পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে পরিবহন খাতে চরম নৈরাজ্য চলছে। সড়কে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহনের ঢল। বিভিন্ন সংগঠনের নামে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে নেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও।
মহানগরীতে নেই কোনো স্থায়ী বাস ও ট্রাক টার্মিনাল। যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করা হচ্ছে। ফলে নগরজুড়ে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। এসব অব্যবস্থার শিকার যাত্রীরা। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের।
পরিবহন ভাড়াতেও চলছে নৈরাজ্য। পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় এতে নৈরাজ্য কমার বদলে আরো বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী যানবাহনের বিরাট একটা অংশ ফিটনেসবিহীন। লক্কড়-ঝক্কড় বাস-মিনিবাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। আছে অবৈধ বাস, মিনিবাস, টেম্পো ও হিউম্যান হলার। তের হাজার বৈধ অটোরিকশার সাথে আরো অন্তত ৫ হাজার অবৈধ অটোরিকশা রাস্তায় চলছে। ব্যাটারিচালিত টমটম চলাচল নিষিদ্ধ হলেও মহানগরীর অনেক এলাকার সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন।
রাস্তায় চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাও। নগরীতে বৈধ রিকশার সংখ্যা প্রায় এক লাখ হলেও রাস্তায় চলছে প্রায় আড়াই লাখ রিকশা। এসব অবৈধ রিকশার জোয়ারে নগরীতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। বিভিন্ন সংগঠনের নামে চলছে অবৈধ যানবাহন। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারি দলের প্রভাবশালীরা। ফলে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ যানবাহন রাস্তায় চলছে।
টমটম, অবৈধ অটোরিকশাসহ বেশিরভাগ অবৈধ যানবাহন নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করছে। এসব চাঁদার ভাগ পাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, মাস্তান ও পুলিশ। মূলত তাদের ম্যানেজ করেই চলছে এসব অবৈধ যানবাহন। শহরতলীর প্রায় প্রতিটি সড়কে টমটম, রেজিস্ট্রেশনবিহীন টেম্পো ও অটোরিকশার দাপট দেখা যায়।
মহানগরীর বাইরে মহাসড়কে হালকা যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও গণহারে চলছে এসব যানবাহন। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই রাস্তায় নেমেছে এসব যানবাহন। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও মহাসড়কে হালকা যানবাহনের দাপট আগের মতোই আছে। হালকা যানবাহনের ভারে মহাসড়কে তীব্র যানজট ও নিত্য দুর্ঘটনা ঘটছে।
মহাগরীতে স্থায়ী কোনো বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নেই। দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বহু সিদ্ধান্তের পরও চট্টগ্রামে আন্তঃজেলা বাস ও কোচের জন্য কোনো টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি ট্রাক ও প্রাইম মুভার ট্রেইলর টার্মিনাল। চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল পরিবহন করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্যাংকলরির জন্য একটি টার্মিনাল নির্র্মাণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসির সাথে চুক্তি হলেও টার্মিনাল হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা জানান, বারবার দাবি জানানোর পরও মহানগরীর বিভিন্ন উপকণ্ঠে ও উপজেলা সদরে বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও ট্যাংকলরি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়নি। ফেডারেশনের নেতা আবদুস ছবুর বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর পার হয়েছে। কত সরকার এসেছে, মন্ত্রী এসেছে, মন্ত্রীরা উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলছেন। অথচ চট্টগ্রামে টার্মিনাল হয়নি। টার্মিনাল না থাকায় নগরীতে প্রতিদিন শত শত যানবাহনের বিরুদ্ধে নো পার্কিং মামলা দেয়া হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। পুলিশের পকেট ভরছে, কিন্তু ছোট-বড় গাড়ির জন্য পার্কিং স্পট নির্ধারণ করা হচ্ছে না।
পুলিশের বিরুদ্ধে যত্রযত্র যানবাহনের কাগজপত্র চেকিং, ওভারলোড, ওভার স্পিড, ওভারটেকসহ নানা অজুহাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা বলছেন, পুলিশকে এক হাজার টাকা চাঁদা না দিলে ৫ হাজার টাকার মামলা ঠুকে দেয়া হচ্ছে। আছে রিকুইজিশনের নামে বাণিজ্য। কর্ণফুলী সেতুর দুই প্রান্তসহ নগরীর প্রতিটি প্রবেশপথে যানবাহনের তল্লাশির নামে যাত্রী হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পেতে বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পো মালিকেরা পুলিশকে নিয়মিত বখশিস দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘টার্গেট সিস্টেম’। এক সময় এটি টোকেন ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল। নগরীর ট্রাফিক বিভাগ প্রতিদিন কয়েকশ’ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, এর চেয়ে বেশি টাকা পুলিশের পকেটে যাচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এবং মহাসড়কে নানা নামে চলছে রেপরোয়া চাঁদাবাজি। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বিশেষ করে সরকারদলীয় শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকা অবৈধ টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড বসিয়েও চলছে চাঁদাবাজি।
নগরীতে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, টেম্পো, হিউম্যানহলার ও অটোরিকশা এবং টমটমের জন্য নেই কোনো টার্মিনাল। বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দখল করে এসব যানবাহনের জন্য স্ট্যান্ড নির্ধারণ করে চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো এলাকায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় অবৈধ টেম্পোস্ট্যান্ড নিয়ে সশস্ত্র সংঘাতে জড়ায় ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু সে অনুপাতে গণপরিবহনের ভাড়া কমেনি। পণ্য পরিবহন ভাড়াও আগের মতো আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরো বাড়ানো হয়েছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্যবাহী গাড়িতে দফায় দফায় চাঁদাবাজি করা হয়। মহাসড়কে কয়েক দফা চাঁদা পরিশোধ করে মহানগরীতে প্রবেশের সময় একাধিক পয়েন্টে চাঁদা দিতে হচ্ছে।
এসব চাঁদার টাকা পরিবহন ভাড়ার সাথে সমন্বয় করায় পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যে। বগুড়া, কুমিল্লা ও সীতাকু- থেকে প্রতিদিন সবজিবাহী শত শত ট্রাক নগরীতে আসছে। কয়েকজন ট্রাকচালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের একাধিক পয়েন্টে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এরপর শহরের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে নির্ধারিত বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত আরো কয়েক দফায় চাঁদার টাকা গুনতে হচ্ছে।
নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের চৈতন্যগলি এবং কর্ণফুলী সেতু পার হয়ে মেরিনার্স রোডে প্রবেশ করতেই পণ্যবাহী ট্রাকে হামলে পড়ছে চাঁদাবাজরা। ফলমূলবাহী যানবাহনেও এভাবে চাঁদাবাজি চলছে। আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহনেও চাঁদাবাজি চলছে নিয়মিত।
পুলিশের হয়রানি, বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ২৯ নভেম্বর বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় লাগাতার ধর্মঘট শুরু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তাদের সাথে যোগ দেয় আরো কয়েকটি সংগঠন। তবে দিনভর ধর্মঘট চলার পর বিকেলে পুলিশ তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়। কথা ছিল ৪ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনার ও সিটি মেয়রের সাথে তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সে বৈঠক এখনও হয়নি।
নগরীতে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ উল হক বলেন, নগরীতে পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত সড়ক নেই, নেই নির্ধারিত টার্মিনালও। এসব কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত অভিযান চলছে, জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। বিরাজমান সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক বিভাগ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিডিএর সাথে সমন্বয় করে টার্মিনাল নির্মাণসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।