পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আইয়ুব আলী : চট্টগ্রাম বিভাগের হজযাত্রীদের জন্য নগরীর পাহাড়তলীস্থ দেশের প্রথম হজক্যাম্প পুনরায় চালু করা, হজক্যাম্পের ব্যবহারযোগ্য ভবনসমূহের সংস্কার এবং ক্যাম্পে একটি আধুনিক সম্মেলনকেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নীতিগত প্রাক-সম্মতি প্রদান করেছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের সহকারী হজ অফিসার মো. আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক বরাবরে প্রেরিত চিঠির অনুলিপি পত্রে উল্লেখ করা হয়, ৬৫ বছরের প্রাচীন চট্টগ্রাম হজক্যাম্প ৯.৩৫ একর সম্পত্তির উপর স্থাপিত। এর মধ্যে এক একর জায়গা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। চট্টগ্রাম হজক্যাম্প বর্তমানে সম্পূর্ণ ব্যবহার অযোগ্য। মসজিদ ও ২টি পিলগ্রিম (হজযাত্রী) ভবন ব্যতীত অবশিষ্ট সকল অবকাঠামো অনেক আগেই গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ২টি পিলগ্রিম ভবন সংস্কার করে মুদ্রণ সামগ্রীর আঞ্চলিক অফিস ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কর্তৃক ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ভবন দুটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। এ ক্যাম্প ব্যবহার করে হজযাত্রী প্রেরণ করতে হলে কেবলমাত্র মসজিদ ব্যতীত সবগুলো অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ করার প্রয়োজন হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হজক্যাম্পে অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশনা রয়েছে।
প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলী হজক্যাম্পের বিভিন্ন দালানের সংস্কার ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তর কর্তৃক চট্টগ্রাম হজক্যাম্প পরিদর্শনপূর্বক অনুমোদিত নকশা ও সঠিক স্থানিক নকশা প্রণয়ন করে যথাশীঘ্র চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ ও হজ অফিস ঢাকাকে সরবরাহ করার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে এ উপমহাদেশে ইসলামের প্রাচীনকাল থেকে হজ কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রসিদ্ধ প্রথমে ভারতের মুম্বাই, এরপরই চট্টগ্রামের অবস্থান। মুম্বাইর পাশাপাশি চট্টগ্রামও হজ কার্যক্রম নিয়ে গর্ব করতে পারে। তার মূলে ভৌগোলিক অবস্থান, কর্ণফুলী নদী ও প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বের কাছে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দর। আরবীয়গণ হলেন বণিক পেশার লোক। প্রাচীনকাল থেকে দূরত্বের যোগাযোগে সাগর-মহাসাগর ছিল অন্যতম মাধ্যম। ফলে আরবের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সাহাবা তাবেঈন তবে তাবেঈন বা পরবর্তী যুগে নব-দীক্ষিত মুসলমানরা পালতোলা জাহাজে করে চট্টগ্রাম থেকে হজে গমন করতেন।
দিল্লি সুলতানী আমল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পালতোলা জাহাজে করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী পরিবহনের কথা জানা যায়। ওই সময় বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও-এর সুলতান ছিলেন গিয়াস উদ্দীন আজম শাহ। বিহারের বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হযরত মোজাফফর শাহ্ বলখী (হযরত ইয়াহিয়া মানেরীর অন্যতম খলিফা) সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের নিকট চিঠি লিখেন তাকে যেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হাজীদের প্রথম জাহাজে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ওই সময় বাংলার অপর দুই বিখ্যাত শহর ঢাকা ও কলকাতার অস্তিত্ব ছিল না। ঢাকা প্রতিষ্ঠা লাভ করে মুঘল স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে। অপরদিকে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক কলকাতা নগরী প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে হজযাত্রী ২৬ শতাংশ। দেশের মূল কোটার ৪ ভাগের ১ ভাগ চট্টগ্রাম বিভাগের। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ঐতিহ্যবাহী হজ ক্যাম্পটি ফের চালু হলে এ বিভাগে ১শ’ হজ এজেন্সি ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি না করে চট্টগ্রাম-পাহাড়তলী হজ ক্যাম্পের মাধ্যমে হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা সহজতর হবে।
চট্টগ্রাম হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি, লেখক-গবেষক আহমদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রামে ৯ একর ৩৫ শতাংশের বিশাল এলাকা নিয়ে পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্প এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হলে পাহাড়তলী হাজীক্যাম্পে সম্প্রতি নির্মিত দালান দু’টি ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামে হজ নিয়ে হাজার বছরের গৌরব ও ঐতিহ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম হাজীক্যাম্প আধুনিকায়নে সঠিক ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। তিনি বলেন, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ সময়ের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে ঢাকা হজ অফিসে চাপ কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।