পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকায় কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গতকাল ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। এর আগে তিনি ‘মায়ের কান্না’ নামের নতুন একটি সংগঠনের স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয় তিনি ২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোনের বাসা রাজধানীর শাহীনবাগে যান। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, দুনিয়ার সব দেশেই কিছু লোক গুম হয়, কিছু হারিয়ে যায়। আমেরিকাতে প্রতিবছর আরো অনেক বেশি লোক গুম হয়। আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর এক হাজারের বেশি লোক আমেরিকান পুলিশ মেরে ফেলে বেআইনিভাবে। কত লোক স্কুলে যায়, মলে যায় তাদের মেরে ফেলে। দুনিয়ার সব দেশে কম বেশি হয়।
জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে। এ ঘটনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। রাষ্ট্রদূত হাস বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে জানিয়েছেন। সেগুনবাগিচাস্থ মন্ত্রীর দপ্তরে ওই বৈঠকের পর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান তিনি।
ড. মোমেন বলেন, আজ হঠাৎ জরুরিভিত্তিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎ করে তিনি জানান, শাহীনবাগে একটি বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে যখন যান তখন অনেক লোক ছিল। বাইরেও বহু লোক ছিল এবং তারা রাষ্ট্রদূতকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজন তাকে বলেছে, আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। কারণ তারা (বাইরে ও ভেতরে থাকা লোকজন) আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার কারণে তিনি তাড়াতাড়ি চলে যান। এতে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনি এবং আপনার লোকদের উপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনে বলেছেন যে, না। তবে উনি বলেছেন, উনার গাড়িতে দাগ লেগেছে, তবে তিনি নিশ্চিত না। আমি বলেছি, আপনি এবং আপনার লোকদের আমরা আরো নিরাপত্তা দেব। আপনি অধিক নিরাপত্তা চান, আমরা দেব। যদি আপনার বা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ করে বা অপমান করে আমি তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব। এর বাইরে আমি কিছু করতে পারব না। তবে আপনার প্রোটেকশন আমরা অবশ্যই দেব।
শাহীনবাগে যাওয়ার তথ্য কীভাবে প্রচার হলো? রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রশ্ন রেখে ড. মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আপনি সেখানে গেছেন; এ খবরটা কে প্রচার করল? আমরা-তো জানি না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না। আপনারা আমাদের জানাননি। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ তথ্য কে লিক করল? তিনি এটার উত্তর দিতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, আমি তাকে বলেছি, আপনি বের করেন, আপনি ওখানে যাচ্ছেন এটা কেমন করে লোকের কাছে প্রচার হলো? আপনার লোকই-তো প্রচার করতে পারে। এটা আমরা বলেছি। তিনি একটু দুশ্চিন্তায় আছেন। আমি তাকে বললাম, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার বা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না।
দেশের গণমাধ্যম খুব সোচ্চার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, গণমাধ্যমকে আটকাতে পারব না। আমাদের দেশের গণমাধ্যম খুব সোচ্চার। যদিও আপনারা বলেন, তাদের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। যখনই কিছু হয় তারা ওটার পেছনে লেগে থাকে। আমি তাদের আটকাতে পারব না। আমি তাদের দূরে রাখতে পারি। কিন্তু তাদের বাধা দিতে পারব না। আর ওখানে লোকজন যারা গেছে, তাদেরও আমি বাধা দিতে পারব না। তারা তাদের বক্তব্য দেবে। আমি তাদের আটক করতে পারব না। তিনি বলেন, বানানো তথ্য বিভিন্ন মিডিয়া, ইউটিউবে আসে। আর বিদেশিরাও ওখান থেকে দেখে রিপোর্ট করে ফেলে। এবং লজ্জার বিষয় জাতিসংঘের মতো একটা সংস্থা, যাকে আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস করি তারাও একবার খবর দিল বাংলাদেশ থেকে ৭৬ জন লোক নিখোঁজ হয়ে গেছে। আমরা যখন তাদের কাছে তালিকা চাইলাম, তারা তালিকা দিল এর মধ্যে ১০ জন পাওয়া গেল তারা লিবিয়ায় শান্তিতে আছে আর দুইজন ভারতীয় নাগরিককে পাওয়া গেল। তারা খারাপ কাজ করেছিল তাদের শাস্তি হয়েছে জেলে ছিল এখন বাড়িতে থাকে। জাতিসংঘের মতো একটি সংস্থা তারা যখন অপকর্ম যারা করে তাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রশ্ন করে! জাতিসংঘের পয়সা আমরা দেই, আর তারা যাচাই-বাছাই না করে কেমন করে এমন অভিযোগ করে? যারা এমন কাজ করেছে তাদের চাকরি চলে যাওয়া উচিত। অনেকে অনেক কিছু বলবে, তাদের দায়-দায়িত্ব যাচাই-বাছাই করে তথ্য আমাদের কাছে পেশ করবে। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আমরা চেষ্টা করবো উত্তরণের।
ড. মোমেন বলেন, দুনিয়ার সব দেশেই হয় কিছু লোক গুম হয়, কিছু হারিয়ে যায়।শুধু বাংলাদেশেই না। আমেরিকাতে আরও অনেক বেশি লোক গুম হয়। আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী এক হাজারের বেশি লোক আমেরিকান পুলিশ মেরে ফেলে বেআইনিভাবে। কত লোক স্কুলে যায়, মলে যায় তাদের মেরে ফেলে। দুনিয়ার সব দেশে কম বেশি হয়। আমারা চাইনা আমাদের দেশে বিনা বিচারে একটা লোক মারা যাক। দুর্ঘটনা না হলে আমরা বিচার করি, নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ যদি করে আমরা জবাবদিহিতার আওতায় আনি।
জানা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রাজধানীর শাহীনবাগে সুমনের বাসায় যান। প্রায় ২৫ মিনিট তিনি সেখানে ছিলেন। এ সময় একটি সংগঠনের তরফে পূর্ব নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলা এবং ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা হয়। এতে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। যার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে দূতাবাসের প্রটোকল টিম দ্রুত এবং নিরাপদে স্থান ত্যাগ করে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে ঢাকার মোহাম্মদপুরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে আচমকা হামলা চালিয়েছিলো একদল সশস্ত্র যুবক। সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজ থেকে ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটেছিল। মূলত তেজগাঁও থানা বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালে গুম হন। এরপর থেকে বিএনপির সহায়তা ও পরামর্শে তার বোন আফরোজা ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছেন।
এদিকে কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিদ্রোহ দমনের সময় ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিমানবাহিনীর হাজারের বেশি সদস্য গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করা ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। পিটার হাস রাজধানীর শাহীনবাগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে সেখান হঠাৎ করে কিছু লোক পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করেন।
রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত করার দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে তারা জিয়ার সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। তারা জানান, এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে সেই সময়ের গুমের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।