Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশাসনে বাধ্যতামূলক অবসর আতঙ্ক

ফিরে দেখা ২০২২ প্রশাসনের পদোন্নতি ও বদলি বছরজুড়ে : কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়া বাতিল

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

প্রশাসনের পদোন্নতি ও বদলী ছিল বছর জুড়ে। এ পদোন্নতির তালিকায় ছিলো সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা। ২০২২ সালে বিভিন্ন পর্যায়ের ৬৩৩ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। তার পরও প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ছিল বাধ্যতামুলক অবসরের আতঙ্ক। সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনায় প্রশাসন জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনে এখনো কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিদায়ী এই বছরে কিছু বঞ্চিত কর্মকর্তার পদোন্নতি হলেও এখনো মেধাবীরা বঞ্চিত রয়ে গেছেন। বছর জুড়েই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ছিল হাহাকার, ক্ষোভ ও হতাশা। বছরের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে পদোন্নতি দিয়ে এবং শেষ হয়েছে এক সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর মধ্যেদিয়ে। গত এক বছরে প্রশাসনের চার স্তরে (সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব) কর্মকর্তাদের পদের চেয়ে চারগুন পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে ডিসি ইউএনও এবং সহকারি কমিশনারদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচনা ছিল। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী একাধিকবার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। বিধিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে তা বাতিল করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় বিধিমালার সংশোধন খসড়া উঠতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি থাকছে প্রস্তাবিত সংশোধনে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখন থেকে আর দিতে হবে না। আমার যে আয়কর টির্টান জমা দিয়ে থাকি সেটা জনপ্রশাসনে দিলে হবে। আর নতুন করে হিসেবে দিতে হবে।

প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদে এ বছরই পরিবর্তন করা হয়েছে। বছরের শেষ দিকে এসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব পদে পরিবর্তন করা হয়। এছাড়াও পরিবর্তন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও। গত ১১ ডিসেম্বর নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিয়োগ পান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। গত ১৫ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নতুন মুখ্যসচিব নিয়োগ পান প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। একই দিন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রশাসনে সচিব পদে বছর জুড়ে রদবদল করেছে সরকার। বদলি ও পদোন্নতির মাধ্যমে ছয় দপ্তরে সচিব পদে পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে তিন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তিনজন সচিবকে বদলি এবং একজন সচিবকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী একই দপ্তরে পদায়ন পেয়েছেন। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম খান জননিরাপত্তা বিভাগে বদলি হয়েছেন। এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়েছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে একই জায়গায় পদায়িত হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরিদ আহাম্মদ পদোন্নতি পেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলম নিয়োগ পেয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব পদে।

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠায় সরকার। গত ১৬ অক্টোবর তাকে অবসর দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকেই বাধ্যতামূলক অবসর নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
প্রশাসনে পদোন্নতি চলতি বছর যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে বড় ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল প্রশাসনে ৯৪ জন যুগ্মসচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। চলতি বছরের ২৯ জুন জনপ্রশাসনে ৮২ জন উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর বছরের শেষ দিকে এসে গত ২ নভেম্বর ফের ১৭৫ জন উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। গত ১ নভেম্বর প্রশাসনে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ২৫৯ জন কর্মকর্তা।

গত ২৩ নভেম্বর মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ওইদিন রাতে ২৩ জেলার ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়। ঢাকা, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, বরিশাল, সুনামগঞ্জ, খুলনা, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, ঝালকাঠি, ফরিদপুর, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কক্সবাজার, জয়পুরহাট ও মাগুরায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে আবারও ক্ষমতায় আসেন, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। পরে তিনি প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এমনই একটি বিষয় নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সম্প্রীতি সভায় আমি বক্তব্য দিয়েছি। দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় তাই জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের দায়িত্ব নিতে বলেছি। কিন্তু এটা নিয়ে ভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে। আর কিছু বলতে চাই না। তার বক্তব্যটি প্রশাসনে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। তারপর তাকে ঢাকা জেলা প্রশাসক পদে বদলী করা হয়।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশফাকুর রহমান ‘পুলিশ প্রটোকলে’ বিদায় নিয়েছেন। রাঙ্গাবালী উপজেলা চত্বর থকে পুলিশ প্রটোকলে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। এমন কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।সরকারি খাতের অর্থ আত্মসাৎ এবং একাধিক ঘটনায় বিতর্কিত এই ইউএনও। এর আগে ইউএনও মাশফাক শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে পদন্নোতি পেলেও নানা কারণে তাকে অবমুক্ত করেনি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগে যুক্ত করা হয়। কিন্তু ইউএনও যথাযথভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি অবমুক্ত হননি। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর তাকে অবমুক্ত করেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
এদিকে দীর্ঘদিন রাঙ্গাবালী উপজেলায় ইউএনও ও নির্বাহী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও পুলিশ প্রটোকলে বিদায় নেওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নৈতিক স্খলনজনিত নারীঘটিত অপরাধ প্রমাণের পরও প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা গুরুদণ্ড থেকে রেহাই পেলেন। ত্রিশতম ব্যাচের অভিযুক্ত সাবেক ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজকে নবীন কর্মকর্তা হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে দেওয়া হয়েছে লঘুদণ্ড। অথচ প্রমাণিত অপরাধের জন্য কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত কিংবা যথোপযুক্ত গুরুদণ্ড প্রদান করা হবে না মর্মে ২য় শোকজ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা সাফ বলছেন, এ ধরনের অপরাধে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মতামত ছাড়া লঘুদণ্ড প্রদানের সুযোগ নেই।

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস’ বাড়াতে লাইব্রেরির জন্য বই কেনার তালিকায় একজন অতিরিক্ত সচিবের ২৯টি বই স্থান পাওয়ার বিষয়টি চরম বিতর্কের জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকারি কর্মকর্তাদের জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাসের জন্য এক হাজার ৪৭৭টি বইয়ের তালিকা করা হয়। সেই তালিকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলামেরই ২৯টি বই স্থান পেয়েছিল। সমালোচনার মুখে গত ২৯ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তখনকার সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম সাংবাদিকদের জানান, নবীরুল ইসলামের বই থাকা সেই তালিকাটি বাতিল করা হয়েছে। চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আলীকদম উপজেলার ২ নম্বর চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের রেপারপাড়া এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আবাসিক স্বাধীন যুবসমাজের উদ্যোগে আন্তঃইউনিয়ন ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় আবাসিক জুনিয়র একাদশ বনাম রেপারপাড়া বাজার একাদশ অংশ নেয়। খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। খেলায় সমাপনী বক্তব্যে এবং পুরস্কার বিতরণ করার একপর্যায়ে ইউএনও জনসাধারণের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের ট্রফি (কাপ) ভেঙে ফেলেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ইউএনও মেহরুবা ইসলামকে ঢাকায় বদলি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে খবর প্রকাশের জেরে কক্সবাজারের সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর থেকে কল করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন কক্সবাজারের টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরু। ঘটনাটি ২১ জুলাই রাত পৌনে ১০টার। গালিগালাজের ওই অডিও রেকর্ড ফাঁস হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত ১৬ অক্টোবর পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা মো. আলী হোসেন ফকিরকে সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এরপর গত ১৮ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের এসপি (টিআর) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠানো হয়।
এরপর ৩১ অক্টোবর দুই অতিরিক্ত ডিআইজিকেও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তারা হলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহবুব হাকিম ও সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলমগীর আলম। গত ২১ নভেম্বর সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে এসপি ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমানকে।

গত ২৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এরই মধ্যে ইউএনও কায়সার খসরুকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গুচ্ছগ্রাম-দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে গাইবান্ধা সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের পদাবনতি হয়। একই সঙ্গে আত্মসাৎ করা ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশনা জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারি বাসভবনের প্রতিবেশী অন্য কর্মকর্তাদের হুমকি, মিথ্যা পরিচয়, খারাপ ব্যবহারসহ নানান অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উপসচিব মো.লোকমান আহমেদকে শাস্তি দেয় সরকার। তিন বছরের জন্য তার বেতন গ্রেড নিম্নতর ধাপে নামিয়ে আনা হয়। মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে উপসচিব এ কে এম রেজাউল করিমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। গত ২১ নভেম্বর তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

চলতি বছর সরকারি অফিসের সময়সূচিতে দুবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লেনদেন আর লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো ৬টা পর্যন্ত।

প্রথমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গত ২৩ আগস্ট থেকে অফিসের সেই সূচিতে পরিবর্তন আনে সরকার। ওই সময়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস করেন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা। ব্যাংক লেনদেন পরিচালিত হয়েছে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।

পরে শীতকাল বিবেচনায় ১৫ নভেম্বর থেকে অফিসের সময়সূচিতে ফের পরিবর্তন আনে সরকার। নতুন নিয়মে সকাল ৯টায় অফিস শুরু হয়ে শেষ হচ্ছে বিকাল ৪টায়। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০২২ অনুযায়ী সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রশাসন, মানব উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুর্যোগ ও সংকট মোকাবিলা, অপরাধ প্রতিরোধ, জনসেবায় উদ্ভাবন, সংস্কার, গবেষণা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • Jahangir Khan ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৫ এএম says : 0
    পানি ছাড়া যেমন জীবন চলতে পারে না তেমনি গণতন্ত্র ছাড়া একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না, পানি ছাড়া যেমন ধান চাষ করা যায় না তেমনি গণতন্ত্র ছাড়া একটি রাষ্ট্রের আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না, মৌমাছি ছাড়া যেমন মধু হয় না তেমনি গণতন্ত্র ছাড়া সত্য প্রকাশ পায় না, বনের রাজা যেমন বাঘ তেমনি অগণতন্ত্রের নাম প্রভাব বিস্তার বলপ্রয়োগ লাঠি যার মাটি তার, তেল গ্যাস ছাড়া যেমন গাড়ি চলে না তেমনি অগণতান্ত্রিক অবস্থায় সুশীলসমাজ মানব অধিকারের মূল্যায়ন হয় না, জঙ্গলে যেমন একজন মানুষ নিরাপদ নয় তেমনি গণতন্ত্র ছাড়া একটি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ও নিরাপদ নয়, পানি ছাড়া যেমন মাছ চাষ কল্পনা করা যায় না তেমনি গণতন্ত্র ছাড়া ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না, পড়া লেখা ছাড়া যেমন পরিক্ষা পাস করা যায় না তেমনি অগণতান্ত্রিক অবস্থা মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না, মাঝি ছাড়া যেমন নৌকা চলে না তেমনি অগণতান্ত্রিক অবস্থা প্রশাসনের দুনীতি ও অপকর্ম রোদ করা যায় না, গাভী ছাড়া যেমন খাঁটি দুধ আশা করা যায় না তেমনি অগণতান্ত্রিক অবস্থা টেকসই দান উন্নয়ন হয় না, কৃষকের কোদাল যেমন বুকের দিকে টানে সবসময় তেমনে অগণতান্ত্রিক রুপ ঠিক তেমন, সর্বোপরি গণতন্ত্র একটি রাষ্ট্রের মূল প্রাণ এটা সবাইকে বিশ্বাসা করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বাদ হতে হবে সত্য, ভদ্র, নম্র দেশমাতার ভবিষ্যৎ সন্তানদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক গণতন্ত্র একমাত্র পথ, গণতন্ত্র থাকলে একটি রাষ্ট্রের সব শৃঙ্খলা সঠিক ভাবে চলবে আর অগণতন্ত্র থাকলে একটি রাষ্ট্রের সব শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাবে তাই অগণতন্ত্র বহিষ্কার গণতন্ত্র অহংকার এই হোক বাঙালী জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অঙ্গীকার। মতপ্রকাশ ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Chowdhury ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৫০ এএম says : 0
    প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর পলিটিকসের সাথে সংযুক্ত থাকা চলবে না ।কিন্তু আমলীগের সাথে দহরম মহরম পদন্নোতিতে বরং উত্তম সহায়ক । হায়রে আমলীগ !!
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Atik ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৫ এএম says : 0
    গত চৌদ্দ বছর যাবত যাদের পা চেটে জনগণের অধিকার খর্বের কাজ করেছেন আজ তারাই আপনাদের কে অপবাদ দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিছে। বর্তমান সরকারের রোষানল থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা ও রক্ষা পায়নি। সুতরাং বর্তমান যারা এখনো বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দায়িত্বরত আছেন তারা নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করুন অতীতে কি করেছেন আর ভবিষ্যতে কি করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • H M Halal Patoyari ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৫ এএম says : 0
    সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের কায্যলয় বানানো হোলো কিনা জন গন জানতে চায়
    Total Reply(0) Reply
  • Shaiful Islam ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৬ এএম says : 0
    সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই৷ ক্ষমতা হারানের ভয়ে সন্দেহের কারনে চাকরিচুত করতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Faruky ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৮ এএম says : 0
    সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের কারনে, যখন তখন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আইন আছে। আর জনগণ বিরোধী কর্মকান্ড চুরি, দুর্নীতি,ঘুষ, ইত্যাদি করলে বাধ্যতা মুলক অবসরে পাঠানোর আইন নাই?????
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Abdul Hai ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৮ এএম says : 0
    সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মসন্মান বোধের অভাব , নৈতিক অবক্ষয়, আদর্শ শিক্ষার অভাব এর জন্য দায়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • Khatib Kibria ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো জন সেবা দেওয়ার জন্য হয়নি ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার গড়ার জন্য রাজনীতি করা হয় জনগনের কি হলো তা বিবেচনায় না রেখে তাবেদার সরকার ক্ষমতার জন্য কাজ করে এতে সরকারি কর্মচারি ও দল সব লুটেরার মতো মতলববাজ হয়ে যায়,ন্যায় অন্যায় তাদের কাজে বিবেচিত হয় উপরের আদেশ নির্দেশ
    Total Reply(0) Reply
  • A K Borhanuddin ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২৭ এএম says : 0
    রাশিয়ার এক গণতন্ত্র, আমেরিকার এক গণতন্ত্র,চীনে এক তন্ত্র। এক রাষ্ট্র আর এক রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ। সেটা বিতর্কিত দেশে দেশে যেটা চালু আছে।রাষ্ট্রীয় সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞা তা সকল দেশেই কম বেশি নড়বড়ে।হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কিংবা উল্লেখ করি সম্রাট হারুনের কথা। আমরা যদি মহান মুসলিম শাসকগনর কথা চিন্তা করি সেই শ্রেনীর শাসকগণের উদাহরণ পাথেয় হিসেবে কাজ করকে পারে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই দেশাসোনি কেন হতে হবে শে তথাকথিত গণতন্ত্রের দরকার নাই। জনগণের কল্যাণে কর্তৃত্ববাদ শাসন এখানে বড় প্রয়োজন।বেশি যেটা প্রয়োজন তা হলো দুর্নীতিমুক্ত সিভিল এবং মিলিটারি ব্রোক্রেসি বাস্তবায়ন করা। জনগণ ও রাষ্ট্রীয় সেবার সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি মুক্ত শাসন ব্যবস্থা হতে হবে কর্তৃত্ববাদের কৌশল।
    Total Reply(0) Reply
  • A K Borhanuddin ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২৭ এএম says : 0
    রাশিয়ার এক গণতন্ত্র, আমেরিকার এক গণতন্ত্র,চীনে এক তন্ত্র। এক রাষ্ট্র আর এক রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ। সেটা বিতর্কিত দেশে দেশে যেটা চালু আছে।রাষ্ট্রীয় সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞা তা সকল দেশেই কম বেশি নড়বড়ে।হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কিংবা উল্লেখ করি সম্রাট হারুনের কথা। আমরা যদি মহান মুসলিম শাসকগনর কথা চিন্তা করি সেই শ্রেনীর শাসকগণের উদাহরণ পাথেয় হিসেবে কাজ করকে পারে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই দেশাসোনি কেন হতে হবে শে তথাকথিত গণতন্ত্রের দরকার নাই। জনগণের কল্যাণে কর্তৃত্ববাদ শাসন এখানে বড় প্রয়োজন।বেশি যেটা প্রয়োজন তা হলো দুর্নীতিমুক্ত সিভিল এবং মিলিটারি ব্রোক্রেসি বাস্তবায়ন করা। জনগণ ও রাষ্ট্রীয় সেবার সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি মুক্ত শাসন ব্যবস্থা হতে হবে কর্তৃত্ববাদের কৌশল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ