Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার পরামর্শ

ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ বেনাপোল ও আখাউড়া চেকপোস্টে হেলথ স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ এর প্রভাবে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবারও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই অবস্থায় দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে এসব পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

কারিগরি পরামর্শক কমিটি জানায়, ওমিক্রনের নতুন ধরন অত্যন্ত সংক্রামক। সম্প্রতি চীন, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব দেশে ওমিক্রন ধরনের বিএফ.৭ উপধরনের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

কমিটির পরামর্শে বলা হয়, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে চলমান কোভিড সংক্রমণ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলোÑ কোভিড ১৯ এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে টেকনিক্যাল কমিটি সব সময় পর্যালোচনা করছে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরছে। দ্বিতীয়Ñ ফ্রন্ট লাইনার, ১৮ বছর ও তদুর্ধ্ব কোমরবিড রোগে (একাধিক রোগে আক্রান্ত) আক্রান্ত এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্ব সবাইকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ/ ৪র্থ ডোজের টিকার চলমান ক্যাম্পেইনের আওয়াত আনার ব্যাপারে সব প্রকার জনসংযোগ, প্রচার প্রচারণা জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়Ñ ফাইজার তাদের ৯ মাস মেয়াদি ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১২ মাস এবং ১২ মাস ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১৫ মাস বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, যা দেশে বিদ্যমান সব নিয়ম মেনে দেওয়া হচ্ছে বলে কমিটি মনে করে। চতুর্থÑ আশঙ্কাজনক ব্যক্তি এবং কোমরবিড রোগে আক্রান্ত সবাইকে কোভিড ১৯ এর সব স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। পঞ্চমÑ পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এবং ষষ্ঠÑ দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে রেডি রাখতে অধিদফতরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া প্রয়োজন।

বেনাপোল সংবাদদাতা জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো এক চিঠিতে বন্দর এলাকায় সতর্কতা জারির বিষয়টি গতকাল সোমবার সকালে নিশ্চিত করেছেন শার্শা উপজলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী।
চিঠিতে বলা হয়, চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ওমিক্রনের এই উপ-ধরন শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন ধরনকে “অত্যন্ত সংক্রামক” উল্লেখ করে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল, জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের ব্যাপারে হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। সব সন্দেহজনক যাত্রীকে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করতে হবে।

গত রোবববার বিকেলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেইলে সতর্কতা জারির নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে স্থাপিত ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটার কার্যকর করা হয়েছে। যা করোনার সময় থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে শার্শা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সরেজমিনে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের তল্লাশি কেন্দ্রের মধ্যে ও ইমিগ্রেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। যাদের মাস্ক আছে তাদের মাস্ক পড়া গলায়। ক্যামেরা দেখে অনেককেই মাস্ক পড়তে দেখা যায়। তবে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের মাস্ক পড়ে আসতে দেখা গেছে। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্র ও প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালের আশে পাশে বাইরের যে সমস্ত লোকজন ভিড় করছে তাদের মুখে কোন মাস্ক নেই।

বেনাপোল চেকপোস্টে ঘুরে দেখা গেছে, মাস্ক, পিপি ছাড়া ভারতীয় ট্রাকচালকরা অবাধে আসছে বেনাপোল বন্দরে। তাদের কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বেনাপোল বন্দরের রেল ও সড়কপথে বড় ধরনের বাণিজ্য কার্যক্রম আর পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে বেনাপোল- পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে। এ ছাড়া এ চেকপোস্ট দিয়ে বছরে প্রায় ১৮ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। আমদানি পণ্য নিয়ে প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রায় সহস্রাধিক ট্রাকচালক আসছে বেনাপোল বন্দরে। বেনাপোল বন্দর থেকে ৩ শতাধিক ট্রাকচালক রফতানি পণ্য নিয়ে যাচ্ছে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে। পণ্য খালাসে শ্রমিক, ট্রাকচালকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন সমাগম হয় বেনাপোল বন্দরে।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটার মেশিনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। চেকপোস্টে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে করোনা শুরুর আগ থেকেই।
তিনি আরও বলেন, চেকপোস্টে স্বাস্থ্য বিভাগের কোন স্থায়ী অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় তাদের কাজ করতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জনবলের অভাবে বন্দরেও কাজ করতে পারছেন না। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হয়েছে।

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ওমিক্রণের উপধরণ বিএফ-৭ এর সংক্রমণ রোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইমিগ্রেশন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে চেকপোস্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

বিশেষ করে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজন যাত্রীর র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৪ জন ভারতীয় নাগরিকের র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হয়। তবে এই ৪ জনের রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে।
হেলথ স্ক্রিনিং বুথের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহির উদ্দিন জানান, ওমিক্রণের উপধরণ বিএফ-৭ এর সংক্রমণ রোধে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে আগত সকল যাত্রীর স্বাস্থ্যগত তথ্যগুলো নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে-চেকপোস্টেই র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। যদি কেউ পজিটিভ হন, তাহলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, হেলথ স্ক্রিনিং কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য গত রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি নির্দেশনা আসে। এর প্রেক্ষিতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আখাউড়া আর্ন্তজাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ স্বপন চন্দ্র দাস জানান, ওমিক্রণের উপধরণ বিএফ-৭ এর সংক্রমণ রোধে আমাদের কাছে এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে আমরা ভারতীয় যাত্রীদের করোনা টিকা সনদ ছাড়া প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। যারা সনদ আনেন নাই তাদের কে চেকপোস্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোন যাত্রীকে সন্দেহ হলে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ