Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্টে স্থগিত

ব্যাংক চেক ডিজঅনার মামলা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৫৫ এএম

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না-মর্মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছন সুপ্রিম কোর্ট।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ দুই মাস।
ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন। রীটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল বাকী।
এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না-মর্মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার কোর্ট। ব্র্যাক ব্যাংকের করা আপিলের প্রেক্ষিতে চেম্বার জাস্টিস এম.ইনায়েতুর রহিম গত ২৮ নভেম্বর নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।
গত ২৩ নভেম্বর চেক ডিজঅনার মামলা সংক্রান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে-মর্মেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেয়া হয়। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।
আদালত বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের চেক নেয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে। রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। সেইসঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন। ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু। কিন্তু সেটি না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওকুফল করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষীদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেন-তেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য।
ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। অন্যকোনো আইনে নয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও সব ধরণের ঋণের বিপরীতে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো:আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ