Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে

সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৫৪ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়েছিল এদেশে। পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী, যে সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা জনগণের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের টু-থার্ড মেজরিটি নিয়ে তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করত, সেই প্রক্রিয়াটা সুপ্রিম কোর্ট অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছে। দেশে এখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মানুষের জীবন মান উন্নত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তীয় উপলক্ষে আয়োজিত দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, কোনো কথা নেই, বার্তা নেই, হঠাৎ একজন উর্দি পরে, সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দিল, আজ থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে গেল। ঠিক আইয়ুব খান যেমন সেনাপ্রধান থেকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিল। একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল জিয়া ও এরশাদ। আইয়ুব খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে দিলো। এই যে একটি ধারাবাহিকতা সংবিধান লঙ্ঘনে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়েছিল এদেশে। অথচ আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। সেই প্রজাতন্ত্রের মালিক যারা তাদের অস্বীকার করে ক্ষমতা দখল করে। সেই ক্ষমতা দখলের পালা আজ বন্ধ হয়েছে। কারণ এ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেসব পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের ওয়ান থার্ড মেজরিটি নিয়ে তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করত। সেই প্রক্রিয়াটি সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।

বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সব সদস্যকে হত্যার পরও বিচার চাইতে পারেননি জানিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে আর না হয়, সে ব্যাপারে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের বিচারহীনতার কষ্ট যেন আর কেউ না পায়, সে ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি আইনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা, ভাইবোন মারা গেলেন, আর আমি বিচার চাইতে পারব না। অথচ তাদেরই অনেকে বিচারের ধারক-বাহক বলে। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যেন আর না পড়ে। দেশে আইনের শাসন থাকবে। মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। সাহস করে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে যারা রায় দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কারণেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (কালো আইন) বাতিল করতে পেরেছি। জাতির জনকের হত্যার বিচার করতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। সেই কারণেই আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার করতে পারি। সাহস করে এই অধ্যাদেশ যারা বাতিল করে রায় দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। অধস্তন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত যারা এ রায় বহাল রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে যারা এখানে উপস্থিত রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম সাহেব। তার রায় দেয়ার ফলেই কিন্তু খুনিদের ফাঁসি দিতে পেরেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার আকাক্সক্ষা ছিল বাবা হত্যার রায় যখন হবে, তখন আমরা দুই বোন একসঙ্গে থাকব। কিন্তু থাকতে পারিনি, রেহানা তখন লন্ডনে ছিল। কিন্তু লন্ডন থেকে টেলিফোনে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা ছিল, দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা ছিল সরকারপ্রধানের হাতে। আমরা দিয়ে দিয়েছি বিচার বিভাগের প্রধানের হাতে। আমরা বাজেট দিয়ে দিই। বিচার বিভাগের যে পৃথকীকরণ সেটার নীতিমালা প্রণয়ন করে, স্থায়ী আইন গঠন করে। আমরা বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। জুডিশিয়াল প্রশিক্ষণকেন্দ্র বাংলাদেশে নেই, এটা ছিল অবাক কাণ্ড। ড্রাফট উইং ছিল না। সেটি তৈরি করে দিয়েছি। বিচার বিভাগের নানা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিচারপতি, বিচারক ও আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মতো কেউ যেন আর বিচারহীনতার কষ্ট না পায়।

সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের জন্য নেয়া তার সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, লিগ্যাল এইড আইন সহায়তা কেন্দ্র আমরা তৈরি করে দিয়েছি। এখানে ফোন করে যে কেউ আইনি সহায়তা নিতে পারে। আমরা সেই সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ শুরু করে দিয়েছি। এটার কিছু রায়ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যারা গণহত্যা করেছিল, মেয়েদের পাশবিক নির্যাতন করেছে। এসব অপরাধের বিচার সারা পৃথিবীজুড়ে হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খুঁজে খুঁজে বের করে করা হচ্ছে। আমাদের দেশে কেন করা হবে না। কাজেই যারা এই বিচার করেছেন তাদেরও আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আদালতে বাংলায় রায় লেখা শুরু হয়েছে। এটা সকলের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য। যেমন আমরা যারা ইংরেজি কম বুঝি, ভালো জানি না, আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। সত্যি এই রায়গুলো যেন আমরা বুঝতে পারি। কাজেই সেই সুযোগ দেয়া উচিত। সারাদেশের ৮টি বিভাগে মামলা মনিটরিং করার জন্য ৮ জন বিচারপতির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিচার বিভাগের কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার মনিটরিং করছেন বিচারপতিরা। ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছে। অধস্তন আদালতের মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক গতি পেয়েছে। মামলা দায়েরের তুলনায় মামলা নিষ্পত্তির হার শতভাগ বেশি হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায়। এজন্য মাননীয় বিচারপতিদেরকেও আমি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই জনগণের পক্ষ থেকে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ অন্যান্য বিচারপতিগণও বক্তৃতা করে। দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের গতকাল ছিল সমাপনী দিবস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ