Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কর্পোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করল আইসিএসবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:৪২ পিএম | আপডেট : ৬:৫১ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২

স্বচ্ছ কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে কর্পোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করল ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)। গত শনিবার রাতে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইসিএসবি। আইসিএসবি’র নির্ধারিত মানদÐ অনুযায়ী ২০২১ সালে কোম্পানিগুলোর সাফল্যের ভিত্তিতে এই পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রমোটিং গভর্নিং এক্সিলেন্স’।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন। উপস্থিত ছিলেন আইসিএসবির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস, কর্পোরেট গভর্নেন্স কমিটি’র চেয়ারম্যান এম নুরুল আলম এফসিএস, কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এসিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

১২টি ক্যাটাগরিতে ডিএসই এবং সিএসই তালিকাভূক্ত বিজয়ী কোম্পানিগুলোকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সালমান ফজলুর রহমান। গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে কোম্পানিগুলোকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।

জেনারেল ব্যাংকিং সেক্টরে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড; মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড সিলভার এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ইসলামিক ব্যাংকিং ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি; আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড সিলভার এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে সিলভার এবং সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড; ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড সিলভার এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড; স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সিলভার এবং ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।

টেক্সটাইল ও আরএমজি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসি; মতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি সিলভার এবং স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ফুড ও অ্যালায়েড ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড; গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিলভার এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি; সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড সিলভার এবং রানার অটোমোবাইলস পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।

ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ লিমিটেড ও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং যৌথভাবে সিলভার অর্জন করেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসি।

ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড; সামিট পাওয়ার লিমিটেড সিলভার এবং ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে; এবং সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড; ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি সিলভার এবং ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বলেন, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রগুলো স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময়। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এই ধরনের বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্রগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটি সাধারণ কাঠামোর মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছে। দেশের সকল তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্পোরেট গভর্ন্যান্স-এ তাদের কর্মক্ষমতা যাচাই করার জন্য আইসিএসবি একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। আমি আইসিএসবি এর সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করছি যাতে করে আইসিএসবি ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নের জন্য আরও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারে।

বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ২০২১ সালের জন্য কর্পোরেট গভর্নেন্স অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং একইসাথে যারা পুরস্কার পাননি তাদেরও অভিনন্দন জানাই। আমি বিশ্বাস করি, আজকে যারা পুরষ্কার পাননি তারা আগামী বছরে আরও ভাল করবে এবং আগামী বছরগুলোতে এ স্বীকৃতি অর্জন করবে। একই সঙ্গে আমি বিশ্বাস করি সরকার কর্পোরেট খাতে পেশাগত উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আইসিএসবির প্রস্তাবগুলো আন্তরিকভাবে বিবেচনায় নেবেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আইসিএসবির এই উদ্যোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। এর ফলে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ, কমপ্লায়েন্স বজায় রাখা এবং কর্পোরেট নির্দেশিকা অনুসরণ করার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে যাতে তারা এই পুরষ্কার অর্জন করতে পারে।

সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এই পুরস্কার বাংলাদেশের অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের গভর্নেন্স ও কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও উন্নত করতে উৎসাহিত করবে; যা দেশে টেকসই কর্পোরেট খাত গড়ে তোলায় এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়েন অবদান রাখবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের সক্ষমতা তৈরি হবে।

আইসিএসবি-এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস বলেন, বেসরকারি খাতকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সমৃদ্ধ ও বিকশিত করার লক্ষ্যে আমি আমাদের মাননীয় প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি মহোদয়বৃন্দকে অনুরোধ করবো আইসিএসবি পেশাকে বিকশিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। যাতে এখান থেকে গড়ে ওঠা পেশাজীবীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে অবদান রাখতে পারেন।

আইসিএসবি-এর কর্পোরেট গভর্নেন্স কমিটি’র চেয়ারম্যান এম নুরুল আলম এফসিএস বলেন, কর্পোরেট খাতে সুশাসন অনুশীলনে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে এবং সুশাসন অনুশীলনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে কর্পোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্সের জন্য জাতীয় পুরস্কার চালু করেছে আইসিএসবি। এটি এখন দেশের কর্পোরেট খাতে বহুল প্রতীক্ষিত আয়োজনে পরিণত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন পেশাজীবী, দেশের নেতৃস্থানীয় কর্পোরেট হাউসের চেয়ারম্যান,পলিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, ইনস্টিটিউটের সদস্যমন্ডলী এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অতিথিবৃন্দ বালাদেশের কর্পোরেট জগতের গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে আইসিএসবির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ