পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে এখন সর্বোত্রই আলোচনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ঢাকা আসছেন। তিনি ১৪ জানুয়ারি দু’দিনের সফরে আসছেন। তিনি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার, জ্বালানি, আইনের শাসন, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রমসহ অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী, বিভিন্ন ব্যাক্তি, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওয়াশিংটন থেকে গতকাল তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন। ১৪ থেকে ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করবেন। ডোনাল্ড লু’ বাংলাদেশ সফর নিয়ে সতর্ক কূটনীতিক মহল ও রাজনৈতিক দলগুলো। লু’ ঢাকায় এসে কি করেন, কি বলেন, কাদের সঙ্গে বৈঠক করে তা জানার জন্য সব মহল মুখিয়ে রয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকা সফরের আগে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। পিটার হাসের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় তার নখদর্পণে। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশে ‘কর্তৃত্বাবাদী শাসন’ চলছে। এ জন্য ওয়াশিংটনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। লু’ ঢাকা আসার আগে ‘ফের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা’ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশ বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতদের চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ফের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আশঙ্কা করছি না। অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নমনীয়তায় বোঝা যায় লু’র সফরকে কেন্দ্র করে প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করছে। উল্লেখ, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতাচ্যুতি ঘটলেও তিনি (ইমরান খান) ক্ষমতাচ্যুতির নেপথ্যে লু ছিলেন দাবি করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
গতকাল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু ভারত সফরকালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ফোরামে অংশ নেবেন। এছাড়াও তিনি ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিষয়ক সহযোগিতা কীভাবে আরো স¤প্রসারণ করা যায় সে নিয়ে ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশ সফরকালে মার্কিন অ্যাসিন্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি লু বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা স¤প্রসারণ করা বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানবেন।
ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর একের পর এক উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিলেও হঠাৎ করে তারা সুর নরম করেছেন। একাধিক সাবেক কূটনীতিক জানান, লু’র বাংলাদেশ সফর খুবই তৎপর্যপূর্ণ। এর আগে আরো কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ঢাকা সফর করেছেন। লু’ যে ঢাকা সফরের পর যে রিপোর্ট দেবেন সে অনুযায়ী বাইডেন প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ‘বৈশ্বিক জঙ্গী ও মৌলবাদ’ নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। আওয়ামী লীগ আগে ‘বিএনপি মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দেয় ধোঁয়া তুলে যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করেছিল। ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখায় দিল্লি আওয়ামী লীগ সরকারকে সহায়তাও করেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের চোখে বাংলাদেশকে দেখছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তারা কাজ করছে। দীর্ঘদিন থেকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরামর্শ দিচ্ছে। এসব নিয়েই হয়তো লু কথাবার্তা বলবেন। আর সরকারের পাশাপাশি তার সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকায় এলে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তিনি বুঝতে পারবেন।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এছাড়া চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে সরকার যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার কথা বলছে, এমন অবস্থায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির বাংলাদেশ সফর নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় ডোনার, সেখানে আমাদের প্রচুর রপ্তানি হয়, অন্যদিকে বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সফর উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশ বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতদের চিঠি প্রদান এবং সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা নিয়ে বক্তব্যের বিষয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশী প্রতিনিধিদের ডিল করতে নার্ভস ফিল করে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। কারণ তারা যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তখন তারা বিব্রত হন। কারণ গত ১৪ বছর তারা দেশ যেভাবে পরিচালনা করেছে, হত্যা, গুম করেছে সে বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেন না।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা কোন রাষ্ট্রের জন্যই কাম্য নয়। কারণ এতে দেশের ভাবমূর্তি বর্হিবিশ্বে ক্ষুণœ হয়। আমরাও চাই না বাংলাদেশ এমন কোন পরিস্থিতি পুনরায় আসুক। কারণ এর আগে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সরকার নানাভাবে তদবির করছে কিন্তু কাজ হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক যে, নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবর্হিভূত হত্যাকাÐ অনেকটাই কমে গেছে।
এক নজরে লু : ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে জানানো হয়, ডোনাল্ড লু ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি হিসেবে যোগদান করেন। এই পদে দায়িত্ব লাভের আগে তিনি কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে ২০১৮ থেকে ২০২১ এবং আলবেনিয়াতে ২০১৫-২০১৮ মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। আলবেনিয়াতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইবোলা রেসপন্স এর ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর হিসেবে পশ্চিম আফ্রিকাতে দায়িত্ব পালন করেন।
লু ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসেবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজ করছেন। তিনি ভারতে ডেপুটি চিফ অফ মিশন (ডিসিএম) (২০১০-২০১৩) ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (২০০৯-২০১০), আজারবাইজানে ডিসিএম (২০০৭-২০০৯) এবং কিরগিজস্তানে ডিসিএম (২০০৩-২০০৬) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কর্মজীবনের শুরুতে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর, ইউরোপীয় বিষয়ক ব্যুরো (২০০১-২০০৩), স্টেট সেক্রেটারির কার্যালয়ের অধীনে সদ্য স্বাধীন দেশগুলো বিষয়ক রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী (২০০০-২০০১), ভারতের নিউ দিল্লীতে পলিটিক্যাল অফিসার (১৯৯৭-২০০০), ভারতের নিউ দিল্লীতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী (১৯৯৬-১৯৯৭), জর্জিয়ার তিবিলিসিতে কনসুলার অফিসার (১৯৯৪-১৯৯৬) এবং পাকিস্তানের পেশোয়ারে পলিটিক্যাল অফিসার (১৯৯২-১৯৯৪) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৮-১৯৯০ সময়কালে পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিয়নে পিস কর্পস এর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হাতে খনন করা পানির ক‚প পুনরুদ্ধার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষাদান ও লেট্রিন নির্মাণে সহায়তা করেছেন।
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচ থেকে আগত। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি আলবেনিয়ান, রাশিয়ান, জর্জিয়ান, আজারবাইজানি, উর্দু, হিন্দি ও পশ্চিম আফ্রিকার ক্রিও ভাষা জানেন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।