Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার ও সমাজের সহযোগিতা প্রয়োজন

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে ড. মসিউর রহমান

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বর্তমান সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়ার মানোন্নয়ন এবং অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, প্রবাসী অভিবাসীদের দুর্দশার সময়ে তাদের পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়নের মহাসড়কে, অভিবাসীরা সবার আগে’। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও সিআইপি সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশী প্রবাসী কর্মীরা তাদের মেধা, শ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব শামছুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের জন্য নির্বাচিত ১২ জন সিআইপি-কে সম্মাননা দেয়া হয়।  মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। আলোচনা শেষে মন্ত্রী ও বিশেষ অতিথিরা অভিবাসী মেলা উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদে চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-এর সচিব বেগম শামছুন নাহার এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম. এ. সবুর প্রমুখ। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালীকরণে অভিবাসীদের অবদান’ শীর্ষক বিতর্কে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করতে এই ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলোজি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রবাসী অভিবাসীদের দুর্দশার সময়ে তাদের পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি অভিবাসীদের আয় থেকে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে অভিবাসীদের বিভিন্ন অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অভিবাসন খাত নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখছে। প্রবাসীদের আয় নিয়ে সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় প্রবাসীদের পাঠানো টাকা বিভিন্ন ভাবে খরচ হয়ে যায়। তাই তিনি এ খাতে সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিদেশে যেতে আগের তুলনায় এখন খরচ কমেছে উল্লেখ করে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণদান কর্মসূচীর উল্লেখ করেন। ২০১৬ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রায় ৮৪২ মিলিয়ন ঋণ প্রদান করেছে। তিনি প্রবাসীদের জন্য সরকারের দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি অভিবাসন খাতের ওপর আরো গুরুত্বারোপ করেন। প্রবাসীদের পরিবারের দুর্দশায় পাশে দাড়ানোরও আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী পরিবারের সহযোগিতায় সিএসআর কার্যক্রম সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার বলেন, প্রতি বছর শ্রম বাজারে প্রায় ২০ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৫ লাখ আর বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ লোকের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৫০০ মার্কিন ডলার যেখানে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকায় এর পরিমাণ ৪০০০ মার্কিন ডলার। তাই এ খাতে বিনিয়োগ দরকার।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিরাপদ ও নৈতিক অভিবাসনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল বিদেশে কর্মী প্রেরণ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, কর্মীদের বেতন, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে ন্যায্যতা আদায়ে রিসিভিং কান্ট্রিগুলোর সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী দর কষাকষি ও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, অন্য যে কোন খাতের চেয়ে আমাদের অভিবাসন খাতে আয় বেশি। অভিবাসন খাতই এখন সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।
কিরণ বলেন, নিরাপদ অভিবাসনের জন্য কর্মী প্রেরণকারীদের নৈতিক মুল্যবোধ বিবেচনায় রাখতে হবে। আবার যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তারাও যেন হুজুগে পড়ে কোন কিছু না জেনেই বিদেশ না যান। বিদেশ যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই তারা যেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর মাধ্যমে নিয়োগকর্তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশে যান। তিনি দক্ষ কর্মী ও প্রফেশনালস পাঠানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর বলেন, অভিবাসীর সংখ্যা ১ কোটির চেয়ে অনেক বেশি। যারা ফরমাল ভাবে বিদেশ যায় তাদেরই নিবন্ধন হয় আর যারা ইনফরমাল ভাবে বিদেশে যায় তাদের নিবন্ধন হয় না। তাই এ সংখ্যা নিবন্ধনকৃত সংখ্যার অনেক বেশি। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের আয়ের অবদানের উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকসহ জাতীয় পর্যায়ে চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের ট্রফি, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, ওয়েজ ওনার্স কল্যাণ বোর্ড-এর মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এনডিসি, বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সাংবাদিক, গবেষক, এনজিওসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ