Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উদ্বৃত্ত জেলাগুলোই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে

ব্রি’র গবেষণা প্রতিবেদনশিল্পায়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া এর মূল কারণ

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

খাদ্য নিরাপত্তহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে দেশে খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকা জেলাগুলো। শিল্পায়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকা জেলাগুলো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে শিল্পায়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থান থাকায় খাদ্য ঘাটতিতে থাকা জেলাগুলো দরিদ্রতা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিক থেকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে। মূলত খাদ্যোৎপাদনে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোয় শিল্পায়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে দারিদ্র্য পিছু ছাড়ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রির এক গবেষণা প্রতিবেদনে চাল উৎপাদনে দেশের জেলাগুলোর ২০১৪-১৫ অর্থবছরের উদ্বৃত্ত ও ঘাটতি নিয়ে জেলাভিত্তিক তথ্যের মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্রির বর্তমান মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। মানচিত্রে দেখানো খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকা জেলাগুলোয় তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমান্তরালে খাদ্যোৎপাদনও বেড়েছে। ফলে বর্তমানেও চাল উদ্বৃত্তের চিত্র অনেকটা একই রকম। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল ২৯ লাখ ৯০ হাজার ১২৮। ২০২১ সালে এসে জনংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ২৩৮। অর্থাৎ ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ১১০। জেলাটিতে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মাত্র ১ শতাংশ। অন্যদিকে জেলাটিতে ২০১০-১১ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার ১৮৯ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৪২৬ টনে। অর্থাৎ চাল উৎপাদনও প্রায় ১ শতাংশ হারে বেড়েছে।
ব্রি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চাল উদ্বৃত্ত থাকা জেলাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাট, শেরপুর, নওগাঁ, বগুড়া, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ভোলা। এসব জেলায় ৮০ থেকে ১৮৩ শতাংশ পর্যন্ত চাল উদ্বৃত্ত থাকে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, নীলফামারী, রংপুর, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলায় ৫১ থেকে ৭৭ শতাংশ চাল উদ্বৃত্ত থাকে। গাইবান্ধা, নাটোর, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২২ থেকে ৪৮ শতাংশ চাল উদ্বৃত্ত থাকে। রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলায় ১ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত চাল উদ্বৃত্ত থাকে। অর্থাৎ এ জেলাগুলোয় খাদ্যশস্যের ঘাটতি নেই। তবে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকলেও এসব জেলাগুলোতেই দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি।
বিবিএসের ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত জেলাগুলোর শীর্ষে রয়েছে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, জামালপুর, মাগুরা, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলায় ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যহারের উচ্চরেখায় অবস্থান করছে। শুধু খাগড়াছড়ি জেলা ব্যতীত অন্য সব জেলায়ই খাদ্যশস্য উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি। কুড়িগ্রাম জেলায় ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ, দিনাজপুরে ৬৪ দশমিক ৩, জামালপুরে ৫২ দশমিক ৫, মাগুরায় ৫৬ দশমিক ৭, কিশোরগঞ্জে ৫৩ দশমিক ৫, খাগড়াছড়িতে ৫২ দশমিক ৭ ও বান্দরবানে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ দারিদ্র্যহারের উচ্চরেখায় অবস্থান করছে।
ভিন্ন চিত্র খাদ্য ঘাটতিতে থাকা জেলাগুলোয়। চালের ঘাটতিতে থাকা জেলাগুলোর শীর্ষে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও রাঙ্গামাটি। এ জেলাগুলোয় ৪৬ থেকে ৯১ শতাংশ পর্যন্ত চালের ঘাটতি রয়েছে। আর মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও মাদারীপুরে ১৯-৪০ শতাংশ চালের ঘাটতি রয়েছে। তবে এসব জেলা দারিদ্র্যের দিক থেকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। দারিদ্র্যহারের উচ্চরেখায় অবস্থান করছে ঢাকায় ১০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৩ দশমিক ৭, গাজীপুরে ৬ দশমিক ৯, নারায়ণগঞ্জে ২ দশমিক ৬, মুন্সিগঞ্জে ৩ দশমিক ১, মানিকগঞ্জে ৩০ দশমিক ৭, নরসিংদীতে ১০ দশমিক ৫, ফরিদপুরে ৭ দশমিক ৭, রাজবাড়ীতে ৩৩ দশমিক ৮, শরীয়তপুরে ১৫ দশমিক ৭, চাঁদপুরে ২৯ দশমিক ৩ ও মাদারীপুরে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ।
বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)। ২০০৯-১৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছর সময় নিয়ে দেশের সব জেলার খাদ্যনিরাপত্তার চিত্র বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। আইপিসির পরিসংখ্যানেও খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলাগুলোয় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বেশি মানুষ ভুগছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, গাইবান্ধা, বান্দরবান, কক্সবাজার ও জামালপুর, ছয় জেলার ৩৫-৪০ শতাংশ মানুষ মধ্যম ও গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যদিও এর মধ্যে কক্সবাজার ছাড়া বাকি সব জেলায়ই খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে। এছাড়া বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ৩০ শতাংশ মানুষ মধ্যম ও গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ