Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে ৮ ডাকাত গ্রেফতার ৪৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার

খোঁড়া পায়ে কালো সুতায় ধরা!

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ডাকাতির পর র‌্যাবের হাতে একটি সিসিটিভি ফুটেজ আসে। তাতে দেখা যায়, ডাকাত দলের সবার মুখে মুখোশ। তাদের একজন হাঁটছেন খোঁড়া পায়ে। আবার সে পায়ে বাঁধা একটি কালো সুতা। এ সূত্র ধরেই এক মাস পর দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সাত সদস্য ও তাদের সহযোগী এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পাকড়াও করলো র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ডাকাত দলের সদস্য মো. মুসা (৩০), সাইদুল ইসলাম সাইফুল (৩০), খোরশেদুল আলম (২৮), সাজ্জাদ হোসেন (২৭), মো. বাপ্পী (২৬), সজল শীল (২৭) ও মো. ইদ্রিস ওরফে কাজল (৩৪) এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিপ্লব চন্দ্র সাহা (৩৯)।

গত ২৮ অক্টেবার রাতে রাউজান উপজেলার সুলতানপুরের বাসিন্দা প্রবাসী সরোয়ার চৌধুরীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মুখোশ পরা ডাকাতদল বাড়িতে থাকা সরোয়ারের বৃদ্ধ বাবাকে বেঁধে বিভিন্ন ধরনের ১২৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, স্বর্ণের বার, নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাউজান থানায় একটি মামলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান, ওই মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, গত ২৭ অক্টোবর দুবাই প্রবাসী সরোয়ার তার মামাতো বোনের বিয়ের জন্য দেশে আসেন। দুবাই থেকে আনা কিছু স্বর্ণালংকার শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে তিনি বাড়িতে নিয়ে যান। পরদিন বাড়িতে তার বাবাকে রেখে অন্য সদস্যরা বিয়েতে যায়। ওই রাতেই ডাকাত দল গ্রিল কেটে বাড়িতে হানা দেয়।

মামলার ছায়াতদন্ত করতে গিয়ে র‌্যাব প্রথমে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে। ডাকাত দলের সদস্যদের মুখে মুখোশ থাকায় কারও চেহারা বোঝার উপায় ছিল না। দেখা যায়, ২৮ তারিখ গভীর রাতে ওই বাসার ফ্রিজ খুলে খাবার খাচ্ছে এক যুবক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরো এক যুবক সেখানে আসে এবং ফ্রিজ থেকে খাবার খায়। সেই যুবকের পায়ে কালো সুতা দেখা যায়। ফুটেজে তাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। সেই যুবককে প্রথমে শনাক্ত করে র‌্যাব। সে হলো ডাকাত সর্দার সাইফুল। রাউজানের গহিরা থেকে অভিযানের শুরুতে গ্রেফতার করা হয় সাইফুলের সহযোগী মুছাকে। এরপর তার দেওয়া তথ্যে সাইফুল ও অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। চোরাই স্বর্ণ কেনার অপরাধে বিপ্লবকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে ৪৬ ভরি স্বর্ণ, নগদ ২৩ লাখ দুই হাজার ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, সাইফুলের প্রস্তাবে এক লাখ টাকার বিনিময়ে সরোয়ারের প্রতিবেশি কাজল ওই বাড়িতে ডাকাতির ছক আঁটে। কাজল ও সাইফুলের ধারণা ছিল, বাড়িতে কেউ থাকবে না। তবে সরোয়ারের বাবাকে দেখে তাকে কম্বল মুড়িয়ে পা বেঁধে গলায় ছুরি ধরে রাখে। তার থেকে চাবি নিয়ে ও কিছু আলমারি কেটে ১২৮ ভরি স্বর্ণ, পাঁচটি মোবাইল ফোন সেটসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে যায়। কাজলের দেওয়া তথ্যে ডাকাতির জন্য ঘরে ঢুকেছিল সাতজন। এদের মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার হয়েছে। এমরান নামে একজন এখনও পলাতক আছে।

র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানান, সরোয়ারের ঘর থেকে লুট করা মালামাল সাইফুল নিজের কাছে রেখে দেয়। মুছাকে নিয়ে সেগুলো বিক্রির জন্য যায় বিপ্লবের কাছে। বিপ্লব ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দরে ২৯ লাখ টাকা দিয়ে কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও বার কিনে। সেই টাকা থেকে সাইফুল প্রতিশ্রুতিমতো কাজলকে এক লাখ টাকা দেয়। মুছা ও সে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে বাকী টাকাগুলো অন্যদের ভাগাভাগি করে দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ