Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নওগাঁ রাণীনগরে এক কৃষকের বাজিমাত

গাড়ল খামারে উপজেলায় নতুন স্বপ্ন

এমদাদুল হক সুমন, নওগাঁ থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম


উত্তরের জেলা নওগাঁর রাণীনগরের মো. আবদুল মান্নান চাকরির পিছনে ছুটেননি। চাকরির জন্যে ঘুরে ঘুরে সময় নষ্ট করলে সে সময় কখনোই ফিরে আসে না। এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। পাশাপাশি বেকারদেরও কর্মসংস্থান হয়। এমন চিন্তা থেকেই তিনি গাড়লের খামার করার উদ্যোগ নেন।
ছয় বছর আগে ২০১৭ সালে উপজেলার মালশন গ্রামের মালতিপুকুর নামক স্থানে ১৭ বিঘা জমিতে আমিন হাসান অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে এক সমন্বিত খামার গড়ে তোলেন। খামারের প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে গাড়ল। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মান্নানের খামারে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭৫টি গাড়ল রয়েছে।
গাড়ল দিয়ে শুরু করলেও খামারের যুক্ত হয়েছে অনেক কিছু। এর মধ্যে রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণ, দেশিয় হাঁস-মুরগী, ছাগল পালন মাছ চাষ। এর বাইরে আছে ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বাগান। বর্তমানে মান্নানের খামারে ১২ জন বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
গাড়ল দেখতে অনেকটা ভেড়ার মতো এবং জীবনচক্রও একই। তবে ভেড়ার চেয়ে আকারে বেশ বড়। গোশতের পরিমাণও ভেড়ার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। মান্নানকে দেখে বর্তমানে উপজেলার অনেকে গাড়ল পালনের দিকে ঝুঁঁকেছেন। প্রতিদিনই উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে গাড়লের খামার দেখেন। সেই সাথে মান্নানের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নেন।
ইতিমেধ্যই মান্নানকে দেখে ওই গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে ছোট-বড় ১৬টি নতুন খামার গড়ে উঠেছে। এ সব খামারে কেউ গাড়ল, গরু, ছাগল, মাছ এবং দেশিয় প্রজাতির হাঁস-মুরগি পালন করছেন। মান্নান জানান, গাড়লের খামার করে প্রথম দিকে লোকসানই হয়েছে। তবে এখন অত্যন্ত লাভজনক একটি খাতে পরিণত হয়েছে। ভেড়াগোত্রীয় গাড়লের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। এখানকার খামারিদের কাছ থেকে গাড়লের বাচ্চা কিনে নিয়ে নতুন নতুন খামার গড়ে তুলছেন অনেকে।
আকার অনুযায়ী শিশু গাড়লের প্রতিটি চার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়াও গোশতের চাহিদার জন্য বিক্রি হয় বড় বড় গাড়ল। গোশত বিক্রির উপযুক্ত গাড়লের চেয়ে বাচ্চা বিক্রি লাভজনক। বর্তমানে স্থানীয় পশু হাটে গাড়ল বিক্রি হয়। তবে বাচ্চা গাড়ল বিক্রি হয় খামার থেকেই। এতে খামারিরা স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
মান্নান বলেন, আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টির ইচ্ছে থেকেই গাড়লের খামার গড়ে তোলা। চাকরির পেছনে না ছুটে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া, দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই খামার।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কামরুন নাহার ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলায় একমাত্র মান্নানই বাণিজ্যিক ভাবে গাড়লের খামার করেছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে মান্নানকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আরো সহযোগিতা পেলে খামারকে সম্প্রসারিত করতে মান্নানের অনেক সহজ হতো। দেশে ভেড়ার উন্নত জাত নিয়ে কোন গবেষণা কিংবা প্রকল্প নেই। তাই চাষিদের এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পুরো উপজেলায় গাড়ল ভেড়ার জাত ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জাত উন্নয়ন ও পালন সম্পর্কে আগ্রহী খামারি কিংবা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

 

 



 

Show all comments
  • Ferdus Ahmed Prodhan ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪০ এএম says : 0
    নসিবে থাকলে তো লাফাইতে লাফাইতে আসবে
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪১ এএম says : 0
    অণ্যদের শেখা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Saharies Khan ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪০ এএম says : 0
    অনেক অনেক ভালো নিউজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Aman Ullah Talukder ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:৪৭ এএম says : 0
    খবরটি নিঃসন্দেহে আসাব্যঞ্জক, বিশেষ করে বেকারদের জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ