Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইন সংশোধনের পর নাসিকে ক্ষমতাসীনদের প্রথম জয়

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : গত বার কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট দলীয় নেতাকে হারিয়ে নারায়ণগঞ্জের মেয়র হয়েছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী; এবার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির, তবে ফল হয়েছে একই।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনঃনির্বাচিত হলেন নৌকা প্রতীকের আইভী।
সুষ্ঠ ও গোলযোগহীন পরিবেশে অনুষ্ঠিত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পৌনে ৫ লাখ ভোটার তাদের নাগরিক সেবার জন্য ১৩ বছরের অভিজ্ঞ আইভীকেই রেখে দিলেন। চেয়ারম্যান থেকে মেয়র হওয়ার পথে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানকে মেলে ধরেছিলেন আইভী; এবার ভোটের প্রচারে উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ছিল তার।
অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে নবিন সাখাওয়াতের ডাক ছিল পরিবর্তন ঘটানোর; তার দল বিএনপি নারায়ণগঞ্জবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিল সরকারের ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার।
এক নগরে দুই প্রধান দলের ভোটের লড়াই নিয়ে সারাদেশে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার ফল ঘোষণা করলে দেখা যায় ৭৯ হাজার ৫৬৮ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী।
১৭৪টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। আইভী পুননির্বাচিত হলেও তার ভোট ৫ হাজার কমেছে। গতবার দোয়াত-কলম প্রতীকে তার ভোট ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট। তবে এবার ভোটের হারও গতবারের চেয়ে ৭ শতাংশ পয়েন্ট কম।
পাঁচ বছর আগে নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা একেএম শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র হয়েছিলেন আইভী। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর নারায়ণগঞ্জ দিয়েই প্রথম কোনো সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রতীকে ভোট হল এবং তাতে ক্ষমতাসীনদেরই জয় হল।
ভোটে জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইভী শহরের দেওভোগের বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, “এ বিজয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নামে উৎসর্গ করলাম।”
যারা আমার বিজয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের নিয়ে পথ চলতে চাই। একই সঙ্গে উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষা করতে চাই,” বলেন তিনি। গতবার হেরে যাওয়া শামীম ওসমান এবার প্রকাশ্য আইভীকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের অন্যদের সঙ্গে নিয়ে তার ‘ছোট বোন’ চলবেন বলে তিনি আশা করছেন।
ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা আর গোলযোগের পর নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ঘিরে ছিল অনেকের শঙ্কা; সাত খুনের ঘটনাসহ নানা কারণে আলোচিত এই নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ছিল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্র। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনভর ভোটগ্রহণের সময় ভোটারদের মধ্যে কোনো অস্বস্তি দেখা যায়নি; প্রার্থীদের কণ্ঠেও শোনা যায়নি অন্য সব ভোটের মতো অভিযোগের সুর।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত ভোটে ১৭৪ কেন্দ্রের মধ্যে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে মাত্র তিনজনকে ৮ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত; ঘটেনি কোনো মারামারি; হয়নি কোনো কেন্দ্রে ভোট স্থগিত। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রার্থী, দল, ভোটার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের সহায়তা-এ পাঁচটি একসূত্রে কাজ করেছে বলে নারায়ণগঞ্জে ভোট সুষ্ঠ হয়েছে।
ভোটগ্রহণের পর সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভোট বাহ্িযকভাবে সুষ্ঠ হলেও ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ শঙ্কা রয়েছে তাদের।
ভোট চলাকালে তাদের দলীয় প্রার্থী সাখাওয়াতের মুখে শোনা গেছে শুধু ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে কথা বলতে। তার ধারণা, প্রভাব বিস্তারের কারণে অনেকে ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হননি। তবে ফল যখন প্রায় স্পষ্ট, তখন সাখাওয়াত বলেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠ হলেও গণনায় ত্রুটি ছিল।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার। এই নির্বাচন সেভাবেই হয়েছে।
ফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ভালো নির্বাচন। সারা দেশে একটি মডেল নির্বাচন হিসাবে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের রেকর্ড অনুসারে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আচরণবিধি সবচেয়ে কম লঙ্ঘন হয়েছে এই নির্বাচনে। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন পুরুষ; ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন নারী। একজন মেয়রের পাশাপাশি ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেন তারা।
গতবার ভোটের হার ছিল ৬৯ শতাংশ। তবে এবার তা কমে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়ায় বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান। ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬ জন ভোট দিয়েছেন এই নির্বাচনে; এর মধ্যে বৈধ ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫টি ভোট, বাতিল হয় ৭ হাজার ৯৭১ ভোট।
মেয়র পদে দুই প্রধান প্রার্থীর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পান হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মাছুম বিল্লাহ ১৩৯১৪টি। কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল পেয়েছেন ৬৭৪ ভোট; মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল হক প্রাপ্ত ভোটসংখ্যা ৯১০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ