Inqilab Logo

শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পিপলস লিজিং কোম্পানির অনিয়মে ঝুঁকিতে শেয়ার হোল্ডাররা

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : পুজিঁবাজারে তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিং এর আগে ছোট অংকের লভ্যাংশ দিলেও সম্প্রতি কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। পরিচালকদের নামে জমি কেনা ও সাবসিডিয়ারিতে মার্জিন ঋণ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএস) বিরুদ্ধে। এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টস স্ট্যান্ডার্ডের নীতিমালা পরিপালন করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ ও সম্পদের বিপরীতে বড় অংকের সঞ্চিতি ঘাটতির কারণে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।  
তাদের এই অনিয়মের কারণে শেয়ারধারীরা কোন লভ্যাংশ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, এইভাবে কোম্পানি চলতে থাকলে শেয়ারধারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে করে তারা কোন লভ্যাংশ পাবে না। এছাড়া কোম্পানির এ অবস্থায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোম্পানি।
এর আগে গত বছরই প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের অভিযোগে পিপলস লিজিংয়ের পাঁচ পরিচালককে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বিরুদ্ধে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটির এসব টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে এর সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত নিরীক্ষকের মতামতে বলা হয়েছে, পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনে মার্জিন ঋণ প্রদানে অনিয়ম, সঞ্চিতি ঘাটতি, কোম্পানির টাকায় জমি কিনে তা পরিচালকদের নামে নিবন্ধন করা এবং এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতি না নেয়ার মতো অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টস স্ট্যান্ডার্ডের নীতিমালা পরিপালন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয় পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে।
পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোয়ালিফায়ার অভিমত দিয়েছে এর নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। তাতে বলয় হয়েছে, নিজেদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ১৬ কোটি ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে পিপলস লিজিংয়ের। তবে শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে এ সাবসিডিয়ারি, যার নেতিবাচক ইকুইটি বহন করছে পিপলস লিজিং।
পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালকরা জেনিথ হোল্ডিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রিন রোডে ৬৫ কাঠা জমি কেনার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তবে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানির হিসাব থেকে ১২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জমি কেনা হলেও তা পরিচালকদের মার্জিন ঋণে সমন্বয় করে তাদের নামে নিবন্ধন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমতিও নেয়নি তারা। নিজেদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের ৬৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকলেও আর্থিক প্রতিবেদনে এ কোম্পানির হিসাব বিররণী প্রকাশ করেনি পিপলস লিজিং। যদিও কোম্পানি আইন-১৯৯৪ ও আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস)-১০ অনুযায়ী সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত তথ্য মূল প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করার বিধান রয়েছে।
আগের বছরে কোম্পানিটি অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবেদনের নোট-৯-এর অধীনে ৮৬ শতাংশ এবং নোট-২.০৩-এর অধীন মোট সম্পদের ৩২ শতাংশ ক্ষতি দেখানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতির সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে পারেনি কোম্পানিটি, যা কোম্পানির পুনঃহিসাব বিবরণীতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (বিএএস-৮) সমর্থন করে না।
এদিকে সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ হিসাব বছরে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৩ পয়সা, আগের বছর যেখানে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৭৬ পয়সা। ২০১৪ সালের লভ্যাংশ হিসেবে কোম্পানিটি শেয়ার হোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়।
চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৭৮ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে পিপলস লিজিং, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তাদের ইপিএস ছিল ৬ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১০ টাকা ২০ পয়সা, ২০১৫ সালের একই তারিখে যা ছিল ১৫ টাকা ৯৯ পয়সা। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ৩৪ পয়সা, সেখানে আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১৫ পয়সা। ডিএসইতে পিপলস লিজিং শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৮ টাকা ২০ পয়সা। গত এক বছরে সর্বোচ্চ দর ছিল ১৬ টাকা ও সর্বনিম্ন ৬ টাকা ৫০ পয়সা।
২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ২৮৫ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৬৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৮ দশমিক ৯৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৫৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শেয়ার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ