Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি জোরদার করতে নৌবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৯ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নৌবাহিনীর কমিশন্ডপ্রাপ্ত নতুন কর্মকর্তাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সততা, নেতৃত্ব ও আত্মউৎসর্গের গুণে বলীয়ান হয়ে, সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদেরকে (নৌবাহিনীর সদস্য) সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি (বিএনএ)-তে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘মিডশিপমেন্ট ২০২০ আলফা ব্যাচ’ এবং ‘ডাইরেক্ট এন্ট্রি ২০২২ ব্রাভো ব্যাচ’-এর ক্যাডেটদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশকে একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী সব সময়ই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা যে কোন দুর্যোগ চলাকালে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও ত্রাণ বিতরণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি চাই নৌবাহিনীর নতুন কর্মকর্তারা আন্তরিকভাবে কাজ করুক। আপনাদের সব সময়ই শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে এবং দেশপ্রেমকে হৃদয়ে ধারণ করে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’

তিনি আরো আশা করেন যে, নতুন কর্মকর্তারা এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে এবং যথাযথভাবে নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে এবং সেই বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তির জ্ঞানে নিজেদের প্রস্তুত করবে।

তিনি বলেন, ‘ তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও যে কোন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ডিজিটালি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও ‘উন্নত বাংলাদেশে’ পরিণত হবে- যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্ভাব্য বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করতে তাঁর সরকার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সমৃদ্ধ একটি অত্যাধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কারো সঙ্গে যুদ্ধে না জড়িয়ে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ এর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ ও সর্বাধুনিক সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই- যাতে করে আমরা সম্ভাব্য বহিঃশত্রুর হামলা প্রতিহত করতে পারি এবং যদি কোন যুদ্ধ হয়, তবে তাতে জয়লাভ করতে পারি।’

তিনি বলেন, এ লক্ষে তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী রণতরী নির্মাতা ও সিস্টেমে পরিণত হচ্ছে এবং এর ফলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য স্থানীয় শিপইয়ার্ডেই জাহাজ নির্মাণ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডে পাঁচটি টহল জাহাজ ও দুটি বৃহৎ টহল জাহাজ নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। আরো পাঁচটি টহল জাহাজের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনী তিন বাহিনীর জন্য আইএফএফ (আইডেন্টিফিকেশন অব ফ্রেন্ড এন্ড ফো) সিস্টেম প্রস্তুত করেছে। এখন নৌবাহিনী (রণতরী ও সিস্টেমের) ক্রেতা থেকে একটি ‘নির্মাতা’ বাহিনীতে পরিণত হতে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আর এভাবে এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টালেনের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত- যেটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল।
তিনি আরো বলেন, বিএনএস শের-এ-বাংলার নির্মাণকাজ চলছে। কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মিত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সরকার এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ৪টি ফ্রিগেট, ৬টি কর্ভেট, ৪টি বৃহৎ টহল জাহাজ ও ২টি প্রশিক্ষণ জাহাজসহ মোট ৩১ রণতরী যুক্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি, সরকার দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল হিসেবে ‘স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং এন্ড স্যালভেজ কমান্ড’ এবং নেভাল অ্যাভিয়েশন উইং প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালে নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত করেছি। এরফলে আজ আমাদের নৌবাহিনী ত্রি-মাত্রিক নৌবাহনীতে পরিণত হয়েছে।

খুব শিগগিরই এই বাহিনীতে দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনীর জন্য তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাঙ্ক নির্মাণের কাজ চলছে। নৌবাহিনীতে সর্বদাই রণতরী, সাহায্যকারী জাহাজ, আধুনিক সমর সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরসহ সাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার, নৌযান ও সমুদ্র অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট সামুদ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্ট (কমফ্লোট ওয়েস্ট) এর অবকাঠামো উন্নয়ন করছি। এছাড়াও নৌবাহিনীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে নৌবাহিনী ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ-২০২২’ আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি ছাদ খোলা গাড়িতে চড়ে পাসিং আউট প্যারেড পরিদর্শন করেন।

অনুষ্ঠানে, ২০২০ আলফা ব্যাচের মোট ৩৫ মিডশিপমেন কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। ২০২২ ব্রাভো ব্যাচের ৬ জন ডাইরেক্ট এন্টি অফিসার হিসেবে উন্নীত হন।

প্রধানমন্ত্রী সেরা দুজন অল-রাউন্ড মিডশিপমেন্টের হাতে সোর্ড অব অর্নার ও সিএনএস গোল্ড মেডেল এবং সেরা ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারের হাতে বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক তুলে দেন।

সূত্র: বাসস



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ