পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমরা যখন কোনো (উন্নয়ন) কাজের জন্য যাই তখন চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমস্ত প্রকল্প শেষ করেছি। শুধু পদ্মা সেতু নয়, মেট্রোরেল নির্মাণ করতে গিয়েও বাধা এসেছিল।মেট্রোরেলের জন্য কমলাপুর স্টেশন ভাঙার প্রস্তাব মেনে নেইনি। পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়েই শুধু চ্যালেঞ্জে পড়িনি, মেট্রোরেল নির্মাণ করতে গিয়েও বিপদে পড়েছি। প্রত্যেক কাজে বাধা দেওয়া কিছু মানুষের চরিত্র। মেট্রোরেলে সবাই যেন সার্বিক যত্ন নিয়ে ব্যবহার করেন সে জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে মন্ত্রিসভায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ঋণ প্রাপ্তি ও পণ্য রপ্তানিতে কৃষি পণ্যের মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে শিল্পপণ্য থেকে পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথম এবং বর্তমান সরকারের ১০৮তম মন্ত্রিসভা বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো.মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেট্রোরেল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত করার কথা ছিল। সেটাকে আমি টেনে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত করতে বলেছি। এয়ারপোর্টের পাশে যে রেলস্টেশনটা, সেখান থেকে এয়ারপোর্ট যেতে একটা আন্ডারপাস তৈরি করে দিচ্ছি। এটি এ কারণে করা হয়েছে, যাতে হজক্যাম্প থেকে হাজিরা সহজে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারেন। সাধারণ যাত্রীরাও যেন যেতে পারেন। আসা যাওয়ার সুবিধার জন্য যা করা দরকার সেগুলো করা হবে। যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলে যারা চড়ছেন তারা যেন নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন। যেখানে সেখানে যেন ময়লা ফেলা না হয়। যেহেতু এটি (মেট্রোরেল) আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সেহেতু ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্তক থাকতে হবে। এটা যেহেতু ডিজিটাল পরিবহন, সেহেতু নিয়মগুলো মেনে চলবেন, তাড়াহুড়া করার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তিনি বলেন, আমরা যখন কোনো (উন্নয়ন) কাজের জন্য যাই তখন চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমস্ত প্রকল্প শেষ করেছি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মেট্রোরেল প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এমআরটি রুটটি বিজয় সরণির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য নকশা করা হয়েছিল। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা যদি এটির সঙ্গে চলতাম তবে আমাদের তেজগাঁও বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দিতে হতো, যেখানে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। আমি সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলাম।তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের বন্যায় কুর্মিটোলায় ঢাকা বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব ত্রাণ তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয় সরণিতে নভোথিয়েটারের গম্বুজটির মূল নকশা থেকে অনেক বেশি উঁচু ছিল। আমরা সেই উচ্চতা কমিয়েছি। যদি উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুটের বেশি হয়, তবে এটি বিমানবন্দর ফানেলের (তেজগাঁও বিমানবন্দরের) অধীনে আসবে। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট সম্প্রসারণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খামার বাড়ি এলাকা ব্যবহার করে নতুন রুট প্রস্তাব করেছি। সেই সময়, মেট্রোরেলের বাঁক ও ও অবতরণের জায়গার জন্য কমলাপুর স্টেশন ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছেন, এতো বড় ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙে আরেকটি নির্মাণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কীভাবে আমরা (কমলাপুর) স্টেশনটি অক্ষত রেখে এগিয়ে যেতে পারি। প্রয়োজনে মেট্রো রেল স্টেশনের ওপর দিয়ে যাবে বা বাঁক নেয়ার জন্য অন্য জায়গা খুঁজবো। তখন এটি সেভাবে করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল এবং বলেছিল যে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশকে ধ্বংস করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম যে মেট্রোরেলের কারণে কোনও ঝামেলা হবে না। কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি কোণ দিয়ে যাবে।’ হলি আর্টিজান হামলার পর এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ওই হামলায় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সাত জাপানি নাগরিক নিহত হয়। তিনি বলেন, সেই সময়ে সমস্ত জাপানিরা তাদের স্বদেশে ফিরে গিয়েছিল। আমি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে সমবেদনা জানিয়েছিলাম। জাপান সফরে গিয়ে সাত জন নিহত কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরে কোভিড মহামারি চলাকালে প্রকল্পটি আবারো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই সময়ে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করে কাজটি ধীরে ধীরে এগিয়েছিল। মেট্রোরেল সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি সতর্কতা ও মননশীলতার সঙ্গে ব্যবহারের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমি সবাইকে মেট্রোরেলকে সর্বোচ্চ যত্ন সহকারে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করবো। কারণ এটি সমগ্র দেশ এবং জনগণের সম্পদ। যাত্রী ও হজযাত্রীদের সুবিধার্থে বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য সরকার একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপনারা জানেন গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে মানুষের বিপুল আগ্রহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা যেন এটা প্রচার করি ব্যবহারে সচেতন হতে। সার্বিক যত্ন নিয়ে যেন আমরা ব্যবহার করি, সে বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টার পর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে নামফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে উত্তরা পৌঁছান তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করে মেট্রোরেল। সীমিত পরিসরে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে। বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করার পর মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর ফানুস এসে পড়ায় ১ জানুয়ারি দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সীমিত পরিসরে চলাচলের মাধ্যমে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনে মেট্রোরেল থেকে ৮৮ লাখ টাকা আয় হয়েছে। আর যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ৯০ হাজার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বর্তমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পাটজাত পণ্য ও পাটের আঁশের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি এখানে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটিকে কাজে লাগেতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এখন থেকে পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য করতে হবে।
মাহবুব হোসেন, এতদিন এটা শিল্প পন্য হিসেবে ছিল কৃষিপণ্য ছিল না। অনেক দিন ধরেই পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুপারিশ ও দাবি জানানো হচ্ছিল। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, এটাকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য করা হবে। পাশাপাশি সে অনুযায়ী পাট খাত কৃষির সব সুযোগ সুবিধা পাবে। পাট তাহলে এতো দিন কী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতো- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাট উৎপাদনের যে প্রক্রিয়া ছিল, অনেক ক্ষেত্রে শিল্পজাত পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পাট উৎপাদনে উৎসাহ যাতে বেশি দেওয়া যায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন। পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হলে কৃষক ও পাট খাত কীভাবে উপকৃত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পাট চাষিরা কৃষি ঋণের মতো ঋণ পাবেন। রপ্তানি খাতের সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী আজকে দৃঢ়ভাবে এটি বাস্তবায়নের জন্য বলেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।