পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সম্মিলতি প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান এবং তার সহায়তা চান। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য নেওয়া মেগা প্রকল্পে জি-২০ নেতাদের সহায়তা চেয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য আমরা আরো কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি।
এসব প্রকল্পের জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এই বিষয়ে জি-২০ সহায়ক হবে বলে আমি আশা করি। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের’ (গেøাবাল সাউথ) উন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি তিনি আহবান জানান। জি-২০ জোটের সামনে ৬টি প্রস্তাব রেখে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপট) বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গেøাবাল সাউথের একটি দেশ এবং ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি-২০-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাই। আসুন আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।
টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রথমত তিনি বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন যা এসডিজি’র সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে। তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন। তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে। চতুর্থত, নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধন রচনার প্রয়োজন রয়েছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নেওয়ার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সমর্থন অত্যাবশ্যক। পঞ্চমত, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। বৈশ্বিক স¤প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন ভুলবেন না। ষষ্ঠত বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিংক-ট্যাংক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় পাঁচ দশক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি-২০ প্ল্যাটফর্মকে আরো অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি।’ তিনি ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট’ আহŸান করার এবং ‘মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ বিষয়ক উদ্বোধনী অধিবেশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের স্তম্ভ হিসেবে মানব উন্নয়নের প্রকৃত মূল্যে বিশ্বাস করে এবং এটা সরকারের নীতিতে প্রতিফলিত হয়। আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সহযোগিতায় মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আপনার (মোদির) জোরালো উদ্যোগে অবদান রাখতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সা¤প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা এবং খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যুক্ত করে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যে ভাষণ দেন তা উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য, মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক দায়িত্ব রয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আজো প্রাসঙ্গিক। এই চেতনাকে সামনে রেখে, আমরা মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে দ্রæত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রæত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে স্বীকৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে বাংলাদেশ জিডিপির দিক থেকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসি স্তর থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে। এটি সন্তোষজনক যে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম সেরা কোভিড প্রতিরোধী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরমার হিসেবে স্থান পেয়েছে।
আর্থিক এবং অন্যান্য প্রণোদনার জন্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ২৮টি প্যাকেজ সরাসরি ৭ কোটি ৩ লাখ লোক এবং ২ লাখ ১৩ হাজার সংস্থার কাছে পৌঁছেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে উন্নত ভৌত অবকাঠামো দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার আকাঙ্খা রাখি। তিনি বলেন, গত বছর তারা স্ব-অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করেছেন, যা জিডিপি বাড়াবে। কয়েক দিন আগে রাজধানী ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিস চালু হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ করবো, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
বাংলাদেশ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা খরচে ঘর এবং জীবিকার উপায় করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য আমরা আরো কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পের জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এই বিষয়ে জি-২০ সহায়ক হবে বলে আমি আশা করি। আমাদের আকাঙ্খা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক দেশে রূপান্তরিত করা এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু সহনশীল ব-দ্বীপ গড়ে তোলা। আমরা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করার প্রত্যাশা করছি।
আইডিএফ গেøাবাল অ্যাম্বাসেডর পদক নিলেন প্রধানমন্ত্রী
ডায়াবেটিস বিষয়ক আইডিএফ গেøাবাল অ্যাম্বাসেডর পদক ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমবারের মতো পর্তুগালের লিসবনে গত ৫ ডিসেম্বর সম্মানসূচক এ খেতাব দেওয়া হয়। পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তার পক্ষে খেতাব গ্রহণ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন এবং সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পদক ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করায় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে এই পদক দিলো আইডিএফ ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ আগস্ট ঢাকার গণভবনে আইডিএফ প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আখতার হুসেনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এই উপাধি গ্রহণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।