Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

বিদ্যাময়ীর শিক্ষকদের বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্য

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস : কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা মানছে না শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগমকে ম্যানেজ করে শিক্ষকদের অনেকেই রীতিমতো কোচিং বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। শুধু কী তাই তথ্য গোপন করে বিতর্কিত এক শিক্ষককে প্রত্যয়নপত্র, মডেল টেস্টের নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ক্যান্সার হাসপাতালের নাম ভাঙিয়ে এবং কোয়ান্টামের কোর্সের নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগসমূহ তদন্তে ভুক্তভোগীরা শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগমের জামানায় বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন। লিখিত অভিযোগ মতে, এ বিদ্যালয়ের দিবা শাখার শিক্ষক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু (আরবী) নিজের কর্মস্থল বিদ্যাময়ী স্কুল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে রামবাবু রোডে অবস্থিত জি পালের তিনতলা ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার। এখানে তিনি প্রায় ৫শ’ শিক্ষার্থীকে বিদ্যাময়ী স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোচিং করাচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে একসাথে পরীক্ষার হলে আসন বিন্যাস করে দেয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার হলেও সহযোগিতা করে ভর্তি করিয়ে দিবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক অভিভাবকের কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও খবর চাউর হয়ে ওঠেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, এ বিদ্যালয়েরই আইসিটির শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং দিবা শাখার আশরাফুল আলম আশরাফ দু’জনই একই কায়দায় ময়মনসিংহ শহরের বাউন্ডারী রোডে আরো দু’টি কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য খুলে বসেছেন। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগমকে ম্যানেজ করেই এ কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। মাস পাঁচেক আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের উপ-পরিচালক আব্দুল খালেক তাদের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগমকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে এটি ধামাচাপা পড়ে যায়।
সূত্র মতে, ২০১৫ সালের শেষের দিকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন নাছিমা বেগম। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সাময়িক বরখাস্তকৃত শিক্ষক প্রণব কুমার দে’র ছেলেকে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দেয়ার জন্য বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগম সরকারী তথ্য গোপন করে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেন। এটিও চাকরি বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নাছিমা বেগম বলেন, কর্মরত নয়, সাসপেন্ড হিসেবেই ওই শিক্ষককে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা চলতি বছরেও পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ছাত্রীদের মডেল টেস্ট প্রদানে বাধ্য করেন। আর এর মাধ্যমে অভিভাবদেরকে জিম্মি করে লাখ লাখ আত্মসাৎ করছেন বলেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তবে বদলীর ভয়ে কোন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মুখ খুলার সাহস করেন না বলে ক্যান্সার হাসপাতালের নাম ভাঙ্গিয়ে বিদ্যাময়ীর সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা তুলে এবং প্রতি শিক্ষকের কাছ হতে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা নেন। কিন্তু ঢাকার এক প্রভাবশালীর নাম ভাঙিয়ে তোলা ওই চাঁদার টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগম সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, দুইজন কম্পিউটার অপারেটর ও একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেন। একজন প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত সহকারীর কোন নিয়ম নেই। একই সঙ্গে তিনি পছন্দমতো দুইজন যুবক বেসরকারি কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাহলে এসব শিক্ষকদের বেতন ভাতা কোথা থেকে আসছে এর উত্তরও মিলছে না।
অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের মিলাদ, পুঁজা, ইফতার মাহফিলসহ বিদ্যালয়ের সকল অনুষ্ঠানে পুরস্কার হিসাবে কোয়ান্টামের বই প্রদান করেন। তিনি অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৯ হাজার ৫শ’ টাকা কোর্স ফি নিয়ে কোয়ান্টামের কোর্স করাতে বাধ্য করেন।
দিবা শাখার ১০ শ্রেণীর খ শাখার রোল নং ৬৭ এর শিক্ষার্থী প্রমি রাণী সরকার ঋতুর কাছ থেকে ৯ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ চলতি বার্ষিক পরীক্ষায় ৭ম শ্রেণির গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ সিলেবাসের বাইরে করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাঁকে তার অফিসে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগম বলেন, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের তদন্ত রিপোর্ট ইতোমধ্যেই ডিডি অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। আর শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের কোন পার্সেন্টিজ আমি নেই না। এসব অভিযোগ রীতিমতো হাস্যকর। আমার কোন ব্যাংক ব্যালান্স নেই। কাল্পনিক এসব অভিযোগের ন্যূনতম ভিত্তি নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ