পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলতি মৌসুমে ৭ জেলায় আবাদ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে
নাছিম উল আলম : বায়ুতারিত ছত্রাকবাহী রোগের সংক্রমণে দেশে সম্ভবনাময় গমের আবাদ এবার যথেষ্ট হোঁচট খাচ্ছে। ভোলাসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ৭টি জেলায় এবার গম আবাদকে পরক্ষোভাবে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। গত এক যুগে দেশে গম আবাদ ও উৎপাদনের পরিমান ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও এবার কৃষি মন্ত্রণালয় উৎপাদন লক্ষমাত্রা হ্রাস করেছে সম্ভাবনাময় এ দানাদার ফসলটির। গত বছর রবি মৌসুমে দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরে গম আবাদ হলেও ১৪ হাজার হেক্টর ফসল বিনষ্ট হওয়ায় উৎপাদন চিল প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন।
চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর বা পৌনে এক লাখ একর জমিতে গম আবাদের লক্ষমাত্রা হ্রাস করা হয়েছে। ফলে উৎপাদনও অন্তত ৮০ হাজার টন হ্রাসের আশংকা রয়েছে। এর সাথে চলতি মৌসুমে এখনো শীতে তাপামাত্রা স্বাভাবিকের ওপরে থাকায় এর উৎপাদনে বাড়তি বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি মৌসুমে দেশে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষমাত্রার দুই-তৃতীয়াংশ জমিতে আবাদ সম্পন্নও হয়েছে।
তবে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে গত বছর দেশের ৭টি জেলায় ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় সেখানে এবার রবি মৌসুমে গম আবাদকে কিছুটা নিরুৎসাহিদ করা হলেও তা নিষিদ্ধ করা হয়নি। গত বছর ভোলা, মেহেরপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পাবনা, ঝিনাইদহ জেলাগুলোতে ব্লাস্ট নামক এক ধরনের ছত্রাক গমের উৎপাদন বিপর্যয় ঘটে। এমনকি ঐসব জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গমের আবাদ নষ্ট হয়। রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে কয়েক হাজার একর জমির ফসল আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেও হয়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে আক্রান্ত জেলাগুলোতে এ বছর গম আবাদকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি এসব অঞ্চলের সরকারি খামারগুলোতে গম বীজ উৎপাদনও বন্ধ রাখা হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে ‘বিকল্প পোষক গাছের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াবার আশঙ্কা থাকে’। ডিএই’র তরফ থেকে আক্রান্ত জেলাগুলোতে গমের পরিবর্তে ডাল ও ভুট্টা জাতীয় দানাদার ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ফলে গত বছর দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ গম আবাদ হলেও এ বছর তা অনেকটাই হোঁচট খেয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞগণের মতে, ‘হুইট ব্লাস্ট’এর মাধ্যমে সংক্রমণের কারণে গমের গাছ মারা গেলেও এর জীবাণু বিভিন্ন পোষক গাছে থেকে যায়। ফলে তা পুনরায় সংক্রমিত হবার আশংকা থাকছে। তাই পরবর্তী বছর হিসেবে চলতি মওশুমে গমের আবাদকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটি সারা বিশ্বের কৃষি বিজ্ঞানীদের একটি প্রতিষেধক পদ্ধতি। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, ব্লাস্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধানের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকবাহী রোগ হলেও ১৯৮৫ সালে তা গমের ওপরও সংক্রমিত হতে থাকে। তবে দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশেই প্রথম গত বছর এ রোগের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এমনকি গত বছর দেশে গমে ব্লাস্ট রোগের ছত্রাকের জিনগত চরিত্রের সাথে ব্রাজিলের জীবাণুর অনেকটাই মিল পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।
এ ধরনের ছত্রাকবাহী রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব গমের ক্ষেত আগুনে পুড়িয়ে ফেলা। তা করতে গিয়ে গত বছর আক্রান্ত জেলাগুলোর কয়েক হাজার কৃষক পথে বসে গেছে। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের মতে, গমের শীষ আসার পরে প্রথমে এর পাতা হলুদ রঙ ধারণ করে তার ওপর কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। দিন কয়েকের ব্যবধানে ঐসব দাগ ক্রমশ বড় হতে থাকে এবং দ্রুত পাতা ঝলসে যেতে শুরু করে। একই সাথে তা গমের শীষেও ছড়িয়ে পরতে থাকে এবং ফলের পুরোটাই সাদা হয়ে যেতে থাকে। এভাবে অতি দ্রুত পুরো ক্ষেতের গমের শিষ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতের প্রকোপ কমের মধ্যে বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটলে ব্লাস্টের ছত্রাকের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি তাপমাত্রার সাথে অস্বাভাবিক হারে আদ্রতার ঘটনা ঘটলেও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গত বছর ভোলাসহ আক্রান্ত জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার তারতম্য ছিল প্রায় শত ভাগের কাছাকাছি।
আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ‘শতাব্দী’ ছাড়াও ‘বারি-২৫’ ও ‘বারিÑ২৬’ নামের তাপ সহিষ্ণু দুটি উচ্চফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। যা আমাদের দেশের মতো কম শীত প্রধান দেশে অধিক উৎপাদন শীল জাতের গম। কিন্তু গত বছর ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ রোগের সংক্রমণ দেশে গম আবাদের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে যথেষ্ট ধাক্কা দিয়েছে। এর ফলে যেসব কৃষক গম আবাদে ঝুঁকেছিলেন, তাদের আগ্রহে যথেষ্ট ভাটা পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থ-বছরে দেশের ৩ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৯৬ হাজার টন গম উৎপাদিত হয়। ২০১২-১৩ সালে দেশে গম আবাদের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর। উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন। এর পরের বছর ২০১৩-১৪ সালে আবাদ ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর, আর উৎপাদন ছিল ১৩ লাখ ২ হাজার টন। ইতোপূর্বের বছরগুলোতে দেশে গমের উৎপাদন ছিল হেক্টরপ্রতি ২.৬০ টন থেকে ২.৭৮ টন পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৩-১৪ সালে তা ৩.০৩ টনে উন্নীত হয়। আর গত বছর দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়। যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর বেশি। এর ফলে পায় ১৪ লাখ টন গম উৎপাদনের কথা থাকলেও ব্লাস্ট রোগের কারণে তা সাড়ে ১৩ লাখ টনে সীমিত ছিল। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত জেলাগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে অন্তত ৪০ হাজার হেক্টর গম উৎপাদন কম হয়। এ হিসাব বাদ দিলে গত বছরও গমের উৎপাদন ছিল হেক্টরপ্রতি প্রায় ২.৯৫ টনের মতো।
সত্তরের দশকে দেশে সামান্য কিছু জমিতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত ‘খেরী, আইপি-৫২ ও আইপি-১২৫’ জাতের গম-এর আবাদ শুরু করে কৃষকগণ। পরবর্তীতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আবহাওয়া পরিস্থিতি ও উৎপাদন অনুকূল পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদেশ থেকে ‘কল্যাণ সোনা’ ও ‘সোনালিকা’ জাতের মধ্যম মানের ফলনশীল গমবীজ আমদানি করে।
এসব বীজ দিয়ে আবাদ সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু করে কৃষি সম্প্রসরণ অধিদফতর। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব গমের উৎপাদন প্রায় ৩ গুণ বেশি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহও বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চ ফলনশীল বেশকিছু গমের জাত উদ্ভাবন করে তার বীজ বিএডিসি’র কাছে হস্তান্তর করে। যার মধ্যে কম তাপমাত্রায় উচ্চ ফলনশীল বেশকিছু জাতও রয়েছে। তবে এখনো মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে উচ্চ ফলনশীল গম বীজ ও এর আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর যথেষ্ট সীমিত পর্যায়ে বলে জানা গেছে। এর ওপর ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেশে গম আবাদের অগ্রযাত্রাকে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত করল। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহলের মতে, চলতি মৌসুমে নতুন করে কোনো বিপত্তি না ঘটলে এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকলে দেশে আগামী বছর গম আবাদ সম্প্রসারণে আরো গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।