Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপানের মতো শিল্প কারখানা স্থাপন করুন প্রধানমন্ত্রী

ইজেডের ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধা উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় পরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে যুব ও নারীদের এই খাতে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের মান ও মর্যাদা বিশ্বে যেন আরো বৃদ্ধি পায় সে পদক্ষেপ নেয়। যত্রতত্র কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। আবাদি জমি ও তিন ফসলি জমির কোনো ক্ষতি করা যাবে না। শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবো। গতকাল রোববার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধা উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি বলেন, জাপানের একপাশে ইন্ডাস্ট্রি আরেক পাশে পুরো ধানক্ষেত। আমি ধানক্ষেতে নিজে নেমে দেখে এসেছি। আমাদের দেশেও সেভাবে হতে পারে। আমরা সেটাই চাই। শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার যদি শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন। তারা ভালো থাকলে তাদের কাছ থেকে অধিক কাজ পাবেন এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ৫০টি শিল্প ইউনিট ও অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পেরে আজ আমি খুবই আনন্দিত। তিনি আরো বলেন, আমরা সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি বলেই ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। সেজন্য আমাদের ব্যাপক শিল্পায়ন দরকার। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিসহ আমাদের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হয়। সরকার সে কারণেই সারাদেশে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই বেশ কয়েকটি ইপিজেড নির্মাণ করেছে। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ধাক্কা সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশে লাগলেও সরকার সেটি সামলে নিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখায় সচেষ্ট রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-উইউক্রের যুদ্ধ এবং স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনের ফলে আমাদের ক্রয় ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা নেমে এসেছে। আমদানি পণ্যের দাম এবং পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেক দেশ মন্দায় ভুগছে।
দেশের শিল্প মালিকদের শিল্পায়ণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিজের ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা চালাবেন। আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এখন আর হাওয়া ভবন নেই যে আপনাদের কোনো কাজ পেতে হলে সেখানে পাওনা ঘোচাতে অথবা এখানে ওখানে ছোটাছোটি করতে হবে। আমরা দেশকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দিচ্ছি। আপনারা প্রত্যেকেই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, যত বেশি মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন আমরা সরকার তত বেশি আপনাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায় বা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিজমি যেমন আমাদের বাঁচাতে হবে, তেমনি শিল্পোৎপাদনও করতে হবে। সেজন্য যত্রতত্র যেন শিল্প গড়ে না ওঠে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন করে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগের জন্য আসছে। আমরা একেকটা দেশের জন্য একেকটা খণ্ডে জমি দিয়ে দিচ্ছি। তাদের দেশ থেকে যেসব কোম্পানি আসবে, তারা নিজেদের মতো করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তাদের মাধ্যমেও উৎপাদন বাড়বে এবং সেই সঙ্গে আমাদের দেশের যা প্রয়োজন; তাও মিটাবে এবং বিদেশে রফতানিও করবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখান থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন এবং রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে ইতোমধ্যে ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক উৎপাদন করছে এবং ৬১টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প নির্মাণে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

শিল্পায়নের জন্য যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশে গ্যাস খুঁজে বের করার এবং বিদেশ থেকে ক্রয়ের চেষ্টা করছি, যাতে গ্যাস সঙ্কটে না পড়তে হয়। বেসরকারি খাতে শিল্পায়নের জন্য জায়গা দিয়ে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। শিল্পায়ন এক এলাকাভিত্তিক নয়, সারা বাংলাদেশব্যাপী করা হচ্ছে। শিল্পায়ন করতে গিয়ে তিন ফসলের জমি নষ্ট করা যাবে না। যারা জমি দেবে তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ দ্রুত হয়েছে। ঢাকা থেকে আরো অল্প সময়ের মধ্যে যাতে রেলে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায়, সেই জন্য নতুন রেললাইনের চিন্তা করছি। পাশাপাশি মিরেসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এবং ৪ লেনের রাস্তা ৬ লেন করা হবে। কক্সবাজারে আমরা আন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেল করে দিচ্ছি। এপারের মানুষ ওপারে যেতে আর অসুবিধা হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটানা প্রায় ১৪ বছর সরকার পরিচালনায় আছে বলেই উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান হয়েছে এবং এর সুফল জনগণ পাচ্ছে। মাথাপিছু আয় বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।

৫০টি শিল্প সুবিধার মধ্যে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিএসএমএসএন) ৪টি কারখানা এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন ইজেডে ৮টি কারখানা খোলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি প্রমূখ, চট্টগ্রামের বিএসএমএসএন প্রান্তে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ