Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিপিডির সংলাপ : এলডিসি উত্তর প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবিলায় একসাথে কাজ করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

 ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। এলডিসি উত্তরণের পর পণ্য রফতানিতে অনেকগুলো বাজার সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। যার ফলে বাংলাদেশের জন্য প্রতিক‚ল অবস্থা তৈরী হতে পারে। উত্তরণের পর কি কি সুবিধা বাংলাদেশ হারাতে পারে তা নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এই অবস্থা মোকাবেলায় নীতিমালা তৈরীতে রাজনৈতিক, কারিগরি ব্যাক্তি, বিজনেস হোল্ডার সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল রোববার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ডবিøউটিও-এমসি ১২ আউটকামস, নেক্সট স্টেপস ফর বাংলাদেশ অ্যাস অ্যা গ্রাজুয়েটিং এলডিসি শীর্ষক সংলাপের এসব বিষয় তুলে ধরেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডবিøউটিও) এর মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স ১২ (এমসি-১২) এর তাৎপর্য, পরবর্তী পদক্ষেপ এবং করণীয় বিষগুলো কি হবে তুলে ধরেন। তিনি তার উপস্থাপনায় দেখান, ডবিøউটিও প্রাক্কলন অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উত্তরণে করবে এমন ১২টি দেশের সমস্ত রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে শুধুমাত্র বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে। এছাড়া বাজার সুবিধা হারানোর ফলে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রফতানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বৈশ্বিক রফতানির প্রায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, এর আগে এলডিসি থেকে যাদের উত্তরণ হয়েছে বেশিরভাগ ছোট ছোট দেশ ছিলো। তবে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক সামর্্েযর দিক থেকে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ একটি বিরাট বড় ঘটনা বৈশ্বিকভাবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা ডবিøউটিও কর্তৃক প্রদত্ত সকল সুযোগ সুবিধা কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে, বিশেষ করে বাজার সুবিধা নিয়ে রফতানি উন্নয়ন করতে বড় ধরনের সুযোগ তারা নিয়েছে। এখন বাংলাদেশ যেসব বাজার সুবিধাগুলো পায় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সেগুলো অব্যাহত থাকবে কিনা সেটা বড় বিষয় এবং থাকলেও কোন ধরণের নিয়ম নীতিমালা মেনে তা প্রদান করা হবে। সেক্ষেত্রে এমসি-১২ এর ঘোষণায় এলডিসি থেকে উন্নয়ন করা দেশগুলো যে সমস্যার সম্মুখীন হবে তার স্বীকৃতি আছে কিন্তু সেখান থেকে কিভাবে তারা পরিত্রাণ পাবে তার কোনো প্রতিশ্রæতি নেই। ভ‚রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে আগের যেসব দাবি ছিলো সেগুলোও এখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে ডবিøউটিও সংস্কারের বিষয়ে বলছেন আবার কেউ কেউ ব্যাক্তিখাতের ভ‚মিকা জোরদার করার জন্য বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর ভ‚মিকাকে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিদেশের বিভিন্ন মিটিংয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দেশের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন পরক্ষণেই দেশের কারিগরি ব্যাক্তিরা বলেন যে দেশের বিভিন্ন সাহায্য দরকার এবং যেসব পুরোনো সহযোতিগুলোও অব্যাহত রাখা দরকার ইত্যাদি। তখন অন্য দেশের প্রতিনিধিরা বলেন যে, তাহলে আমাদের বক্তব্য কোনটা সঠিক। আমাদের রাজনৈতিক বর্ণনা এবং কারিগরি বর্ণনার ভিতরে অমিল রয়েছে। এগুলোর সমন্বয় করতে হবে। সবার সমন্বয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক ট্রানজিশনের সময় আমাদের রাজনৈতিক ট্রানজিশনও হবে। এ দুটোর সমন্বয় করতে হবে যাতে একটা আরেকটাকে নষ্ট না করে দেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব ধ্বংসাত্মক। একইসাথে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিযোগীতা তীব্র করেছে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্যে। এছাড়া আঞ্চলিক বড় বাণিজ্য সংস্থাগুলোও বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাপক প্রভাব তৈরী করছে। তিনি বলেন, ডবিøউটিও যখন থেকে কাজ শুরু করেছে তখন থেকে সবাই মনে করেন এসব কনফারেন্স থেকে আপনার প্রাপ্য আপনি পাবেন না, আপনি যা পাবেন তাহলো আপনার মধ্যস্থতার মাধ্যমে। এর সবকিছুই আমাদের উপর নির্ভর করে, ডবিøউটিও সদস্যদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরী করার মাধ্যমে আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে হবে। ডবিøটিও কাজ করতে পারছে এমনটি বলাও ঠিক হবে না বলে জানান তিনি।
এছাড়া বক্তারা বলেন, কিছু ভুল ধারণা রয়েছে এলডিসি উত্তরণে পর বাংলাদেশের অর্থনীতি বড়ধরনের সমস্যায় পড়বে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরন ঘটলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, রফতানি ও সামগ্রিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের পোশাক খাতকে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানির পাশাপাশি অন্যান্য বড় দেশে রফতানি বাড়াতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ