক্ষেত্রেও উইলিয়াম কেরির বিশেষ অবদান আছে।
প্রশ্ন : ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের নামকরণ সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : রাজা পঞ্চম জর্জের নামানুসারে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ। প্রাচ্যে ব্রিটিশ রাজের সামরিক শক্তির বড় নিদর্শন এটি। ৪ মে, ১৮০০ সালে লর্ড ওয়েলেসলির নেতৃত্বে যখন এই কলেজটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হলো তখন এই দুর্গের নামানুসারে এই কলেজের নামকরণ করা হলো ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ।
প্রশ্ন : ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর লর্ড ওয়েলেসলির নেতৃত্বে কলকাতার অদূরে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪ মে, ১৮০০ সালে এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এর যাত্রা শুরু হয় ২৪ নভেম্বর ১৮০০ সাল হতে। মারাঠি ও সংস্কৃত ভাষা বিভাগ নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও ১৮০১ সালে গিয়েই বাংলা বিভাগ খোলা হয়। ১৮০১-১৮১৫ সাল পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ৮ জন প-িত কমপক্ষে ১৪টি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থগুলো বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে বিশেষ অবদান রাখে।
প্রশ্ন : কোন সময়কে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের স্বর্ণযুগ বলা হয়?
উত্তর : ১৮০১-১৮১৫ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪টি গ্রন্থ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ৮ জন প-িতের দ্বারা রচিত হয়। এই ১৪টি গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ যুগের সৃষ্টি করে। তাই ১৮০১-১৮১৫ সাল পর্যন্ত সময়কে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের স্বর্ণযুগ বলা হয়।
প্রশ্ন : ফোর্ট উইলিয়াম পূর্বের সবচেয়ে বেশি গ্রন্থ কে রচনা করেন? তার সাহিত্য কর্ম লিখুন।
উত্তর : ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পর্বের সবচেয়ে বেশি গ্রন্থ রচনা করেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার। তিনি মোট পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলÑ বত্রিশ সিংহাসন (১৮০২), রাজবলি (১৮০৮), হিতোপদেশ (১৮০৮),বেদান্ত চন্দ্রিকা (১৮১৭) ও প্রবোধচন্দ্রিকা (১৮৩৩)।
প্রশ্ন : ফোর্ট উইলিয়াম পর্বের লেখকদের নাম লিখে তাঁদের সাহিত্য কর্মগুলোর নাম লিখুন।
উত্তর : ফোর্ট উইলিয়াম পর্বে ১৮০১ থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ এই সময়ের মধ্যে ৮ জন লেখক ১৩ খানি বাংলা গদ্য পুস্তক লিখে ছিলেন।
১. উইলিয়াম কেরি-কথোপকথন, ইতিহাসমালা।
২. রাম রাম বসু-রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র লিপিমালা।
৩. গোলকনাথ শর্মা-হিতোপদেশ।
৪. মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার-বত্রিশ সিংহাসন, হিতোপদেশ, রাজাবালি, প্রবোধ চন্দ্রিকা।
৫. তারিনীচরণ মিত্র-ওরিয়েন্টাল ফেবুলিস্ট।
৬. রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়-মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্রং।
৭. চ-ী চরণ মুনশী- তোতা ইতিহাস।
৮. হরপ্রসাদ রায়-পুরুষ পরীক্ষা।
প্রশ্ন : হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৭ সালে। এ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের লোকেরা ইংরেজি শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপুষ্ট হয়ে যাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারে। পরবর্তীতে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এই কলেজে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
প্রশ্ন : ডিরোজিওর পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : ডিরোজিও ছিলেন ফিরিঙ্গি (পর্তুগিজ)। তার জন্ম হয়েছিল এই উপমহাদেশে। মা ছিলেন এই দেশীয় রমনী; কিন্তু বাবা ছিলেন ইটালিয়ান অর্থাৎ তার শরীরে ইউরোপীয় রক্ত প্রবাহিত। এ কারণে তিনি ফিরিঙ্গি। ১৮২৬ সালে ডি রোজিও ৪র্থ শিক্ষক হিসেবে হিন্দু কলেজে যোগদান করেন। অপধফবসরপ অংংড়পরধঃরড়হ এবং ণড়ঁহম ইবহমধষ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৮৩১ সালে তিনি মারা যান।
প্রশ্ন : ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : ণড়ঁহম ইবহমধষ গোষ্ঠী হচ্ছে এমন এক যুব সম্প্রদায় যারা ছিল প্রগতিশীল চিন্তুার অধিকারী। ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর গুরু ছিলেন ডিরোজিও। তার সকল শিষ্য বা যুব সম্প্রদায় ইংরেজি শিক্ষা দীক্ষায় পরিপুষ্ট ছিলেন। যারা অনর্গল ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। ইয়ং বেঙ্গলের স্লোগান ছিল-
“আস্তিকতা হোক অথবা নাস্তিকতা হোক পূর্ব থেকে তা গ্রহণ না করা; নানা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে তা গ্রহণ বা বর্জন করা যেতে পারে।”
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর শিষ্যরা নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণ করেছেন। মদ পান করেছেন এবং অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। তারপরও তারাই সমাজে সবচেয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করেছে। ১৮৩০ সালে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশ করলেও ১৮৩১ সালে ডিরোজিও মারা গেলে এই সংগঠন ভেঙে যায়।
গীতি কবিতা, বিহারীলাল চক্রবর্তী ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
প্রশ্ন : গীতি কবিতা বলতে কী বোঝেন?
উত্তর : গীতি কবিতাকে ইংরেজিতে বলে খুৎরপ। যখন কোন কবি একান্ত তার মনের আবেগ, অনুভূতি, সুখ, দুঃখ, কষ্ট প্রভৃতি কবিতায় প্রকাশ করেন তখন তাকে গীতি কবিতা বলে।
প্রশ্ন : গীতি কবিতার উন্মেষ ও বিকাশ সম্বন্ধে লিখুন।
উত্তর : গীতি কবিতার ধারা সূচিত হয় আধুনিক যুগে। এর প্রবর্তক হলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। তিনিই সর্বপ্রথম হৃদয়ের আবেগের অনুভূতি নিয়ে নীরবে নিভৃতে রচনা করলেন গীতি কবিতা। গীতি কবিতার সূচনা হয় বিহারীলাল চক্রবর্তীর রচিত ‘সঙ্গীত শতক’ কাব্যের মাধ্যমে। তার অন্য গীতি কাব্যগুলো হচ্ছে-বঙ্গসুন্দরী, নিসর্গ সন্দর্শন এবং সাধের আসন। তাঁর শ্রেষ্ঠ গীতি কাব্য হচ্ছে ‘সারদা মঙ্গল’। গীতি কাব্যের ধারায় আরেক জন কবি হলেন সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার। তাঁর বিখ্যাত গীতি কাব্য হচ্ছে ‘মহিলা কাব্য’। গীতি কাব্যের ধারায় দেবেন্দ্রনাথ সেন রচনা করলেন, ‘অশোকগুচ্ছ’, ‘শেফালী গুচ্ছ’ -যা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে। অক্ষমকুমার বড়াল রচিত ‘প্রদীপ’, ‘কনকাঞ্জলি’, ‘ভুল’, ‘শঙ্খ’, ‘এষা’ প্রভৃতি উলেখযোগ্য গীতি কাব্য। দ্বিজেন্দ্র লাল নাট্যকার হলেও গীতিকাব্যে তার দখল ছিল অসাধারণ। তাঁর বিখ্যাত গীতিকাব্য হলো ‘আর্যগাথা’, ‘মন্দ্র’, ‘আলেখ্য’, ‘ত্রিবেণী’ প্রভৃতি।
গীতি কাব্যের ধারা পরিপূর্ণতা লাভ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে এসে।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথ বিহারীলাল চক্রবর্তীকে ‘ভোরের পাখি’ বলেছেন-এর তাৎপর্য লিখুন।
উত্তর : দিনের সূচনা হয় যেমন পাখির কূজন দিয়ে, তেমনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে পাখির কলরবের মতই গীতি কবিতার সূচনা হয় বিহারীলাল চক্রবর্তীর হাত ধরে। ভোরের পাখি যখন এসেছে গান ধরে, তখনো অধিকসংখ্যক লোক ঘুমে থাকে। অথচ তাঁর মিষ্টি মধুর সুর ভোরের জানান দেয়। তেমনি বিহারীলাল চক্রবর্তীর গীতি কবিতা অধিক রসজ্ঞ তৈরির পূর্বে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে গিয়েছেন। তার গীতি কবিতা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অমূল্য সংযোজন। এ জন্য রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘ভোরের পাখি’ বলেছেন।
প্রশ্ন : ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে কেন যুগ সন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়েছে? তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার নাম কী?
উত্তর : যুগ সন্ধিক্ষণের কবি হলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। আধুনিক যুগের কাব্যাকাশে তিনি একক কবি হিসেবে প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন। তার প্রতিভা ছিল প্রবল, ছিল না উচ্চ শিক্ষা। যে কারণে তিনি ছিলেন দোদুল্যমান। কখনও এতটুকু আধুনিক চিন্তা করলেও আবার তিনি পিছিয়ে এসেছেন। তাঁর মাঝে যেমন স্ববিরোধিতা আছে, তেমনি আছে মধ্য আধুনিক যুগের মিশ্র বৈশিষ্ট্য। যুগ সন্ধিক্ষণে যেমন থাকে মিশ্র বৈশিষ্ট্য সেই মিশ্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মধ্যে। যে কারণে তাকে যুগ সন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়েছে।
বাংলা ভাষায় প্রথম দৈনিক পত্রিকা হচ্ছে “দৈনিক সংবাদ প্রভাকর”। এটিকে যখন ১৯৩১ সালে প্রথম প্রকাশ করা হয় তখন এটি ছিল সাপ্তাহিক। পরে এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিকে ১৮৩৯ সালে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত করা হয়। এর সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।
প্রশ্ন : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।
উত্তর : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম বাংলা গদ্যে নতুনত্ব আনয়ন করেন। তাঁর গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপÑ
১.  তিনি গদ্যকে অনাবশ্যক সমাসাড়ম্বর থেকে মুক্ত করেন।
২.  গদ্যে ব্যবহৃত পদগুলোর মধ্যে অংশ যোজনার সুস্থ নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করেন।
৩. বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে সর্বপ্রকার ব্যবহার করেন।
৪. গদ্যের ভাষাকে সাবলীল ও শ্রুতিমধুর করেন।
৫. গদ্যের পদগুলোর মধ্যে ধ্বনি সামঞ্জস্য বিধান করেন।
৬. গদ্যের গতির মধ্যে একটি অনতিলক্ষ ছন্দস্রোত আবিষ্কার করেন।
৭. যথাযথ ব্যবহার ও সরল ভাষার আমদানি করে বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতা প্রদান করেন।
প্রশ্ন : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় কেন?
উত্তর : ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্য সাহিত্যে কিংবদন্তি প্রবাদ পুুরুষ। তিনি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা গদ্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। জ্ঞান সাধনায় তিনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী। সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁর প্রাণ ছিল অপরিসীম। ইংরেজিতেও তিনি বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর আগেও বাংলা গদ্য ছিল। কিন্তু গদ্যের ছন্দপ্রবাহ, ধ্বনিময়তা ও ভাষায় শব্দ ব্যবহারের যে নিপুণতা তা তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিদ্যাসাগরই প্রথম তা সম্পাদন করেন। তিনি যতিচিহ্ন ব্যবহার করে ভাষাকে বোধগম্য ও শ্রুতিমধুরতা দান করেন। ভাব অনুযায়ী ভাষার ব্যবহার করে বক্তব্য বিষয়কে করে তোলেন আকর্ষণীয়। এ জন্য তাঁকে বাংলা গদ্যেরজনক বলা হয়।
প্রশ্ন : বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লিখুন।
উত্তর : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিভার স্পর্শে বাংলা গদ্য বিকশিত হয়ে উঠে। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানসমূহÑ
ক. উপস্থাপন ও ভাষা শৈলী : বাংলা গদ্য সাহিত্যে তিনি সর্বপ্রথম সুশৃঙ্খলরূপে উপস্থাপন করে চমৎকার ভাষা শৈলীল মাধ্যমে সাহিত্য রচনা করেন।
খ. বিরাম চিহ্নের প্রচলন : বাংলা সাহিত্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইংরেজি সাহিত্যের অনুসরণে ১২টি বিরাম চিহ্নের প্রচলন করে একে সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।
গ. প্রমিত সাধু ভাষা রীতির প্রচলন : তিনিই সর্বপ্রথম সংস্কৃত শব্দমালা তৎসম শব্দ থেকে অধিক সংখ্যক শব্দ চয়ন করে বাংলা সাহিত্যে প্রমিত সাধু ভাষা রীতির প্রচলন করতে সক্ষম হন।
প্রশ্ন : বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারবিষয়ক গ্রন্থ রচনাবলীর নাম লিখুন।
উত্তর : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তৎকালীন সমাজ সংস্কারের ব্যাপারে সম্পৃক্ত ছিলেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর প্রবন্ধ ধর্মী গ্রন্থে। তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে- বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫), বহু বিবাহ রোহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার (১৮৭১)।
প্রশ্ন : বিদ্যাসাগরের স্কুল পাঠ্যবিষয়ক গ্রন্থগুলোর নাম লিখুন।
উত্তর : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত স্কুল পাঠ বিষয় গ্রন্থগুলো হলÑ সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমনিকা (১৮৫১), বর্ণ পরিচয় (১৮৫৫),
কথামালা (১৮৫৬), আখ্যান মঞ্জুরী (১৮৬৩) ও বোধোদয় (১৮৫১)।
প্রশ্ন : বিদ্যাসাগরের সাহিত্য কর্মকে প্রথমত কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর : বিদ্যাসাগরের সাহিত্য কর্মকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. অনুদিত সাহিত্য কর্ম
২. মৌলিক সাহিত্য কর্ম
অনুদিত সাহিত্য কর্ম : ১. বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭) সু-প্রসিদ্ধ ‘বৈতাল পচ্চিসী’র অনুবাদ।
২. শকুন্তলা (১৮৫৪)-কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ নাটকের অনুবাদ।



 

Show all comments
  • নাজমুল ইসলাম ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ১০:৫৩ পিএম says : 0
    খুবি ভাল লাগল ভাইয়া।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন