পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : কার্লোস মেজিয়া একটি আসবাবহীন ঘরে শুধু মাদুরের উপর তার মেয়েবন্ধুর সাথে ঘুমান। তাদের দুই অল্পবয়সী সন্তানের জন্য ঠা-া টাইলসের উপর একটি প্লাস্টিক শিট বিছানো। তাদের উভয় পাশের প্রতিবেশীরাও তাদের মতই হ-ুরাসের অধিবাসী। খবর এপি।
তার দৈনিক আয় ৮ মার্কিন ডলার। দিনে ১২ ঘণ্টা প্লাস্টিক বোতল টুকরো করে কমপ্যাক্টরে রাখা তার কাজ। এ দিয়ে বিদ্যুত, পানির মূল্য পরিশোধ ও কিছু খাবার কেনার জন্য এ অর্থ পর্যাপ্ত। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থার ব্যবস্থাপনায় গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে মেক্সিকোর ৩২ হাজার অধিবাসী সম্বলিত টেনোসিক শহরে অভিবাসীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
মেজিয়া হচ্ছেন ৮ হাজারেরও বেশী অভিবাসীর মধ্যে একজন যারা এ বছর মেক্সিকো থেকে আশ্রয় চাওয়ার আশা করছেন। তাদের বেশীর ভাগই হ-ুরাস ও এল সালভাদরের অপরাধী চক্রের সহিংসতার শিকার হয়ে দেশ ছেড়েছেন আর অল্পসংখ্যক এসেছেন গুয়াতেমালা থেকে। দেশত্যাগীদের ভিড় দক্ষিণ মেক্সিকোর টেনোসিক ও প্যালেনকিউ এবং পাশর্^বর্তী চিয়াপাস রাজ্যের টাপাচুলার মত শহরগুলোকে অনানুষ্ঠানিক উদ্বাস্তু শিবিরে পরিণত করেছে।
অভিবাসী ও তাদের আইনজীবীরা বলেন, মেক্সিকোতে বসবাস করার ও যুক্তরাষ্ট্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমের ঝুঁকি এবং সাম্প্রতিককালে ভাবি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈরী কথাবার্তা।
এ বছর যারা মেক্সিকোতে আশ্রয় চাইছেন তাদের সংখ্যা ৩,৪২৩ জন যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। জাতিসংঘ উদ্বস্তু বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, এ বছর প্রতিমাসে আবেদনের সংখ্যা প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।
মেক্সিকান উদ্বাস্তু সাহায্য কমিশন বা কোমার বলেছে, এ বছরের অক্টোবর মাসে তারা ৬,৮৯৮ জনের মধ্যে ৪ হাজার জনের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছে । তাদের মধ্যে ২,১৬২ জন উদ্বাস্তু মর্যাদা পেয়েছে। আরো ৪১৪ জন আবেদনকারী যোগ্য বিবেচিত হয়নি। উদ্বাস্তুরা অন্যান্য সরকারী সুরক্ষা পেয়েছে ও প্রত্যর্পণ এড়াতে পেরেছে।
ইউএনএইচসিআরের মেক্সিকো অফিসের পরিচালক রাফায়েল জাভালা বলেন, আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনার কথা ছড়িয়ে পড়ায় আরো অভিবাসী আশ্রয় চাইছে। তিনি বলেন, এ বছর আশ্রয় চাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে।
মেজিয়া (২৭) ও তার মেয়ে বন্ধু সাইমি জুলিও (১৯) তাদের ২ বছরের কন্যা ও ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে অক্টোবরে এল সিবো সীমান্ত ফাঁড়িতে মেক্সিকান ্অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। টেনোসিক অভিবাসী কেন্দ্রে পাঠানোর আগে তাদের ২৬ দিন পৃথকভাবে অভিবাসী আটক কেন্দ্রে কাটাতে হয়।
তারপর তারা আশ্রয় এবং তাদের কাজ করার অনুমতি দেয়ার জন্য আবেদন করে। এক সপ্তাহ পর জাতিসংঘ সংস্থার সাহায্যে তারা থাকার জায়গা পায়। আরো এক মাস পর একটি কাজ পায় মেজিয়া।
আশ্রয় চেয়ে তাদের করা আবেদনের ব্যাপারে জবাব পেতে তাদের তিন মাস লাগতে পারে। এ সময়ের মধ্যে আবেদনকারীরা এলাকা ছাড়তে পারে না। প্রতি সপ্তাহে তাদের অভিবাসন অফিসে গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হয়। তাদের আবেদন নাকচ করা হলে আপিল করে তাদের অপেক্ষা করতে হয়।
মেজিয়া জানায়, সে কখনো যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা ভাবেনি। নিজের ঘরের বাইরে একটি স্তূপের উপর বসে সে বলে, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কঠিন। পথে সহিংসতার ও অপরাধ কর্মের শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে।
অভিবাসীদের মোট সংখ্যার তুলনায় আশ্রয়ের আবেদনকারীদের সংখ্যা অল্প। সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে ৪ লাখেরও বেশী অভিবাসী, যাদের অধিকাংশই মধ্য আমেরিকার, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিম সীমান্তে আটক হয়েছে।
কিন্ত সকল লক্ষণ বলছে অভিবাসীদের আশ্রয় চাওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
’৮০ ও ’৯০-এর দশকে দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ৪০ হাজার গুয়াতেমালান দেশত্যাগ করে।
মধ্য আমেরিকার বর্তমান সহিংসতা অবসানের লক্ষণ নেই। গত বছর এল সালভাদরে প্রতি লাখে ১০৩ জন নিহত হয়। যুদ্ধবিহীন একটি দেশে সহিংসতায় মৃত্যুর এটিই ছিল সর্বোচ্চ সংখ্যা।
২০১৫ হ-ুরাসে প্রতি লাখে নিহতের সংখ্যা ছিল ৬৪। মেজিয়ার দু’ ভাই গত বছর এক দস্যুতার ঘটনায় নিহত হয়। তার জীবনের প্রতিও হুমকি আসে।
টেনোসিকের আশপাশ এখন হ-ুরানদের দিয়ে পূর্ণ। সংকীর্ণ চলার পথের দু’পাশের ঘরগুলোতে তাদের বাস।
ওয়েন্ডি জিমেনেজ ও তার পরিবারের সাথে টেনোসিকে মেজিয়া ও জুলিওর সাক্ষাত হয়। অপরাধী চক্রের নির্দেশ মত ওয়েন্ডির স্বামী অ্যঞ্জেল ক্যাস্টেলন মাদক বিক্রি না করায় তারা তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এর আগে জিমেনেজ সহিংসতায় তার চাচা ও ভাইকে হারায়। জিমেনেজ ও তার পরিবার এর আগে টেক্সাস থেকে সীমান্ত পেরিয়ে মেক্সিকোর নুয়েভো লারেডোতে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের হ-ুরাসে ফেরত পাঠানো হয়। পরদিন তারা আবার দেশ ছাড়ে।
জিমেনেজ বলে, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে সেখানে যেতে পারব বলে মনে হয় না। সে ট্রাম্পের অবেধ অভিবাসী বিতরণের শপথের কথা উল্লেখ করে। তারা মেক্সিকোতে আশ্রয় লাভের সম্ভাবনার কথা শুনে এখানে এসেছে।
প্রশ্নের জবাবে কোমার লিখিত জবাবে বলেছে, সেপ্টেম্বরে ইউএনএইচসিআরের সাথে তারা একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
টেনোসিকে অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা টমাস গঞ্জালেস ক্যাস্টিলো বলেন, এখানে মধ্য আমেরিকার আরো পরিবার রয়েছে যারা অনেক দিন ধরে আছে। তিনি বলেন, সহিংসতার কারণে এ হচ্ছে বাধ্যতামূলক অভিবাসন। এর ফলে সমাজ কাঠামো মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ছে।
জাভালা বলেন, জাতিসংঘ টেনোসিকে আরো আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য কাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।