Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিনম্র শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সকাল ৭টায় প্রথমে প্রেসিডেন্ট এবং পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। শহীদদের স্মরণ করে তারা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পুষ্পার্পণ শেষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, তিন বাহিনীর প্রধান, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আলবদর, আলশামস মিলে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরাজিত বাহিনীর লক্ষ্য ছিল স্বাধীন দেশকে মেধাশূন্য করে দেয়া।
বিজয়ের ঊষালগ্নে পরাজয় অত্যাসন্ন জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের দোসর বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের হত্যায় মেতে ওঠে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে নিয়ে আসা হয় সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে মেধাশূন্য করা। স্বাধীনতা পেয়েও বাঙালি জাতি যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেই নীল নকশা বাস্তবায়ন করাই ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার হীন উদ্দেশ্য। আর তাই এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশসহ বিদেশে পলাতক থাকা আসামিদের দেশে এনে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন শহীদদের স্বজনসহ সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখনো দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। তাদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। এজন্য কূটনৈতিকসহ অন্যান্য তৎপরতা বাড়াতে হবে।

শহীদ শিহাব উদ্দিন শেখের সন্তান শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি বোধ করছি। তবে এখনো পলাতক রয়েছে অনেকে। তাদের অস্তিত্ব লালন-পালন করছেন অনেকে। এ অপসংস্কৃতির মানুষগুলোকে রুখে দেওয়া ও তাদের সঠিক বিচার আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।

শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে ও ‘প্রজন্ম ৭১’র সভাপতি আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে জানানো হয়নি। জাতি জানতে চায়, সরকার কেন তাদের ফিরিয়ে আনতে পারল না?

তিনি বলেন, দেশের মুক্তির জন্য রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়তে ও বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় সম্পন্ন করতে হবে। যারা এদেশ এনে দিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি করে জানাতে হবে। না জানলে কী করে নতুন প্রজন্ম জাতির হাল ধরবে!

শহীদ সৈয়দ মোর্শেদ আলীর সন্তান তাহমিনা খান বলেন, ১৪ ডিসেম্বরের বীভৎসতার স্বীকৃতি আমাদের দাবি। স্বজনদের রক্তের দাবি আমরা ছাড়ব না। সেই গণহত্যার কথা পৃথিবীতে তুলে ধরুন। পরবর্তী প্রজন্মও যেন এই দাবিতে সোচ্চার থাকে।

বিদেশে পলাতক থাকা আসামিদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে সরকারের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতার ঘাতটি নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যারা দেশের বাইরে আছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে। বিদেশে অনেক আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে। তারপরও আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। অচিরেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি। কারো কারো বিষয়ে অগ্রগতিও হয়েছে। আশা করি এ প্রক্রিয়া আমরা দ্রুত সম্পন্ন করতে পারব।

বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন: ১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আমিনুল হক, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি। সেটির আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র। মানুষ স্বাধীনতা পাবে। কথা বলার অধিকার থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। তিনি বলেন, দেশে আজ মানবাধিকার নেই। কেবল চলছে নিপীড়ন নির্যাতন, জুলুম, হত্যা, গুম, খুন আর নির্বিচারে গুলি। এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ আজ তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছে।

আমান বলেন, দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একদলীয় শাসনের চাপে বাংলাদেশের জনগণ অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। এখান থেকে মুক্তির জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো আরেকটি যুদ্ধ, আরেকটি অভ্যুত্থান প্রয়োজন। তিনি বলেন, সেই সংগ্রাম আর অভ্যুত্থানের জন্য মানুষ আজ রাজপথে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মানুষ তার ভোটাধিকার আর গণতন্ত্র ফিরে পাবে সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

বায়তুল মোকাররমে দোয়া: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি, দোয়া মোনাজাত ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের জন্য আত্মদানকারী সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মুনিম হাসান। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মাহবুব আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. সৈয়দ শাহ এমরান, মো. আনিছুর রহমান সরকার, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সাধারণ মুসল্লীগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গতকাল বুধবার সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে তিনি এ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেখানে গিয়ে তিনি এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। গতকাল প্রত্যুষে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। শহীদদের স্মরণে সেখানে তিনি কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামানসহ বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, দপ্তর প্রধান, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৯টায় রায়ের বাজারে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ড. মো. মশিউর রহমান।

উল্লেখ্য, একাত্তরের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন এলাকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করা হয় জগন্নাথ হল, রায়ের বাজারের নদীর তীর ও মিরপুরের কয়েকটি স্থানে। ডা. ফজলে রাব্বী, আবদুল আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ঢাবি শিক্ষক সন্তোষ ভট্টাচার্য, সিরাজুল হক, চিকিৎসক গোলাম মুর্তোজা, আজহারুল হক, হুমায়ুন কবীর, মনসুর আলীসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয় এসময়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে কারণে জীবন দিয়েছিলেন, সেই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও দর্শন নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কেননা তারা অত্যন্ত মানবিক, উদারনৈতিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়।

মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নগর বিএনপির উদ্যোগে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দলীয় কার্যালয় মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য রাখেন।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে দিনটি পালন করা হয়। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) , আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। সকালে সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যূরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, একাত্তরের দোসরের দল জাতিকে যেভাবে মেধাশূন্য ও ধ্বংস করতে ১৪ ডিসেম্বরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, বর্তমান সরকারও সেই পথে হাঁটছে। দিবসটি উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবু, স ম আব্দুর রহমান, মহানগর ও জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোয়াখালীতে দিবসটি পালিত হয়েছে। আলোক প্রজ্জ্বলন ও আলোক প্রজ্জ্বলনের সাথে সাথে শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের হলরুমে দিবসটি উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফি। নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পালের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মান্নান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবি নাজনীন সহ প্রমুখ। দিবসটি জেলার শালিখা ও শ্রীপুর উপজেলায় অনুরূপভাবে পালিত হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, দিনটিকে ঘিরে শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে চিত্রাংক ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের কাউতলীতে শহীদ স্মৃতিসৌধ হিরন্ময়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। পরে জেলা পুলিশ, সভিল সার্জন, উপজেলর পরিষদ, জেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।

রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে শহীদদের সম্মানে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান ও পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান। এ সময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী-১ আসনের আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী (এমপি), সংরক্ষিত নারী আসনের সালমা চৌধুরী রুমা (এমপি)।

নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরে শহীদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এ উপলক্ষ্যে সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ।

ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, দিনটি উপলক্ষে শহরের আর্ট গ্যালারিতে অবস্থিত অপরাজেয় ৭১ এ শহীদ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, ঠাকুরগাঁও ১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি। পরে প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন দফতরের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

বাগাতিপাড়া (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দিবসটি উপলক্ষে উপজেলার বড়ালে প্রশাসনের আয়োজনে সভার আয়োজন করা হয়। ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) সুরাইয়া মমতাজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আ. লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু প্রমুখ।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ৫ নম্বর সাব সেক্টর হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। পুষ্পস্তবক অর্পণে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা প্রমুখ।

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পালন করা হয় এইদিনটি। গতকাল সদরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্বম্ভ মুক্তির সোপানে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। এসময় রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই ছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কোটালীপাড়ায় এ উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এ সভার আয়োজন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। উপজেলা সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম হাজরা।

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় দিবসটি কেন্দ্র করে সভায় বক্তারা হত্যার নিন্দা জানিয়ে ঘাতকদের সমালোচনা করেন। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম হাজরা। এসময় সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফুলবাড়ীতে প্রশাসনের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। এ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন এর সভাপতিত্বে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার, শিক্ষা কর্মকর্তা শমশের আলী মন্ডলসহ অনেকেই।

রামগড় (খাগড়াছড়ি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দিবসটিকে কেন্দ্র করে রামগড়ে সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার উম্রাচিং চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি রামগড় থানা অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান সহ প্রমুখ।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কমলগঞ্জে দিবসটি উপলক্ষে সভা ও মোমবাতি প্রজ্বলনের আয়োজন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা হয়। কমলগঞ্জ ইউএনও সিফাত উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও প্রধান শিক্ষক মোশাহীদ আলীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানসহ প্রমুখ।

ইবি সংবাদদাতা জানান, শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) জিয়া পরিষদ। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান পরিষদের নেতাকর্মীরা। এসময় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন, প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুস সামাদ সহ শিক্ষক- কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ