Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে গোলের গুড়

গাছ সঙ্কটে বাগানের সাথে কমছে গাছির সংখ্যা

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

গুড়ের তৈরি পায়েস কিংবা মুখরোচক খাবার পছন্দ করে না এমন মানুষ কমই আছে। কিন্তু মিষ্টিতে সুগার থাকায় সুস্বাদু বাহারি রকম খাবার খেতে পারে না অনেকেই। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ লোনা ভ‚মিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে গোল বাগান। প্রকৃতির সৃষ্ট গোল বাগান থেকে আহরিত রস কিংবা গুড়ে সুগার কম থাকায় দিনে দিনে ক্রেতাদের কাছে এর কদর বেড়েছে কয়েকগুণ। উপক‚লীয় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিচ্ছে গোলগাছ। কিন্তু চাহিদা বাড়লেও ক্রমশই ধ্বংস করা হচ্ছে বাগান। ফলে বাগানের পাশাপাশি কমছে গাছির সংখ্যাও। গোল বাগান বিনষ্টের ফলে গুড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন অনেক গাছিও করেছেন পেশার পরিবর্তন। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাগান রক্ষা ও নদীর তীর কিংবা লোনা নদী-নালায় গোল বনায়নের দাবি গোলচাষী এবং গাছিদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বাগান থেকেই বছরের প্রায় ৪ মাস সময় ধরে দুই দশক রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা চলছে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবারের। শীতের শুরুতেই বিকালে গাছের ডগা কেটে হাড়ি পাতেন গাছিরা। রাতভর হাড়িতে জমা রস ভোরে সংগ্রহ করেন তারা। পরে চাতালে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। এসব গুড় গাছিরা বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। বিশেষ করে রোগাক্রান্ত মানুষের কাছে লবণাক্ত এই গুড়ের চাহিদা অনেক।

পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোশারেফ তালুকদার জানান, আমার ডায়াবেটিসের জন্য সব ধরনের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ করেছেন চিকিৎসক। তবে লবণাক্ত গোল গুড়ে সুগার কম থাকায় অমি মাঝে-মধ্যেই গোলের গুড় সীমিত খেতে পারি। আমার তাতে সমস্যা হয় না।
এদিকে এ গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্তে¡ও বাগান কমে যাওয়ায় কাঙ্খিত রস সংগ্রহ করতে পারছেন না গাছিরা। গুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গোলগাছ সংরক্ষণের দাবি কৃষি বিভাগেরও।

নীলগঞ্জ ইউপির নবীপুর গ্রামের গাছি পরিতোষ হাওলাদার জানান, উপজেলার নীলগঞ্জ, তেগাছিয়া, নবীপুর গ্রামের ২৫ জন কৃষক এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে গিয়ে অগ্রিম টাকা দিয়ে আসেন গুড়ের জন্য। কিন্তু ক্রমাগত বাগান ধংসের ফলে এখন ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছি না। তার দাবি, বেড়িবাঁধের বাইরে সরকারি খাস জমিতে গোল গাছ লাগিয়ে আমাদের দায়িত্ব দিলে রক্ষণাবেক্ষণসহ এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারতাম।

একই গ্রামের ৮০ বছর বয়সী শিল্পি রানী জানান, ৬০ বছর ধরে এ কাজ করছি। শুরুতে প্রতি ১০ থেকে ১৫ কলস রস পেতাম। এখন পাই ৮ কলস।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআর সাইফুল্লাহ জানান, গোলগাছ মানুষের ঘর নির্মাণসহ প্রকৃতি রক্ষায় একটি বড় ভ‚মিকা রাখে। এছাড়া গুড় থেকে বিশাল একটা অর্থ আয়ের পাশাপাশি হাজারো মানুষ এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। গোলবাগান রক্ষায় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। যাতে বাগান রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

পটুয়াখালী জেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোলবন সংরক্ষণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদীর তীরসহ লোনা ভ‚মিতে গোলচারা রোপণ করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ