Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করে পাকবাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সব জায়গায় পরাজয় এবং মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ঢাকার কাছাকাছি মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করায় পাকিস্তানিরা বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু সাহায্য না পেয়ে তারা শেষ কামড় হিসেবে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার’ নীলনকশা চূড়ান্ত করে।

পাকিস্তান একদিকে যেমন সামরিক সাহায্যের প্রতীক্ষায় ছিল তেমনি তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ১১ ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভোরেন্টসভকে ডেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার হুশিয়ার করে দেন।
তিনি বলেন, পরদিন মধ্যাহ্নের আগে ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরদিন ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা মুখ থুবড়ে পড়ে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। এদিকে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা দূরত্বে গভীর সমুদ্রে চলে আসে মার্কিন সপ্তম নৌবহর।

সেদিন রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের ডেকে পাঠান সদর দফতরে। তার সভাপতিত্বে গোপন শলাপরামর্শ অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। তাদের হাতে ফরমান আলী তুলে দেন বুদ্ধিজীবীসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা।

মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা ও হালুয়াঘাট হয়ে ময়মনসিংহ সড়কের দিকে এগিয়ে যান। দিনাজপুর অঞ্চলের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী খানসামা থানা আক্রমণ করে। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১৫ জন ও সাত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের হাতে এক মেজরসহ পাকবাহিনীর ১৯ জন ধরা পড়ে। এদিন নীলফামারী হানাদারমুক্ত হয়।

এদিন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মিত্রবাহিনী ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। রাতে টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভারতকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলেন।

তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি ঘোষণা করেন, কোনো শক্তি নেই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে। রেডিও পিকিং ঘোষণা করে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তান আক্রমণ করে মূলত চীনকেই দমন করতে চায়। এপিআইয়ের জেনারেল ম্যানেজার ও সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় আল বদর বাহিনী। তার বাসায় যখন হানা দেয়া হয় তখন তিনি বিবিসির জন্য সংবাদ লিখছিলেন।

ওই অবস্থায় তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে আলবদররা। এদিন সকালে নরসিংদী মুক্ত হয়। তিন দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ভারতীয় বাহিনীর পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, দুটি গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও ৫৭ ডিভিশনের ট্যাকটিক্যাল হেডকোয়ার্টার মেঘনা অতিক্রম করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতীয় জেনারেল নাগরার বাহিনী চলে আসে টাঙ্গাইলে। বিমান থেকে অবতরণ করা ছত্রীসেনারা মিলিত হয় নাগরার বাহিনীর সঙ্গে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ