পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
পুঁজিবাজারে চালু হওয়া অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড বা এটিবির সুফল এখনই পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি বলেছেন, কোনো কিছুর সূচনা শুরু হলে এর ফলাফল সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যায় না। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বুধবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথমবারের মতো বিকল্প লেনদেনব্যবস্থা বা এটিবি চালু হয়। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার ও প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের গ্রিন বন্ডের লেনদেনের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটিবির সুফল এখনই পাওয়া যাবে না। এর সুফল পাওয়া যাবে আরও অনেক পরে। কোনো কিছু তৈরি করলে তার ফলাফল আসতে দেরি হয়। পুঁজিবাজারের মন্দাভাব নিয়ে তিনি বলেন, একজন মানুষের দেহের একটা অঙ্গ না থাকলে আমরা বলি শারীরিক অক্ষম, ঠিক তেমনই পুঁজিবাজারে যা যা মিসিং আছে, সেগুলো না থাকায় মার্কেটও ঠিকমতো কাজ করছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী দাবি করে বিএসইসি প্রধান বলেন, বিএসইসির ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন প্লান নিয়ে আসছে। এগুলো দেখে আইএমএফ অবাক হয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে যেখানে অর্থনীতি মন্দাবস্থার দিকে যাওয়ার কথা, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে। কীভাবে আমরা অর্থনীতিকে বৃদ্ধি করতে পারি এটা ভেবে সবাই অবাক হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যখন এটিবির জন্য আইনটা তৈরি করেছি তখন বৈশ্বিক রিস্কগুলোর কথা মাথায় রেখেছি। যেহেতু এগুলোর দায়িত্বে ডিএসই থাকবে সেহেতু তাদের দায়িত্বটা থাকবে অনেক বেশি। আবার ব্যবসায়ীরাও যেন নিরুৎসাহিত না হয় এটাও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, এটিবিতে ৫০০ কোটি টাকা দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। তাই আরও বেশি বেশি প্রতিষ্ঠান যেন এটিবিতে আসে সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। আপনারা সবাই আস্থা রাখবেন, আস্থা হারানোর কোনো কারণ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, অনেকগুলো পণ্য এসেছে ইতোমধ্যে। সুকুক বন্ড, এসএমই, সরকারি বন্ড আমরা নিয়ে এসেছি। এগুলো এখন কাজ না করলেও অদূর ভবিষ্যতে এগুলোর ফল পাওয়া যাবে। এগুলো যখন কথা বলা শুরু করবে তখন পুঁজিবাজার অনেকদূর যাবে। তাই আমার এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে একটি কবিতার লাইন-মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।
প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব, এই চিন্তা থেকেই সবাই এখানে এসেছি। এই দিনটি আরও সুন্দর হবে এবং ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর হবে।
প্রথম দিনে এটিবিতে লেনদেন চিত্র
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ৫০০ শেয়ার ১৫ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। শেয়ারটির লেনদেন শুরু হয় ১৪ টাকা ৯০ পয়সায়। এরপর ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ দাম বেড়ে ১৫ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার। লংকাবাংলার সিকিউরিটিজের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ২৬৯ কোটি ৩০ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সংখ্যা ২৬ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার ৩৩২টি। এর মধ্যে ৯২ দশমিক ৪১ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ও বাকি ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
কারা এটিবিতে লেনদেন করতে পারবে
অতালিকাভুক্ত ও তালিকাচ্যুত সিকিউরিটিজসহ করপোরেট বন্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এটিবিতে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। মূলত এখানে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ প্লাটফর্মে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারবেন। এটিবিতে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর কোনো ন্যূনতম মূলধনী সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি। যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত যেকোনো অতালিকাভুক্ত কোম্পানি এ প্লাটফর্মে শেয়ার লেনদেনের সুযোগ পাবে। তবে এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না। এখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে টি+২ নিষ্পত্তি হবে। বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধাও পাওয়া যাবে। এ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোকে বছরে একবার মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ডিএসই জানিয়েছে, এটিবিতে ৭৬টি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, ১৮টি ইকুইটি সিকিউরিটিজ ও ১৫টি ডেট সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এটিবি চালু হওয়ায় পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা যে কোনো কোম্পানি এটিবিতে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে অবশ্যই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তিত হতে হবে।
পুঁজিবাজারের বাইরে দুই হাজারেরও বেশি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি চাইলে সরাসরি এটিবিতে নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। এটিবি চালু হওয়ায় পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানির উদ্যোক্তারা খুব সহজে মালিকানা পরিবর্তন বা শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন। আগে এ কাজটি করতে অনেক খরচ হতো। এখন তা কম খরচেই করা যাবে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলো সরাসরি শেয়ার লেনদেনের সুযোগ পাওয়ায় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মূলধন দিতে উৎসাহিত হবে। কেননা এটিবিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোর বিনিয়োগ করা শেয়ার হস্তান্তরের অবারিত সুযাগ তৈরি হবে।
এটিবিতে যেসব সুবিধা
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত যেকোনো কোম্পানি তাদের শেয়ার হস্তান্তর করতে গেলে ট্রান্সফার ফি ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটসহ বড় ধরনের খরচের বোঝা বহন করতে হয়। এ ছাড়া ১১৭ ফরম পূরণ করতে আরজেএসসিতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। এটিবিতে এলে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সামান্য কমিশনেই শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে। বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না। উদ্যোক্তারাও তাদের কোম্পানির বাজারমূল্য সম্পর্কে ধারণা পাবে। এ ছাড়া কোম্পানির পরিচিতি, সুনাম বা ব্র্যান্ড ভেল্যুও বাড়বে। এমনকি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে এখান থেকে রাইট শেয়ার কিংবা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার ছেড়ে তাদের মূলধন বাড়াতেও পারবে।
কীভাবে তালিকাভুক্তি
এটিবিতে তালিকাভুক্তি অনেকটা সরাসরি বা ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মতো। নতুন শেয়ার না ছেড়ে উদ্যোক্তার হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্তি নেয়া যাবে। শেয়ারের মূল্যও হবে বাজারভিত্তিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।