পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ্যাই রিকশা যাবে? প্রস্তাবমাত্র মুখ ফেরালেন ত্রিশোর্ধ্ব তরুণ। মাথা-কান পাতলা মাফলারে ঢাকা। মুখে মাস্ক, পরনে প্যান্ট। ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা জজকোর্ট। ভাড়া না হেঁকেই ইশারায় বললেন, ওঠেন। দয়াগঞ্জ মোড়ে এসেই ডানে মোড় নিয়ে রিকশা ছোটে মতিঝিলের দিক। কী ব্যাপার! অবাক হন রিকশারোহী। কোর্ট-কাচারি তো সোজা রাস্তায়! মাস্কটা কিঞ্চিৎ নামিয়ে চালক বললেন, আমি নতুন। ‘ঢাকায় কবে আসছ?’। ১৩ দিন স্যার। জবাব রিকশা চালকের। কথায় কথা বাড়ে। ২০ মিনিটের রিকশা-যাত্রায় যা জানা গেলÑ সে মোটামুটি পড়ালেখা জানেন। ডিগ্রি পরীক্ষাটা দিতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে জামালপুর, সরিষাবাড়িতে খুলেছিলেন মুদি দোকান। পুঁজির অভাবে বাড়াতে পারেনি দোকানটি। কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে ঋণ নিয়েছিল দোকানে মাল ওঠাতে। সেই কিস্তি টানতে হচ্ছে। জিনিসপাতির দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন মাল ওঠাতে পারেননি। দোকানে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে বসিয়ে নিজে ঢাকা চলে এসেছেন বাড়তি রোজগারের আশায়। চাকরি লাভের চেষ্টা চালিয়ে ধরেছেন রিকশা। এলাকার লোকজন চিনে ফেলতে পারেÑ এ আশঙ্কায় চেহারা আড়াল করতেই জড়িয়েছেন মাফলার-মাস্ক। নাম তার আয়নাল সিকদার। রিকশাওয়ালা আয়নাল জীবিকান্বেষণে রাজধানীতে ভিড় জমানো মানুষদের প্রতিভা মাত্র। অর্থনীতিবিদরা হয়তো এটিকে সাম্প্রতিক ‘মূল্যস্ফীতির অভিঘাত’ হিসেবেই অভিহিত করবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-প্রতিক্রিয়ার সংজ্ঞায় ফেলে যথার্থতা আরোপ করবেন আয়নালের দুঃসহ কষ্ট-কথায়। কিন্তু আসল কথাটি হচ্ছে, সংসার নামক রিকশার ওজন এতোই ভারি হয়েছে যে, আয়নালদের পক্ষে সেটি আর টানা সম্ভব হচ্ছে না। জীবনযাত্রার ব্যায় বহনে আর পেরে উঠছেন না তারা। ফলে রিকশার প্যাডেল শুধু নয়Ñ এর চেয়েও কষ্টসাধ্য যেকোনো কাজ করতেও প্রস্তুত তারা। এ কারণেই দলে দলে ঢাকায় প্রবেশ করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। ভাগ্যান্বেষণে ছুটে আসা এসব মানুষ। প্রথমত: আশ্রয় খোঁজে আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনের বাসায়। পরে স্বল্প খরচে ওঠেন মেসবাসায়। রাজধানীর মুগদা, বাসাবো, কাজলা, শনিআখড়া, কোনাপাড়া, ডেমরা, মুরাদপুর রোড, জুরাইন, আলম মার্কেট, কেরাণীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকার মেসবাসায় উঠছেন চট্টগ্রাম, সিলেট এবং দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ। সাভার, আমিনবাজার, মিরপুর মাজার রোড, গাবতলী, বসিলা এলাকার মেসবাড়িগুলোতে ঠাঁই নিচ্ছেন খুলনা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া থেকে আসা মানুষজন। গাজীপুর, টঙ্গি, খিলক্ষেত, নামাপাড়া, তুরাগ, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, ভাটারা, খিলবাড়ির টেক, গুদারাঘাট এলাকার মেসবাড়িগুলোতে ভিড় করছেন টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নীলফামারি থেকে আসা শ্রমজীবী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
নিজেকেই শোষণ করছে দরিদ্র মানুষ :
করোনাজনিত দারিদ্র্য স্পর্শ করেছিল দেশের ৩ কোটি মানুষকে। সেই প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই ডলারের ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ণ, জিনিসপত্রের অনিয়ন্ত্রিত মূল্য, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাসের দারিদ্র্যে নিপতিত হয়েছেন ২১ লাখেরও বেশি মানুষ। এটি বেসরকারি সংস্থা ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)’ এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (বিআইজিডি) গবেষণা চিত্র। এ চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে চলতি বছর জুনে। এর পর ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষের অর্থনৈতির হিসেবে পাল্টে গেছে বহুগুণ। এক সময় নিম্নবিত্তরা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি)র ট্রাকের সামনে লাইন দিতেন কম দামে খাদ্যসামগ্রী কেনার জন্য। মধ্যবিত্তরা যুক্ত হওয়ায় টিসিবির লাইন এখন আরও লম্বা হয়েছে।
নিম্নআয়ের মানুষ অবস্থা থেকে উত্তরণে ন্যায্যমূল্যে চাল, ১০ টাকার চাল এবং টিসিবির পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকেছে। চলতিবছর আগস্টেও দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকা ১৮ শতাংশ মানুষ ন্যায্যমূল্যের চাল কিনতেন। এই হার এখন ২৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে গ্রামে ১০ টাকার কেজি চাল কেনার মানুষের সংখ্যা আগস্টে ছিল ৪ শতাংশ। মাসে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। আগস্টে ১৫ শতাংশ মানুষ টিসিবির পণ্য কিনত। এখন এ হার দাঁড়িয়েছে ৩১ ভাগে।
অর্থনীতিবিদরা গত আগস্টে জানিয়েছিলেন, অন্তত ২ কোটি পরিবার অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। সরকারি ভাষ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির ফলেও দুনিয়া জোড়া পরিবহণজনিত ব্যয় বৃদ্ধির ফলেও বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। কিন্তু বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। কারণ, কিছুকাল আগেই মানুষকে জানানো হয়েছিলÑ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে অনেক কমলেও বাংলাদেশে কমেনি জ্বালানি তেলের দাম। এ তথ্য সঠিক হয়ে থাকলে বিশ্ববাজারে খাদ্যদ্রব্যেও দাম বাড়লেও কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এর তেমন একটা প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু সব সমীকরণ উপচে এমনটি হওয়ার কারণ কি?
গড় হিসেবে শুভঙ্করের ফাঁকি :
অর্থনীতিবিদদের বড় একটি অংশ মনে করেন, অর্থনীতির বিচার চলছে প্রচারমুখী ও গড়ভিত্তিক সংখ্যা তত্ত্ব দিয়ে। মানুষের আয় ব্যতিরেকে বৈষম্য, ভঙ্গুরতা কিংবা সম্মানবোধকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। একসময় অর্থনীতিতে শুধু সংখ্যার বিচারেই দারিদ্র্য মাপা হতো। নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে আয় করতে পারলে ধরা হতো তিনি দরিদ্র নন, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। এখন বিশ্বব্যাপী মানুষের আয়ের পাশাপাশি এ বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় নেয়া হয়। দেশের মানুষের আয় বেড়েছে বটে। কিন্তু এটি ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা সুবিধাভোগী মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের। এই গড় আয় দিয়ে প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন আয়-ব্যয়কে পরিমাপ সম্ভব নয়। যদিও গড়ভিত্তিক সংখ্যা নিয়েই তুষ্টি লাভ করছেন ক্ষমতা-বলয়ের মানুষজন। যা নিতান্তই শুভংকরের ফাঁকি।
দৈনিক ১ হাজার টাকা উপার্জনকারী আর ১০০ টাকা উপার্জনকারীর যে গড়, তা দিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা উপার্জনকারীর পরিস্থিতি বিবেচনা করা যেমন যথার্থ নয়। তেমনি বেহেশতে থাকার দর্পিত দাবিও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিদ্রুপাত্মক। বিষয়টি নীতিনির্ধারক মহল আমলে নেন কিংবা না নেন। সময়ের বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ ভালো নেই।
সংস্থাটির জরিপ বলছে, খাদ্যদ্রব্যসহ ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ পণ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে নিম্নমানের পণ্য কিনছে। কেউবা কেনাই বাদ দিয়েছে। ২৭ শতাংশ পরিবার চাল কিনছে কম পরিমাণে। আগের চেয়ে নিম্নমানের চাল কিনছে ৩৬ শতাংশ পরিবার। তবে কেউ একেবারে চাল কিনছেই না এমনটি নয়। পুষ্টির জন্য দরকারি মাছ, গোশত, দুধ কম কিনছে কিংবা বাদ দিয়েছে।
জরিপের ফলাফলে আরও বেরিয়েছে, ৪৭ শতাংশ মানুষ দুধ কেনার পরিমাণ কমিয়েছে। মান কমিয়ে দিয়েছে ২৫ শতাংশ। আমিষজাতীয় দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন ২০ ভাগ মানুষ। ৭৩ ভাগ মানুষ মাছ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কম কিনছেন ৫৬ ভাগ মানুষ। মাসে অন্তত একদিন শহরের বস্তিবাসীর ৫ শতাংশ মানুষ তাদের আর্থিক দুরবস্থায় সারাদিন অভুক্ত থাকছেন। গ্রামে এ সংখ্যা ৩ শতাংশ। অন্তত দিনে একবেলা কম খাচ্ছেন শহরের ২১ ভাগ মানুূষ। গ্রামের ১৩ ভাগ মানুষ কম খাচ্ছেন। গ্রাম ও শহরের কৃষি ও পরিবহণ খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকেই খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। শ্রমজীবী, রিকশাচালক, তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক ও গ্রহকর্মীদের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। ১৫ শতাংশ মানুষ সন্তানদের পেছনে জন্য ব্যয় কমিয়েছে। সন্তানদের প্রাইভেট ও কোচিং পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন ১০ শতাংশ অভিভাবক। প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনা কমিয়েছেন ১১ শতাংশ মানুষ। যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে গন্তব্যে পৌঁছছেন পায়ে হেঁটে। স্নায়ুচাপ বাড়ছে। শরীরে ভর করছে ক্লান্তিবোধ। কর্মক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে মানুষ নিপতিত হয়েছে নানামাত্রিক চাপ ও শোষণে।
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, করোনার পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। উপরন্তু বিস্তার ঘটছে দরিদ্র শ্রেণির। প্রান্তিক মানুষ নিছক টিকে থাকার চেষ্টায় নিমগ্ন। নিজেকেই নিজে শোষণ করছেন। ব্যয় হ্রাসে পানাহার কমিয়ে দিচ্ছেন। বাড়তি আয়ের জন্য মানুষ পরিশ্রম করছেন বেশি। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া গভীর ও সুদূরপ্রসারী।
মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক কারণ : পরিশ্রম করলেই যে বাড়তি আয় হবেÑ এমন নিশ্চয়তা নেই। শ্রম বিক্রির জায়গা লাগে। শ্রমঘন খাতগুলো মার খাচ্ছে প্রযুক্তির কাছে। এক সময় কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ৭০ ভাগ মানুষ। কিন্তু কৃষিজমি হ্রাস, ডিজেল ও সারের মূল্য অসম্ভব রকম বেড়ে যাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। কৃষি শ্রমিক হিসেবে ক্ষেতে-খামারে কাজ করে যা আয় হয়, তাতে সংসার চলে না। মূল্যস্ফীতি গ্রামীণ অর্থনীতিকে দিয়েছে মারাত্মক ধাক্কা। টিকতে না পেরে গ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে আসছে মানুষ। তাদের ধারণা-ঢাকায় কাজ আছে। হয়তো বাড়তি আয় করা সম্ভব। এ ধারণা থেকে শ্রমজীবীরা ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীতে। ট্রেনে, ট্রাকে, বাসের ছাদে, লঞ্চে করে শূন্য হাতে স্রোতের মতো ঢাকায় আসছে নতুন মানুষ। ঢাকার পথÑঘাট, টার্মিনাল, ফুটপাত, ফুটওভার, বাজার, আড়ৎ, লোকাল বাস, অলিগলি, নিম্ন আয়ের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে নতুন মুখ।
এছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, হামলা, মামলার কারণে অনেক রাজনৈতিক কর্মী জনবহুল ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ১৪ বছরে ২৭ লাখ মামলা হয়েছে বিএনপি ও অপরাপর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রামের ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন কর্মীর বিরুদ্ধেও রয়েছে ৫ থেকে ২০টি মামলা। পরিচয় গোপন করে ঢাকা, ঢাকার উপকণ্ঠে বিভিন্ন শ্রমঘন কাজ করে জীবন ধারণ করছেন তারা। রিকশা-ভ্যান-অটোচালক, টার্মিনাল, আড়তে মুটে-মজুর, হকার, তৈরি পোশাক কারখানা, নির্মাণ শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট বয়, দোকান কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়, দারোয়ান, নৈশপ্রহরীর মতো কষ্টসাধ্য কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন তারা। শারীরিকভাবে অক্ষম, বয়োবৃদ্ধ, বিধবাদের বড় একটি সংখ্যা নিয়োজিত হয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। কোনো কাজ জোটাতে না পেরে ভবঘুরে থাকছেন নবাগতদের একটি অংশ। অপরাধীচক্রের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। পাড়ায়-মহল্লায় ছিঁচকে চোরের উপদ্রুব বেড়েছে। সিসি ক্যামেরার মতো প্রযুক্তিগত নজরদারির মধ্যেই জীবনবাজি রেখে চৌর্যবৃত্তিতে নিয়োজিত হচ্ছে তরুণরা। রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কোনাপাড়া, কাজলা, ধোলাইপাড়, গেন্ডারিয়া, মুগদা, বাসাবো, মাদারটেক, সিপাইবাগ, কেরাণীগঞ্জ এলাকায় ঢাকার অধিকাংশ নিম্নআয়ের মানুষের বাস। এসব এলাকায় চুরির নৈমিত্তিক ঘটনা। নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল সেট, গাড়ির পার্টস, ল্যাপটপসহ মূল্যবান ছোট জিনিসের দিকে নজর চোরদের। তবে হাজার হাজার কোটি টাকার লুণ্ঠন-পাচারের তুলনায় ছিঁচকে চোর, পকেট মার কোনো অপরাধ নয়, মনে করে চোর-পকেটমারদের এখন অনেকটা করুণার চোখেই দেখে ঢাকাবাসী। চোরকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরাই উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন।
এক দশকে সর্বোচ্চ ভিক্ষুক : গত ৬ মাসে ঢাকায় বেড়েছে নবাগত ভিক্ষুকের সংখ্যা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে গত এক দশকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভিক্ষুক এখন ঢাকায়। সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকায় ভিক্ষুক সম্পর্কে সাম্প্রতিক কোনো জরিপ নেই। বিভিন্ন সংস্থা হিসাব মতে, ঢাকায় ভিক্ষুক সংখ্যা ২০ লাখের কম নয়। এ সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এখন নগরীতে ভিক্ষুকমুক্ত কোনো অঞ্চল নেই। গুলশান, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, বারিধারায়ও ছড়িয়ে পড়েছে ভিক্ষুক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজ গবেষক অধ্যাপক ড. মো: রবিউর ইসলামের মতে, সম্প্রতি ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তি বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। পেশাদার ভিক্ষুকদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অভাবে পড়ে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিযুক্ত হওয়া নিরুপায় মানুষ। পেশাদার ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে নানা প্রকল্প রয়েছে। তাদের ধরে বেঁধে, কখনও বা বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিবৃত রাখার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যারা অভাবে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসনে বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলেই শুধু ভিক্ষুক পুনর্বাসন সহজ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।