Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারীদের উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ করা শরিয়া-বিরোধী

আল-আজহারের ইমাম

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মিসরের আল আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম বলছেন, আফগানিস্তানে মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত তালেবান নিয়েছে - তা ইসলামী শরিয়া আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েবকে সুন্নি ইসলামের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বলে বিবেচনা করা হয়।
এক বিবৃতিতে তিনি বলছেন, শরিয়া আইনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নারী ও পুরুষকে জ্ঞানার্জন করতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাটিকে ‘হতবাক করার মতো’ বলে বর্ণনা করে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য তিনি তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ সপ্তাহেই আরো আগের দিকে আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সেদেশের নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করে এবং প্রাইভেট টিউশন কেন্দ্রগুলোর প্রতি আদেশ দেয় যেন তারা কোন ছাত্রীকে শিক্ষাদান না করে।
মিসরের ইজিপ্ট টুডে ও আহরাম নামে দুটি সংবাদপত্র জানাচ্ছে, ইমাম আহমেদ আল-তায়েব তার বিবৃতিতে ইসলামের নবীর দু’হাজারেরও বেশি উক্তি উদ্ধৃত করেন এবং বিজ্ঞান, শিক্ষা ও রাজনীতির মত ক্ষেত্রে বহু মুসলিম নারীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
‘ইসলামে নারী-পুরুষকে দেয়া সমান অধিকারের বিরোধী’ : যেসব মুসলিম ও অমুসলিম ‘নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করা ইসলামে অনুমোদিত’ বলে বিশ্বাস করে - তাদের সতর্ক করে দেন ইমাম আল-তায়েব। তিনি বলেন, ‘ইসলাম এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে, কারণ এটা ইসলামে নারী ও পুরুষকে যে সমান আইনী অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে - তার বিরোধী। কাজেই এর বিপরীত কোন দাবি করা ধর্মবিরোধী’।
বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। তবে তালেবানের উচ্চশিক্ষা বিষয়কমন্ত্রী নেদা মোহাম্মদ নাদিম বলেন, মেয়েরা পোশাকসংক্রান্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলছিল না বলেই এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু নারী শিক্ষার্থী এমন পোশাক পরছিল যাতে ‘মনে হতো যেন তারা কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে’। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞানের মত কিছু বিষয় আছে যা মেয়েদের পড়ানোর উপযুক্ত নয়।
‘তালেবান আসার পর আফগানিস্তানের শিক্ষাখাতে সংকট’ : গত ২০ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রীর দেয়া এক চিঠিতে আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়। মন্ত্রী বলেন, এ ঘোষণা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে দেশটিতে নারীদেরকে বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাদ দেয়া হয়। তিন মাস আগে আফগানিস্তান জুড়ে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় মেয়েদের জন্য কিছু বিষয়ে পড়াশোনার উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পশুচিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, অর্থনীতি, সাংবাদিকতা এবং কৃষিতে মেয়েদের পড়াশোনা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছিল। এছাড়া গত বছর তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লিঙ্গভিত্তিক আলাদা শ্রেণীকক্ষ এবং প্রবেশপথ চালু করে। নারী শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র নারী অধ্যাপক বা বয়স্ক পুরুষদের মাধ্যমে পাঠদানের নিয়ম করা হয়।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের শিক্ষা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত বছর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী দেশটি থেকে প্রত্যাহারের পর প্রশিক্ষিত শিক্ষাবিদরা আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে।
গত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানের অর্থনীতি মূলত বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু তালেবানরা মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি তুলে নেয়ার পর থেকে দাতা সংস্থাগুলি আংশিক বা কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা খাতে সাহায্য দেয়া বন্ধ করেছে। অনেক শিক্ষক যারা রয়ে গেছেন - তারা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। গত নভেম্বরে, কর্তৃপক্ষ রাজধানী কাবুলের পার্কে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তাদের দাবি, সেখানে ইসলামিক আইন মানা হচ্ছিলো না।
বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ইয়োগিতা লিমায়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ধারণা করা হচ্ছিলো যে, তালেবান সরকার নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করবে। কয়েক সপ্তাহ আগে একজন নারী শিক্ষার্থী এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। অনেক আফগানেরই ধারণা ছিল যে, এ সিদ্ধান্ত কোনো-না-কোনো দিন নেয়া হবেই - তারপরও এটি ছিল একটি আঘাত। গত মাসেই নারীদের পার্ক, জিম এবং সুইমিং পুল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ বছরের মার্চ মাসে, তালেবান সরকার মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেনি। তবে গত এক বছরে তালেবান নেতাদের সাথে কথোপকথন থেকে বোঝা যায় যে, মেয়েদের শিক্ষার ইস্যুতে তালেবানের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু তালেবান সদস্য বলছে, তারা আশাবাদী এবং তারা মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Harunur Rashid ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:০০ এএম says : 1
    This is the final authority in sharia laws. May Allah SWT. bless this scholar of Islam. Thanks for speaking out against those with little knowledge of Islam.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৬ এএম says : 0
    পর্দার বিধান পুরোপুরি মেনে উচ্চশিক্ষায় বাধা অতীতে কেউ দেয়নি। খামোখা গ্রুপিং টেলাটেলি আর ধাক্কা ধাক্কি করার প্রয়োজন আছে বলে মনেকরি না।
    Total Reply(0) Reply
  • HM Abdur Rahim ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৬ এএম says : 0
    আল আজহার থেকে মূল আরবী যেটা দেওয়া হয়েছে সেটাই শরিয়া-বিরোধী বলা হয় নাই মানুষের আকাঙ্খা বিরোধী বলা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abu Bokor ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৬ এএম says : 1
    পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা সাময়িক নিষিদ্ধ করেছেন । তাদের দেশের পরিস্থিতি তারাই ভালো জানেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • আনোয়ার পন্ডিত ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
    ইলম অজন করার কথা বলছে
    Total Reply(0) Reply
  • আনোয়ার পন্ডিত ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
    ইলম অজন করার কথা বলছে
    Total Reply(0) Reply
  • A B M ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 1
    নামে সুন্নী আলেম হলেও চেহারা তো তা বলে না!!! এমন লোকের ফতোয়া তো ভয়ানক!!! বাদশা আকবরের ও এক জন বড় আলেম ছিলো, আর তার সাহায্যেই ইসলাম কে ধ্বংস করে নতুন এক ধর্ম প্রচলন করে আকবার।
    Total Reply(0) Reply
  • Monirul islam ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৯ পিএম says : 0
    এই ইমামের কথা তখনই সঠিক হতো,যখন তালেবান মেয়েদের পড়াশোনা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে। তাদের পড়াশোনা যেহেতু সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে,তাই তাদের দোষারোপ করে কোন লাভ নেই। তাই আগে সঠিক খবর জেনে, তারপর কথা বলুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ