পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ এ বাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ডের মতো ন্যক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। বাহিনীর সব সদস্যের সহযোগিতায় সেই সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ আমরা পাস করেছি। এই বাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিজিবি তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে।
বিজিবিতে নারী সদস্য নিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিতে ৮৮তম ব্যাচে প্রথমবারের মতো ৯৭ নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সফলভাবে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছে। বিজিবিতে নারী সৈনিক নিয়োগের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। এ বছর ৮৯তম ব্যাচে আরো ৯৩ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজে প্রশিক্ষণরত আছে এবং ৯০তম ব্যাচে আরো ১০০ জন নারী সৈনিক ভর্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে একটি স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এ বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এয়ার উইংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজিবি সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআরের বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সারা দেশে প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসে প্রচারের জন্য ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ বাহিনীর দুজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফসহ আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মোকাবিলা করতে গিয়ে এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য শাহাদত বরণ করেন। আমি তাদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন এবং একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। বিজিবি’র উপমহাপরিচালক আমিরুল ইসলাম শিকদার কমান্ডার হিসেবে প্যারেড পরিচালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫৯ জন বিজিবি সদস্যের মাঝে বীরত্বপূর্ণ এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক বিতরণ করেন।
বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪টি নতুন সেক্টর ও ৪টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন অনুমোদিত ১৫টি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিজিবি’র জনবল বৃদ্ধি করেছে। বিজিবিতে ২০০৯ সাল থেকে এ যাবত ২৪,২৩৪ জন জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন পদে ২৬,২২১ জন বিজিবি সদস্যকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বেশ কিছু কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১৫টি ‘সাইক্লোন শেল্টার’ টাইপ বিওপি, ৭৫টি ‘এ’ টাইপ বিওপি এবং ১২৮টি বিএসপি নির্মাণ। এছাড়াও আরো নতুন ৬০টি বিওপি এবং ২০টি প্রিফেব্রিকেটেড শেল্টার টাইপ বিওপি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এবং মায়ানমারের সাথে ৪৭৯ কি.মি. অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং ৫৫টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৩৭০ কি.মি. সীমানা ইতোমধ্যে নজরদারীতে আনা হয়েছে।
বিজিবি’র আধুনিকায়নে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর উন্নয়নকল্পে অপারেশনাল ও লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে নাইট ভিশন বাইনোকুলার, থার্মাল ইমেজিং বাইনোকুলার, নাইট ভিশন গগল্স, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, বুলেট প্রুফ হেলমেট, জেনারেটর, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোরেজ ড্রাই কন্টেইনার, জিপিএস উইথ কলিগ পজিশন এবং স্যাটেলাইট ফোন ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন গঠন, ডগ স্কোয়াড গঠন, রিভারাইন ব্যাটালিয়ান গঠন, সৌরবিদ্যুতায়ন, ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় ডিজিটাল ডাটা নেটওয়ার্ক (ডিডিএন) থেকে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন)-এ উন্নীতকরণ, বিজিবি সদস্যদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ, বিজিবি সদস্যদের রেশন বৃদ্ধি, তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যদের কল্যাণের জন্য হাসপাতাল, বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নির্মাণ এবং সীমান্ত ব্যাংক গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঊনিশ’শ একাত্তর সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি এবং অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের শুরু। এই যুদ্ধে এক মরণপণ সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি। এই সংগ্রাম অনেক বেশী সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। তবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে কঠোর পরিশ্রম করি এবং সৎপথে থাকি তবে, ইনশাল্লাহ জয় আমাদের অনিবার্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি অদম্য, বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। এ দেশ এগিয়ে যাবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই পৃথিবীতে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন সফল হবে। পরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ দরবারেও যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।