পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলাম একমাত্র ধর্ম পুরুষ-নারীর সমান অধিকার দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মহানবী (সা.) আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন নারীই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হলেন হজরত খাজিদা (রাদি.)। ইসলাম একমাত্র ধর্ম নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে, পিতা সম্পত্তির সমান ভাগ পায় ছেলেমেয়ে। তবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যারা ভুল ব্যাখা দেন তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’ পংক্তির উচ্চারণ করে বলেন, সুতরাং রাষ্ট্রের সব জায়গায় নারীদের কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে সর্বক্ষেত্রে নারীদের কাজের অগ্রাধিকার করে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলেন ডায়ালগ (বিএনপির সঙ্গে) করতে হবে। আলোচনা করতে হবে কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার মতো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে? নির্বাচন করার মতো শক্তি যদি কারও না থাকে তারা হয়তো করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে, তারা ভোট দেবে। খালেদা জিয়া গর্ব করে বলেছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলের নেতাও কোনোদিন হবে না, হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহতালা এ ধরনের গর্ব ভরা কথা পছন্দ করে না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায় লেগে গেছে। এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভী রহমানের হত্যাকারী তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে- এটা কেমন ধরনের কথা, সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি?’ এ সময় জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করেছি। আজকে আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।
ইসলাম ধর্মই একমাত্র নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সম্পদে স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না। তিনি বলেন, আশ্রয়াণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে। মেয়েরা স্বামীদের কাছে কত কিছু দাবি করে। আমার মাকে দেখিনি কোনো দিন কিছু দাবি করতে বরং তিনি বাবাকে বলতেন, তুমি তোমার কাজ করে যাও। সংসারসহ সব কিছু আমি দেখব। ঘাতকের দল যখন আমার বাবাকে হত্যা করে, তখন আমার মা বলেছিলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছ, আমাকেও হত্যা করো।
বিএনপির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন, কোনো আপত্তি নেই। তবে, একজন মানুষের ওপরও আক্রমণ হলে একটাকেও ছাড়ব না। আমাদের ওপর হামলা হয়েছে সহ্য করেছি। মানুষের ওপর হামলা হলে সহ্য করব না। নারীদের ওপর বিএনপির অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে ৬ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও রেহাই পায়নি। ঠিক একইভাবে ’৭১ এ নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান সবাই খুনি। খুনিরা মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে? তাদের কী অধিকার আছে বাংলাদেশে দেশে রাজনীতি করার? তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটা প্রমাণিত। তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষী দিয়ে গেছে। সাজাপ্রাপ্তরা মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জনগণের ভোট চুরি করেছিল। কিন্তু জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। আমাদের নারীদের ওপর অজস্র অত্যাচার করেছিল। কই আমরা তো তাদের মেয়েদের কোনো অত্যাচার-নির্যাতন করছি না। তারা রাস্তায় সেøাগান দিচ্ছে, মাঠে নামছে। আমরা তাদের কোনো বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আমাদের ওপর যেই অত্যাচার করেছে সেটা ভুলব কীভাবে? জীবন্ত মানুষকে তারা পুড়িয়ে মেরেছে। এটা কি বিবেকবাম কোনো মানুষের কাজ? আমরা সন্ত্রাস চাই না। আমরা জনগণ ও দেশের কল্যাণে কাজ করছি। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণ চাই, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেইভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতেও কাজ করে যাব।
নারীদের জন্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল তৈরি করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ আছে। প্রতিটি পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের হিসেব করেই ঘর দেওয়া হয়েছে। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। এতে মেয়েরা চিকিৎসা পায়। মেয়েরাই চাকরি করে। সারাদেশে ৩০ হাজার নার্স ও ৪৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। দুগ্ধপানকারী মায়ের বিনাপয়সায় চিকিৎসা করে দিয়েছি। নারীদের সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষায় ৬০ শতাংশ মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ, বিএনপি কী করেছে। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই তারা অত্যাচার-নির্যাতন করেনি। একইসঙ্গে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। বিএনপির অত্যাচার-সন্ত্রাসের কারণে মানুষ শান্তিতে থাকতে পারেনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে অত্যাচার করেছে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে একইভাবে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করল। আমাদের নেতাকর্মী, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের হত্যা করল। এমন জঘন্য কাজ বিএনপি-জামায়াত করতে পারে, যা কল্পনাও করা যায় না।
বঙ্গবন্ধু নারীদের মঙ্গলের জন্য অনেক কাজ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। পরে দেশে ফিরে জাতির পিতা সুইজারল্যান্ড থেকে নার্স এনে তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। জাতির পিতা সবসময় নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন।
এর আগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টার দিকে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে সাজানো হয়। শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাপলা চত্বর পর্যন্ত ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে যায়।
মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃব্দ বক্তৃতা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।