পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে সবকিছু তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কার্যালয়ের দোতলায় আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অফিস আছে। সেটি বন্ধ থাকে। কিন্তু পুলিশ তল্লাশির নামে সেই অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং ভেতরে সবকিছু তছনছ করেছে। যত ছবি ছিল ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তিনতলাও তছনছ করেছে। এখান থেকে আমাদের সব উপকরণ কম্পিউটার হার্ডডিস্ক আমাদের ফাইলপত্র সব নথিপত্র তারা নিয়ে গেছে। হিসাব শাখা লুটপাট করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রতিটি কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নেতাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রতিটি ফ্লোরের ভাঙচুরের চিত্র দেখান।
কার্যালয়ের ভেতরের দৃশ্য দেশে নেতার হতবাক, হতবিহ্বল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে নগ্ন চিত্র দেখলাম, এটা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। পৃথিবীতে এ রকম নজির নেই। এই ধরনের ঘটনা মহান মুক্তিযুদ্ধেও হয়নি।
তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে জাতীয়তাবাদী দলের অফিস পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী তছনছ করেছে। লুটপাট করেছে। লন্ডভন্ড করেছে। নগ্নভাবে সন্ত্রাস করেছে। তারা নজিরবিহীন বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। এ ছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব অফিস থেকে কম্পিউটার হার্ডডিস্ক টেলিভিশন প্রিন্টার সবকিছু নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের যে একটি হিসাব শাখা আছে, সেখান থেকে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নিচতলায় থাকা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার (আজ) দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
দলের আরেক জন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অপারেশন সার্চ লাইট ২৫ মার্চ, একাত্তরের কালো রাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রার্থীকেও মনে হয় হার মানায়। এটা স্রেফ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ বলেন, প্রতিটি সমাবেশে বাধা দিয়েছে সরকার। সরকার কোন ভিত্তিতে এই ঘটনা ঘটালো তা আমাদের হিসাবে মেলে না। তাদের হিসাবে খেলা কিন্তু বিএনপি এই খেলায় বিশ্বাস করে না। জনগণ বিক্ষুব্ধ, জনগণ রায় দিয়েছে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব না। জনগণ সরকারকে আর চায় না।
তিনি আরও বলেন, গত ৭ ডিসেম্বরের আচরণ প্রমাণ করে, এই সরকার গায়ের জোরের সরকার। ১০ দফা দিয়েছি। এই ১০ দফাকে সমর্থন করে যারা যুগপৎ আন্দোলন করবে তারাও কর্মসূচি দিয়েছে। নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৩ ডিসেম্বর নয়াপল্টন অফিসের সামনে থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি।
ড. মোশাররফ আরও বলেন, রোববার অফিসে আসতে পেরেছি, কি কি খোয়া গেছে তার তালিকা করছি। তারপর সীদ্ধান্ত নিব কি করব। ১০ ডিসেম্বরে যা প্রত্যাশা করেছিলাম তার থেকে বেশি জনসমাগম হয়েছে। তারপর সরকার যদি এটাকে ব্যর্থ বলে তাহলে কিছু বলার নেই। সরকার দিশেহারা, তারা কোন সময় কি বলবে তা নিয়ে আমরা ভ্রুক্ষেপ করি না। দেশের জনগণও জানে সরকার যা বলে তা করে না।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন মোশাররফ। তার দাবি, আজকে জনগণের পিঠ দেয়ালে লেগে গেছে। তাই জনগণ আমাদের এই বার্তা দিয়েছে- যে সকল ক্ষেত্রে এই আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের পক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অর্থনীতিকে মেরামত, বিচার ব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা এবং আইনশৃঙ্খলা বিভাগের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এদের পক্ষে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। অতত্রব জনগণ রায় দিয়েছে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের কথা বলছি, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের নির্দেশের তাদের দলের কর্মীরা ১০ তারিখ ঘিরে এমন কোনো অপকর্ম নেই করেনি। আতঙ্কিত করেছে সরকার, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে দেখিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন গণতান্ত্রিকভাবে করব এবং এই সরকারের বিদায় জানাব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ১০ তারিখের সমাবেশের লক্ষ্য ছিল মানুষের সামনে তুলে ধরা বর্তমান সরকারের চরিত্র। বিরোধী দল সরকারের একটি অঙ্গ, তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকতে পারে না এবং নেইও।
কার্যালয়ে ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করে এর বড় প্রমাণ আর কিছু নেই। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের আচরণ কোনো সরকার করতে পারে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই। এখানে যেটা রয়েছে, তা জঙ্গলের সরকার।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচিকে ঘিরে গত ৭ ডিসেম্বর দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক। সংঘর্ষের পরই বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের অভিযানের পর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল এবং নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় প্রায় চার দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। গত রোববার সকালে নয়াপল্টন এলাকার সড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর দুপুরে কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) কার্যালয়ে যান।
সংঘর্ষে নিহত মকবুলের পরিবারকে সহযোগিতা: নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মকবুলের হোসেনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মকবুলের স্ত্রী হালিমা আক্তারের হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেন বিএনপি নেতারা। নিহত মকবুলের মেয়ের মিথিলা আক্তারকে পড়ালেখার যাবতীয় দায়িত্ব¡ ঢাকা মহানগর উত্তর বড় বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক নিয়েছেন। মকবুলের একমাত্র মেয়ে মিথিলা আক্তার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, নিহত হওয়ার পর মকবুলের পরিবারকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এই পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি।
মিজুর পরিবারের পাশে বিএনপি নেতারা: রাজধানীর ওয়ারী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মেহবুব মিজুর বাবা মিল্লাত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সোমবার দুপুরে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
টুকু বলেন, তদন্ত ছাড়া পুলিশ কীভাবে বলছে উত্তেজিত হয়ে স্ট্রোক করেছেন? যুবদল নেতা মিজুর বাবা হত্যার বিচার একদিন হবেই। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না বলেন, দল মিজুর পরিবারের পাশে থাকবে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে মধ্যরাতে যুবদল নেতা মিজুকে খুঁজতে এসে না পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার বাবা মিল্লাত হোসনকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না হওয়ায় ও যুবদল নেতার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখায় পুলিশের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।