Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পৌনে পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে ৯০ লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি পৌঁছে দিলে উৎপাদন কোটি টনে উন্নীত করা সম্ভব
নাছিম উল আলম : চলতি রবি মওশুমে দেশে প্রায় ৯০লাখ টন গোল উৎপাদনে মাঠে মাঠে ব্যস্ত আছেন কৃষকরা। আবহাওয়া এখনো অনুকূল থাকায় এবার আলুর ভালো ফলন পেতে আশাবাদী সারা দেশের কৃষি যোদ্ধারা।
চলতি মৌসুমে দেশে ৪লাখ ৭৭হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ৯০লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রায় সোয়া ৪লাখ হেক্টরের মত জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু দক্ষিণাঞ্চলে এখনো গোল আলুর আবাদ চলছে। চলতি মাস যুড়েই আলুর আবাদ চলবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফর-ডিএই।
তবে গোল আলু উৎপাদনে এখনো বড় বাধা উন্নত বীজ ও এর আবাদ প্রযুক্তি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে উন্নত জাতের বীজ ও এর আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পারলে দেশে গোল আলুর উৎপাদন আগামী পাঁচ বছরে কোটি টন অতিক্রম সম্ভব বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। এখনো বিএডিসি মোট চাহিদার ১০ভাগ গোল আলু বীজও সরবারহ করতে পারছে না। এর বাইরে ব্রাকসহ কয়েকটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কিছু আলু বীজ সরবারহ করলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ঠ অপ্রতুল। এখনো সিংহভাগ আলু বীজই কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে দেশের অনেক এলাকাতেই উন্নত বীজের অভাবে গোল আলুর উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
উন্নত বীজ এবং পরিমিত জৈব ও রাসয়নিক সার ব্যাবহারসহ সমন্বিত বালাই ব্যাবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে হেক্টর প্রতি ৩০-৪০টন পর্যন্ত গোল আলু উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারির বিজ্ঞানীরা। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে ৩০টি উচ্চ ফলনশীল গোল আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। তারা ইতোমধ্যে ‘বারি আলুÑ১(হিরা), বারি আলুÑ৪(আইলসা), বারি আলুÑ৭(ডায়মন্ড), বারি আলুÑ৮(কার্ডিনাল), বারি আলুÑ১১(চমক), বারি আলুÑ১২(ধীরা), বারি আলুÑ১৩(গ্রানোলা), বারি আলুÑ১৫(বিনেলা), বারি টিপিএসÑ১ ও বারি টিপিএস-২’ নামের একাধীক জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ উদ্ভাবন করেছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের কাছে এখনো কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড আলুই বেশি জনপ্রিয়।
ভাল ফলন পেতে উন্নতমানের বীজ রোপনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি ভালভাবে জমি তৈরির বিষয়টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেছন তারা। এক্ষেত্রে সুষম সার প্রয়োগের বিষয়েও সমগুরুত্ব প্রদানের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি হেক্টর জমিতে ২২০Ñ২৫০কেজি ইউরিয়া, ১২০Ñ১৫০কেজি টিএসপি, ২২০Ñ২৫০কেজি এমপি, ১০০Ñ১২০কেজি জিপসাম ও ৮Ñ১০কেজি জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি  অম্লীয় বেলে মাটির জন্য ৮০Ñ১০কেজি ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও বেলে মাটির জন্য ৮Ñ১০কেজি বোরন সারও প্রয়োগ করতে হবে। উপরন্তু যেকোন ধরনের জমিতেই গোল আলু আবাদে হেক্টর প্রতি ৮Ñ১০টন পর্যন্ত গোবর সার প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিবীদরা।
কিন্তু উন্নত বীজ প্রাপ্তির বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সারের দামও গত কয়েক বছরে বৃদ্ধির ফলে এ ফসলের উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধি করেছে।
তবে মাঠ পর্যায়ে গত কয়েক বছর খুব ভাল দাম পায়নি কৃষকরা। ফলে এবার আবাদে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। তবুও প্রকৃতি এখনো গোল আলুসহ রবি ফসলের জন্য যথেষ্ঠ অনুকুল থাকায় লক্ষ অর্জনের ব্যপারে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদ সহ ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
গত বছরও প্রায় সম পরিমান গোল আলুর আবাদ হয়েছিল দেশে। কিন্তু আবাদ ও উৎপাদন সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকায় মাঠ পর্যায়ে এর দাম পড়ে যায়। ফলে গত বছর পূর্ণ মওশুমে দেশের বেশীরভাগ এলাকার মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা ৫টাকা কেজি দরেও গোল আলু বিক্রী করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কৃষকের হাত বদলের পরেই প্রতি কেজি আলু এক লাফে ৫টাকা বেড়ে যায়। আর বাজারে এখন খুচরা পর্যায়ে গোল আলু ৩০টাকা কেজি ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ