Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে

রোকেয়া দিবসে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৪ এএম

দেশের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জনের পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নারী জাগরণের মধ্যেই আমাদের সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০২২’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নারী জাগরণের মধ্য দিয়েই ১৯৪১ সাল নাগাদ সেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যান ও করেদিলাম যাকে ভিত্তি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে। তিনি আরো বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাঞ্জা প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে সেখানে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিদ্যুৎ,পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন। আন্তর্জাতিক বিশে^ যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা এসেছে সেটা যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার ও ফ্রি ল্যান্সারদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রজেক্টের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যেখানে উদ্যোক্তা একজন নারী এবং একজন পুরুষ। সেখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে দেশের নারী সমাজ। আর এর মাধ্যমে স্বল্প শিক্ষিত একজন নারীও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে। কাজেই সারাদিন ঐ ফেসবুক আর এসব না দেখে তারা যদি এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়, ফ্রি-লান্সিং করে তাহলে কিন্তু সেখানে বসে সে কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে। একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে বসে কিছু শিক্ষা নিয়ে সে দেশে-বিদেশে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। যেটা অনেক ছেলে-মেয়ে করে যাচ্ছে।
কম্পিউটার প্রযুক্তি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষা একেবারে জেলা এবং উপজেলা ভিত্তিক করে দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে সুবিধার জন্য ‘তথ্য এপিএ’ সার্ভিস চালু করেছে এবং এর মধ্যদিয়ে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ প্রায় হয়েছে। কারণ, দেশের সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারজনই মহিলা। দুর্ভাগ্যের বিষয় আপনারা জানেন আমাদের সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে, এই শ‚ন্যস্থান পূরণ আমরা একজন নারীকে দিয়েই করবো। তিনি আরো বলেন, আমাদের সবাই যোগ্য (নারী/পুরুষ)। কাউকে আমি অযোগ্য বলছিনা। কিন্তু আমাদের এই সমাজকে তো উৎসাহিত করতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য সেটিই আমরা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জন এর পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আমরা আজকে যে যেখানে আছি, কেউ থাকতে পারতাম না। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সমস্ত দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাঙ্খা করেছিলেন আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে তা অর্জনের পথে।
নারী অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী, আগে বর্ডার গার্ডে কোনো মেয়ে ছিল না। সব জায়গায় মেয়েদের সুযোগ করে দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু মেয়ে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি, এসপি পদে মেয়েদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নীচে। সিনিয়রিটির ক্ষেত্রে এক সঙ্গে তালিকা করা হতো। আমি বলেছি, মেয়েদের আলাদা লিস্ট চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তারপরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচন্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে! আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে। তিনি বলেন, আমাদের নারীরা যারা বাইরে কাজ না করে শুধু সংসারে কাজ করে সেখানেও কিন্তু অনেক কাজ। এটাও তাদের কর্মক্ষেত্রে শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকে গবেষণা করেন, মেয়েরা কোথায় কোথায় কাজ করছে, এই জায়গায় যেখানে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। সেই জায়গাকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। আমার মনে হয়, এটা ঠিক নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাঞ্জা প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত দেশগুলো আরো খারাপ অবস্থায় আছে। সে জন্য আমি সকলকে আহবান জানাচ্ছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে সেখানে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিদ্যুৎ,পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন। সবাই সঞ্চয়ী হোন যেন এই আন্তর্জাতিক বিশে^ যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা এসেছে সেই ধাক্কা যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে। আমাদের নিজেদেরকেই নিজেদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেটা আমরা ইতোমধ্যেই নিয়েছি। তিনি বলেন, মাঝে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কিছু কষ্ট হচ্ছে তবে, এটা আন্তর্জাতিক একটা অবস্থার কারণে কিন্তু আমরা যদি আমাদের উৎপাদন ঠিক রাখি, নিজেদেরটা নিজেরা করবো। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না, ভিক্ষা করে চলবো না।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ প্রদান করেন। পদক প্রাপ্তরা হলেন- রহিমা খাতুন, অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগম এডভোকেট, ফরিদা ইয়াসমীন, ড. আফরোজা পারভিন এবং নাসিমা বেগম। পদক প্রাপ্তদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণ পদক, চার লাখ টাকার চেক ও সনদ পত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। ##



 

Show all comments
  • salman ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৫ এএম says : 0
    R tumi 15 bochor a desh bashir Zibon durbi sosho koreso
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ