পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রক্রিয়াজাতকরণে কার্যকর আইন-বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে সৃষ্ট সুশাসনের অভাবে নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখিন হচ্ছে। ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি দূরীকরণে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থার রিসার্চ ফেলো মো: নেওয়াজুল মওলা ও গবেষণা সহযোগী মোঃ সহিদুল ইসলাম।
গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন আইনি দুর্বলতার পাশাপাশি চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি বিদ্যমান। চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ৬টি নির্দিষ্ট রঙের পাত্র রাখার নির্দেশনা থাকলেও জরিপকৃত হাসপাতালের ৬০ শতাংশে তা নেই। এসব হাসপাতালের অভ্যন্তরে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে বর্জ্যকর্মী সব ধরণের বর্জ্য একত্রে বালতি/গামলায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। ৬৬ শতাংশ হাসপাতালে বর্জ্য মজুদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ নেই। বর্জ্য মজুতকরণের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ না থাকায় উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলে রাখা হয়। বিধি অনুযায়ী বর্জ্য পরিশোধনে জন্য অটোক্লেভ যন্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ৪৯ শতাংশ হাসপাতালের অটোক্লেভ যন্ত্র নেই। ফলে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ পরিশোধন না করেই পুন:ব্যবহার করা হয়। এমনকি, ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর বর্জ্য ও সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়।
অন্যদিকে, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকা বাধ্যতামূলক হলেও ৮৩ শতাংশ হাসপাতালে ইটিপি নেই। আবার, বিধি অনুযায়ী চিকিৎসা বর্জ্য শোধন ও অপসারণের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ ও অবকাঠামো তৈরির নির্দেশনা থাকলেও জরিপের আওতাভুক্ত বেশিরভাগ (৮০ শতাংশ) সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভাতে চিকিৎসা বর্জ্য শোধনাগার নেই। মাত্র ৮টি সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভাতে শোধনাগার আছে, এর মধ্যে ৫টিতেই চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধন করা হয় না। জরিপকৃত সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ১৪ শতাংশে চিকিৎসা বর্জ্য অপসারণ করার জন্য কোনো ল্যান্ডফিল নেই। গবেষণার আওতাভুক্ত এলাকার মাত্র একটি সিটি কর্পোরেশনে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল আছে।
পুনঃচক্রয়াণ ও পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন থাকলেও সে অনুসারে বিধিমালায় পুনঃব্যবহার ও পুনঃচক্রয়াণযোগ্য বর্জ্যের আলাদা শ্রেণি তৈরি করা হয়নি। এ ছাড়া বিধিতে পুনঃব্যবহার ও পুনঃচক্রয়াণযোগ্য চিকিৎসা সামগ্রি ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে পুনঃব্যবহার ও পুনঃচক্রয়াণযোগ্য বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনাও হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বর্জ্য পরিবহণের জন্য বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী ট্রলিতে পৃথক কালার কোড ও লেবেল থাকার নির্দেশনা বিধিতে অনুপস্থিত। যার ফলে সকল ধরনের বর্জ্য একই ট্রলি পরিবহণ করায় সংক্রমণ ও পরিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে গত ১৪ বছরেও চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অন্যতম অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনিকাঠামো ও দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত না এবং অংশীজনদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।
জুন ২০২১ থেকে নভেম্বর ২০২২ সময়কালে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করে মিশ্র পদ্ধতিতে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ তথ্যের ক্ষেত্রে প্রথমে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ৪৫টি জেলা নির্বাচন করে জেলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত ৪৭টি সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা এলাকাকে গবেষণা এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়। পরে গবেষণা এলাকার ২৩১টি প্রতিষ্ঠান (১৮১টি হাসপাতাল, ৩৮টি সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এবং ১২টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) এবং এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যকর্মীদের মধ্য থেকে সমানুপাতিক নমুনায়ন পদ্ধতিতে নির্বাচিত ৯৩ জনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি গবেষণার জন্য পরোক্ষ উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আধেয় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হয়।
চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি দূরীকরণে ১১ দফা সুপারিশ পেশ করে টিআইবি। এর মধ্যে রয়েছে, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়, তদারকি ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে ‘কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় সুস্পষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্যকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা এবং চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।