Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মেট্রোরেলে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আর মাত্র দুই দিন পরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের একদিন পরই সাধারণ যাত্রীরা টিকেট কেটে কাক্সিক্ষত মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন। যাত্রী পরিবহনে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন চার লাখ যাত্রী এই মাধ্যমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাতায়াত করবেন। যাদের প্রত্যেকের হাতেই থাকবে মোবাইল ফোন। অথচ সেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও সেবা নির্বিঘ্ন করতে এখনো কোন উদ্যোগই নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। যদিও যাত্রীদের সেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম স্থাপন করতে চায় মোবাইল অপারেটররা। তা না হলে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া কঠিন হবে বলছে তারা। অপারেটরগুলোর আশঙ্কা, যেহেতু মানুষের চাপ বাড়বে সেহেতু মেট্রোরেলের স্টেশনে ও চলতি অবস্থায় বারবার কলড্রপ হতে পারে, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে স্টেশন নির্মাণের সময়ে বা আরও আগে যোগাযোগ করেনি। এখন স্টেশনের ভেতরে তার-যন্ত্রপাতি এসবে স্থাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, বিপুল লোক সমাগম হতে চলা ইনডোর বিল্ডিং স্টেশনগুলোতে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে ইন-বিল্ডিং সলিউশন প্রয়োজন। কিন্তু তারা তা স্থাপনে কোনো অনুমতি এখনও পাননি। ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে যেন, অপারেটররা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তর হতে আগারগাঁও) এ নেটওয়ার্ক সলিউশন স্থাপন করতে পারে।
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে এমআরটি লাইন-৬ এ মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা চালু করতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) গত ২৭ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব)। চিঠির একটি কপি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেও (বিটিআরসি) দেওয়া হয়।
চিঠিতে এমটব লিখেছে, স্টেশনগুলোতে প্রতিদিন বিপুল লোক সমাগম হবে যেখানে ব্যাপক সংখ্যক মোবাইল সংযোগের ব্যবহার হবে। ফলে স্টেশনের ভেতরে এই বাড়তি ডেটা ও ভয়েসের চাহিদা সামাল দিতে সবগুলো অপারেটর একসঙ্গে স্টেশন ভবনের ভেতরে কম্বাইন্ড নেটওয়ার্ক সলিউশন স্থাপন করতে চায়। যা টিকেট কাউন্টার, প্লাটফর্ম, লাউঞ্জ, খাবারের স্টলসহ ট্রেন যাওয়া-আসার সময় হওয়া বেশি লোক সমাগমে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে অপারেটরগুলো এমআরটি লাইন-৬ এর ৯টি স্টেশনে টেকনিক্যাল জরিপ ও সম্ভব্যতা যাচাই করেছে যা তারা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসিও। ওই চিঠিতে লাইন-৬ এ মেট্রোরেল ও স্টেশনগুলোতে মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে মোবাইল অপারেটরগুলোর টেকনিক্যাল জরিপ এবং কম্বাইন্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করা হয়। বিটিআরসি বলছে, মেট্রোরেল এবং স্টেশনগুলোতে বিশাল পরিমাণ জনগণের একই সময় ও একত্রে সমাগত হওয়ার কারণে উল্লেখিত স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
চিঠির বিষয়ে অ্যামটবের মহাসচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, মেট্রোরেলে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে অপারেটররা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অ্যামটব আশা করছে, সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক বলেন, স্টেশনগুলোকে দারুণ সুন্দর করে করা হয়েছে। এখন প্রতিটি মোবাইল কোম্পানিকে তার টেনে টেনে, ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ওখানে কী তাদের পয়েন্ট দেবো? তাহলে তো পুরো স্টেশনের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা অন্যান্য দেশেও খোঁজ নিয়েছি। মোবাইল কোম্পানিগুলো সবসময়ই এমন করে যে, মেট্রো যখন বানানো হয়ে যায় তারপর তারা এসে বলে আমাদের নেটওয়ার্ক দাও। স্টেশনের ভেতরে স্টেশনের সৌন্দর্য নষ্ট করে আমরা নেটওয়ার্ক বসানোকে নিরুৎসাহিত করছি।
ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, ট্রেনটা ১০০ কিলোমিটার বেগে চলবে। বিদেশে তো ৪০০ কিলোমিটার, সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার বেগেও ট্রেন চলে সেখানে কিন্তু নেটওয়ার্কের কোনো সমস্যা হয় না। সেইভাবে নেটওয়ার্কটাকে অপারেটরদের স্থাপন করতে হবে।’‘অপারেটররা বলছে, স্টেশনের এক কিলোমিটারের মধ্যে একটা টাওয়ার আছে। সে টাওয়ার হতে তার এনেএনে স্টেশনের ভেতর ঝুলিয়ে দিতে চাচ্ছে। এখন এতগুলো অপারেটর যদি এমন ঢুকিয়ে দেয়, আবার বলা হচ্ছে কম্বাইন্ডলি দেবো, পরে আবার ভাগ করে করে দূরে নিয়ে যাবো, এগুলো একটা টেম্পোরারি সলিউশন হতে পারে কিন্তু এতে স্টেশনের পুরো সৌন্দর্যটা নষ্ট হয়ে যাবে। স্টেশনের ভেতরে একটা মাকড়াশার জাল তৈরি করবে। আমরা এজন্য এটা এলাউ না করার পক্ষে, ওনাদের নিরুৎসাহিত করছি।
এমএএন সিদ্দিক বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা খুব ইজি। তারা আমাদের স্টেশনের পাশে জায়গায় বা রেলওয়ের যে ট্র্যাক আছে সেখানে বা সরকারি জমি আছে সেখানে বা তার পাশে যেকোনো বিল্ডিংয়ে নেটওয়ার্ক বসিয়ে দেয় তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এতে ওনারা সার্ভে করে দেখুক, সেখানে কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা সহযোগিতা করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ