জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ধ্বংস করতে খুনি ও যুদ্ধাপরাধীরা যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এতই সোজা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা? আওয়ামী লীগ পারে। আইয়ুব খানকে উৎখাত করেছি, ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি, জিয়া যেখানেই গেছে আন্দোলন তার বিরুদ্ধে হয়েছে, এরশাদকে উৎখাত করেছি, খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট চুরির পর তাকে উৎখাত করেছি। আবার খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল সেটাও বাতিল হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগ পারে। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা এত সহজ নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিজয় আমরা এনেছি, এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত করেই চলতে হবে। আবার যেন ওই খুনি, যুদ্ধাপরাধী, যাদের আমরা বিচার করেছি, তারা ক্ষমতায় এসে এই দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। নইলে বিএনপি বিজয়ের মাসে (১০ ডিসেম্বর) বিজয় উৎসব না করে; যেদিন থেকে পাকিস্তানি বাহিনী দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে সেদিন ঘোষণা দেয় যে সরকার উৎখাত করবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে তারা চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে যেমন ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি তার ভোগান্তি এ দেশের মানুষের হয়েছে। তাই মানুষকেও সজাগ থাকতে হবে। আবার তারা ভোগান্তিতে পড়বে, নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে এগিয়ে গিয়ে গড়ে তুলবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ।

৭টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বামপন্থিরা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে এবং তাদের সঙ্গে আরো কিছু পার্টি দাঁড়াল। আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে, কোথায় বামপন্থি, আর কোথায় ডানপন্থি। যারা বামপন্থি, তারা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। সেই জামায়াত-বিএনপি তাদের সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে। ওই যে বলেছিল না, কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস। সেই কথাই মনে হয়। কোথায় তাদের আদর্শ? কোথায় তাদের নীতি? আর কোথায় কী?

শেখ হাসিনা বলেন, যারা হত্যাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যায় যার বিচার হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামী, দেশের টাকা পাচারকারী, সব ধরনের অপকর্ম, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা, এতিমের টাকা ব্যাংকে রেখে সেই টাকার মুনাফা খাওয়া, এই সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের নেতৃত্বে। আমাদের বড় বড় তাত্ত্বিক, বড় বড় কথা বলে, তারা এক হয়ে যায় কীভাবে- সেটিই আমার প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ পঙ্গু করার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপথে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্রই করেছে। বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে। সেই দলে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে? আর ১০ ডিসেম্বর যেদিন আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা শুরু করল, ১৪ তারিখ পর্যন্ত সমানে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল, কোনো জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী থাকবে না, দেশটা দাঁড়াতে পারবে না, সেটিই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সমর্থন করে কীভাবে? এটি ভাবলে আমার অবাক লাগে। এরা তো ইতিহাস জানে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে নিজে খাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ তো দেশের মানুষকে খাওয়াচ্ছে। দেশে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিচ্ছি। রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সংবিধানে বর্ণিত মানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে কিন্তু সেই ক্ষমতায় আসাটা অত্যন্ত দুরূহ ছিল। জনগণ আমাদের সমর্থন করে, ভোট আমাদের আছে। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপি করে হোক, ষড়যন্ত্র করে হোক, চক্রান্ত করে হোক বার বার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের শক্তিই সব থেকে বড় শক্তি আর একটা বিশ্বাস আর উপরে রাব্বুল আলামিন তো আছেনই কাজেই সেই মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এ দেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। তারপর আবার একটা চক্রান্ত হলো ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ফলে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। অগ্নি-সন্ত্রাস, নির্যাতন কি-না হয়েছে এদেশে। কিন্তু, প্রতিটি সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে থেকেছে। আর আমরা সরকারে যখন থেকেছি এই প্রত্যেকটা জিনিস আমরা মোকাবিলা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হবে, আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য আমাদের ই-গভর্নেন্স, ই-বিজনেস ই-জনগোষ্ঠী সবকিছু আমরা এভাবে করব। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা সবকিছুকেই আমরা সেভাবে গড়ে তুলবো এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আজকের বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে -এর গতিকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের বিজয়ের মাসে বিজয়ের দিনে এটাই প্রতিজ্ঞা হবে যে বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি এখন উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।

অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। এছাড়া আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সিমিন হোসেন রিমি, শেখ বজলুর রহমান, হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।