পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এশিয়ার বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি নামে খ্যাত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। হাকালুকি হাওরে ছোট-বড় মিলে রয়েছে প্রায় ২৩৮টি বিল। বছরের বিভিন্ন সময় এসব বিলকে ঘিরে বিরল প্রজাতির পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা হাওর এলাকা। বিশেষ করে শীতকালে সূদুর সাইবেরিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখিদের সমাগম বেশি ঘটে।
এসময় অতিথি পাখিদের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখামুখি হতে হয় হাকালুকিতে বিষটোপে ও ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকারিদের কাছে। এসময় এসব অতিথি পাখিদের সবচেয়ে বেশি নিধন করা হচ্ছে। শিকারিদের ফাঁদে পড়ে অবাধে মারা যাচ্ছে সাধারণ খামারিদের হাঁসও। হাকালুকি হাওরে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে পাখি শিকারিরা সবসময় তৎপর থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে অন্ধকারে। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো ভূমিকা না থাকায় ক্রমেই থামছেনা পাখি শিকার। পরিবেশকর্মী ও পাখিপ্রেমী সহ স্থানীয়রা পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, শীতকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই সাইবেরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। এসব অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে বিলগুলো। হাকালুকি হাওরে অসাধু শিকারিরা বিষটোপ আর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতে হাওরে অতিথি পাখি আসার সাথে সাথে পাখি শিকারিরা তৎপর হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল ঘুরে দেখা যায়, পাখি শিকারিরা কৌশলে অতিথি পাখি নিধনে লিপ্ত রয়েছে। দেখে বুঝার উপায় নেই যে এরা পাখি শিকারি। হাওর পারের জুড়ির বেলাগাঁও গ্রামের মুজিবুর রহমান, জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রামের নজু মিয়ার ছেলে হোসেন মিয়া সহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবক বিষটোপ দিয়ে অতিথি পাখিগুলো ধরে জবাই করে কৌশলে বাজারে ও বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে।
পাখি শিকারি হোসেনকে স্থানীয় বিল ইজারাদার ফয়াজ মিয়া পাখিসহ তাকে হাতেনাতে ধরলে সে পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে এসব কাজ আর করবে না বলে পার পেয়ে যায়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর নিষেধ সত্ত্বেও ফাঁদ পেতে এবং বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার করা হয় হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া ও জুড়ী অংশে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিকার করা ২০টি পাখিসহ দুজনকে আটক করেছিল বনবিভাগ। পরে ১৫ টি পাখিকে পুনরায় হাওরে অবমুক্ত করা হয় এবং মৃত ৫টি পাখিকে মাটি চাপা দেয়া হয়।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, প্রতি বছর শীতকাল এলেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল ও এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে এসব পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেশি আসে। পাখি আসার সাথে সাথে ওৎ পেতে থাকা কিছু অসাধু শিকারিরা প্রতি বছর বিষটোপের পাশাপাশি নানা প্রকার ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করে। বিশেষ করে হাওরখাল, মাইছলা, গজুয়া, নাগুয়া, পিংলা ও বাইয়াবিলে বেশি শিকারের ঘটনা ঘটে। পাখি শিকারিরা রাত-দিন নানাভাবে ফাঁদ পেতে বন্দুক ও জাল দিয়ে হাওরে পাখি শিকার করছে। বিষটোপ খেয়ে পাখির পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে। শিকারিরা পাখি শিকার করে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারসহ বাসাবাড়িতে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেলে এসব পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে।
পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে বনবিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, লোকবল সঙ্কটে অনেক সময় পাখি শিকারিদের ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমাদের প্রধান অন্তরায় লোকবল সঙ্কট। মাঝেমধ্যে আমরা বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের খবর পাই। এ ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও যদি কেউ পাখি শিকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ইনকিলাবকে জানান, অতিথি পাখিরা হাকালুকিতে যাতে অবাধে চলাফেরা করতে পারে আমরা তার ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি পাখি শিকারের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। এছাড়া হাওরে অবাধে পাখি শিকার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।