Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেব

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা মজুতদারি, কালোবাজারি ও এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেবো। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবো। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবো।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে গতকাল নিজ দলের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে খাদ্যের দারুণ অভাব দেখা দেবে, যার কিছু আভাস আমরা পাচ্ছি। তবে আমাদের খাদ্য চাহিদা যেন আমাদের নিজেদের আওতায় রাখতে পারি সেই উদোগ আমরা নিয়েছি। আমি উৎপাদন বাড়াতে, কোনো জমি যাতে পড়ে না থাকে, যে যা পারে উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানুষ সাড়া দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোজা বা উৎসবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিশ্বের কোথাও উৎসবের সময় জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা হয় না। কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করতে চায়।

আহসানুল ইসলাম টিটোর সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি মজুদদারি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা চাই রোজার মাসে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। কেউ মজুদ করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তামাক চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া সম্পর্কে জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারির সম্পূরক এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন চাষ করে তখন অর্থকরি ফসলের দিকে দৃষ্টি দেয়। এ কথা ঠিক আমাদের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আমার এলাকার কথাই বলি, সেখানে অনেক অনাবাদি জমি আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এসব জমি চাষের উপযোগী করার। ১০ হাজার একর জমি আবাদ করতে পারবো, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। যেটা চাষ হচ্ছে সেটা বন্ধ করার থেকে যেটা অনাবাদি পড়ে আছে সেটা আবাদের চেষ্টা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের মতো কোন শক্তি তৈরি এখনো বাংলাদেশে হয়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে এদেশের মাটি ও মানুষের কাছ থেকে। কাজেই আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত আছে। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়াসহ অনেকেই চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে। কিন্তু পারেননি। পারবেও না। আওয়ামী লীগে টিকে আছে-থাকবে। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন দুর্নীতি বিষয়ে মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে কোন সরকারি বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউ। এটা আওয়ামী লীগ সরকারই করতে পেরেছে। আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে আমি আমার প্রশ্নকর্তাকে চ্যালেঞ্জ করছি কোথায়, কখন, কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে সেই কথাটা তাকে এখানে (সংসদে) স্পষ্ট বলতে হবে। তার জবাব আমি এখানে দেব। একটি কথা আমি এখানে স্পষ্ট বলতে চাই ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। সেখানে কি কোন দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয় নাই। তারা প্রমাণ করতে পারে নাই। এটা শুধু আমার কথা না। কানাডার ফেডারেল কোর্টে যে মামলা হয় সেই রায়ে বলা হয়েছে সকল অভিযোগে মিথ্যা, কোন অভিযোগই সত্য না। সবগুলোই ভুয়া। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে এরা কিভাবে বলবে দুর্নীতি হচ্ছে? যদি দুর্নীতি হত তাহলে এত অল্প সময়ে ইতিমধ্যে এত বড় বড় প্রজেক্ট এর কাজ শেষ হতো কোনদিন? এর আগে কখনও হয়েছে? তিনি বলেন, প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। তার একটি সেকেন্ড হোম রয়েছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ইনফ্লেশন ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং প্রতিটি বিল পরীক্ষা করা হয়। যে নির্দেশনা তার চাইতে এক ফোঁটা বেশি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, ফাইন করা হয়। বাংলাদেশে এখনো সে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।

বিএনপির জামাতের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। দিনের পর দিন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলতে পারত না। গ্যাসের জন্য হাহাকার ছিল। আমরা এসে এসব সমস্যার সমাধান করি। সে অনুযায়ী আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি এরপর যারা বেশি বলবেন তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও সংসদে হুমকি দেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটোর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ কারণে রাশিয়ার উপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে জ্বালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এর প্রেক্ষিতে সরকারকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক ও সচল রাখতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ