Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মেট্রোরেল যাত্রীদের প্রথমদিকে কাউন্সেলিং করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধন কাল হবে আগামীকাল। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের দিনে মেট্রোরেলের প্রথম টিকিট কেটে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্থায়ী কার্ড কিনে ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা মেট্রোরেলে উঠবেন বলে নিরাপত্তার কারণে প্রথমদিন সাধারণ যাত্রীরা উঠতে পারবেন না মেট্রোতে। পরেরদিন, ২৯ ডিসেম্বর থেকে সাধারণ যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে মেট্রোরেলে।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, প্রথমদিকে মেট্রোরেল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা চলবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চলাচলের পথে কোথায় থামবে না ট্রেন, বিরতিহীনভাবে চলবে। আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী মেট্রোরেল পরিচালনার প্রথমদিকে মানুষকে অভ্যস্ত করার জন্য প্রথমদিকে বেশি যাত্রী নেয়া হয় না। কারণ মানুষ টিকিট কাটার যে প্রক্রিয়া সেটাই সম্পন্ন করতে পারে না। সেজন্য আমরা ১০ মিনিট পরপর ট্রেন চালাবো। প্রথমে আমরা দুই ঘণ্টা চালাবো। পরে যদি দেখি মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে না তখন আমরা চার ঘণ্টা চালাবো। আস্তে আস্তে তিন মাসের ভেতরে আমরা পূর্ণভাবে পরিচালনা করবো।
ঢাকার মানুষ মেট্রোরেলে চড়তে অভ্যস্ত নন। তাই যাত্রীদের প্রথমদিকে আমরা মানুষকে কাউন্সেলিং করা হবে। মেট্রোরেলে উঠতে-নামতে টিকেট কাটতে এবং যাত্রী হিসেবে চলাচল করতে কি করতে হবে সেগুলো কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে মেট্রোরেল। ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। তবে উদ্বোধনের পর পুরোদমে চলবে না মেট্রোরেল। উদ্বোধনের পর প্রথম সপ্তাহে শুধু নির্দিষ্ট সময়ে চলবে। ধীরে ধীরে ট্রেন চলার সময় বাড়বে। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথের ট্রেন ১৬-১৭ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছাবে।
মেট্রোর যাত্রীদের জন্য শেষ-শুরুর স্টেশনে থাকছে বিআরটিসির ৫০টি দ্বিতল বাস। চুক্তি অনুযায়ী যাত্রীদের স্টেশনে পৌঁছে দেবে এসব বাস। গত ১৭ নভেম্বর বিআরটিসির সঙ্গে এই সংক্রান্ত চুক্তি করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেন চালুর আগেই বাসগুলো চলাচল শুরু করেছে। দিয়াবাড়ি এলাকাটি উত্তরার পশ্চিমাংশে হওয়ায় উত্তরা ও আশপাশের বাসিন্দাদের মেট্রো স্টেশনে নিয়ে আসবে বিআরটিসির বাসগুলো। একইভাবে মেট্রো ট্রেন থেকে নামার পর যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এসব বাস।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ যাত্রীদের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথমে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট কাটা যাবে। তবে টিকিট কাটার আগে নিবন্ধন করে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে। নিবন্ধন করতে নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, ফোন নম্বর ও ই-মেইল লাগবে। যারা স্থায়ী কার্ড সংগ্রহ করবেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলে হবে। তবে সিঙ্গেল যাত্রার কার্ড নিতে কিছু প্রয়োজন হবে না বলে জানা গেছে।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরদিন থেকে অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। আপাতত স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা যাবে ১০ বছর মেয়াদী স্থায়ী কার্ড। পরে স্টেশনের বাইরে থেকেও এটি সংগ্রহ করা যাবে। মোবাইলের মতো রিচার্জ করে যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা। সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে স্থায়ী কার্ড নেয়ার জন্য আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করছেন।
ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হতে যাওয়া মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতিবিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। মেট্রোরেলকে জনবান্ধব, প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন এবং আরও বেশি কার্যকর করার উদ্দেশ্যে এ পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, রেলওয়ে পুলিশের আদলে মেট্রোরেলের জন্যও গঠিত হচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট। নাম হবে ‘ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ’ বা ‘এমআরটি পুলিশ’। মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা, যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে নতুন এ ইউনিট। ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ইউনিটটির জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোসহ কিছু বিষয় অনুমোদন না হওয়ায় আপাতত সেবা দেবে পুলিশের বিশেষায়িত ফোর্স ও থানা পুলিশ।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না; বিপজ্জনক কোনো বস্তুও বহন করা যাবে না। ট্রেন বা স্টেশনের কোথাও ফেলা যাবে না পানের পিক বা থুতু। প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনে খাবার খাওয়া ও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না। ফোনের লাউড স্পিকার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এবং বৃহদাকার ও ভারী মালপত্র বহন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত বারবার ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে তবে তাকে সরাসরি ডিটেনশন রুমে রেখে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে।
ডিএমটিসিএল ম্যানেজার (সিভিল অ্যান্ড পি-ওয়ে) মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা মেট্রোরেলে চড়ে অভ্যস্ত নই। তাই প্রথমদিকে আমরা মানুষকে কাউন্সেলিং করব। এ জন্য আমাদের প্রতিটি স্টেশনের কনকোর্স লেভেলে ডিটেনশন রুম আছে। প্রথমদিকে মানুষজন ভুল করবে। ভুলের অবশ্য মাত্রাও আছে। কেউ ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আমরা আটক করে ডিটেশন রুমে রাখব। সেখানে তাদের আমরা কাউন্সেলিং করব। যদি দেখা যায়, কাউন্সেলিংয়ে সন্তোষজনক ফল আসে তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ