Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৯ শতাংশ গরীব ও ১৫ শতাংশ ধনীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

সার্ক অঞ্চলের অর্থনীতিতে এমএফএসের প্রভাব নিয়ে সেমিনার

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : শহরের ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক। এছাড়া গরীবদের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক যেখানে ধনীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। দেশের বিভিন্ন জেলার ৮ হাজার ৯০০টি পরিবারের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সেমিনারে মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত এ জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. বাকী খলিলি।
‘সার্ক অঞ্চলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) প্রভাব’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের সার্ক ফাইন্যান্স সেল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। অতিথি হিসেবে ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান ও এস কে সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আখতারুজ্জামান, পল্লিকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমাদ, ইনস্টিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. বাকী খলিলি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জরিপকৃত পরিবারগুলোর মধ্যে ২৭ শতাংশ নিজের অথবা অন্যের মোবাইলের মাধ্যমে সেবা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সুযোগ থাকলেও পরিবারগুলোর প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। দেশের ৭টি বিভাগের মধ্যে বরিশাল ও রংপুর বিভাগের ২১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। তবে তা শহরকেন্দ্রিক। শহরের ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক। এছাড়া গরীবদের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক যেখানে ধনীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশ।
প্রবন্ধে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৪টি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ হচ্ছে। অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম যেমন আমানত রাখা ও ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি হচ্ছে না। ভারত ও পাকিস্তানে সফলভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে ৫৬ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে জানে না। এটি এদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ও দক্ষতা এবং অবকাঠামো ও প্রতিযোগিতা মোবাইল ব্যাংকিং প্রসারের জন্য চ্যালেঞ্জ।   
ড. বাকী খলিলি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন বাড়িয়ে আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব। ২০২০ সালের মধ্যে আয় বৈষম্য কমপক্ষে ৫ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে শুধুমাত্র মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটিয়ে।  
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশের ২০টি ব্যাংক অনুমোদন নিয়ে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ১৩ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ৩ কোটি ৯০ লাখের মত মোবাইল ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে। প্রতিদিন এতে ৭০০ কোটি টাকার মত লেনদেন হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বড় বাজার। ২০১৫ সালে ১০ কোটি ২০ নিবন্ধিত একাউন্ট ছিল। এরমধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ সচল। বিশ্বের ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ গ্রাহক রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। তবে এ অঞ্চলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলে প্রাপ্ত বয়স্কদের একাউন্টের পরিমাণ খুব কম মাত্র ৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিংয়ে সেবার আওতা বহির্ভূত অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিং বিকশিত হচ্ছে। পাশাপাশি মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস অর্থায়ন ইত্যাদির ঝুঁকিও বাড়ছে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।  
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস.কে.সুর চৌধুরী বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটদের নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি। আর ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই মোবাইল ফোন অপারেটরদের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। এস. কে. সুর চৌধুরী বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেয়ার পর কোন অনিয়ম করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকবে না। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা সহজ। কিন্তু তফসিলি ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে মনিটর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সন্ত্রাসে অর্থায়নের সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবিসহ অন্যান্যদের ক্ষেত্রে এ মনিটরিং কঠিন। তাই এই মুহূর্তে মোবাইল অপারেটদের ব্যাংকিং সেবার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। ডেপুটি গভর্নর বলেন, বর্তমানে দেশে ৫৬টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টিকে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যা নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে মোবাইল অপারেটদের নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। মোবাইল অপারেটরদের ব্যাংকিং সেবা দেয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে আমাদের ব্যাংকগুলোর স্বার্থ দেখতে হবে।
দিনব্যাপী এ সেমিনারে সার্কভুক্ত দেশ ভূটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই প্রতিনিধিরা তাদের দেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেন।   



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ